ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির বৈঠক আজ
পদোন্নতি নিয়ে তালগোল অবস্থায় ডিএসই
দুই দফায় ৯৫ ও ৭৭ জনকে পদোন্নতি দিয়ে অনিয়মের অভিযোগে তা বাতিল করা হয়
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। রীতিমতো তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই ইস্যুতে সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত এমডিও স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছেন। তিনি যোগ্যদের বাদ দিয়ে পছন্দের আটজনকে দুই স্তরে (ডবল) পদোন্নতি দিয়েছেন। এর আগে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনজনকে সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।
অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো জিএম পদই নেই। আর জ্যেষ্ঠদের ডিঙিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকেও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই দফায় বিভিন্ন স্তরে ৯৫ ও ৭৭ জনকে যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়। গোটা বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে আজ বৈঠকে বসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ডিএসইর একাধিক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের একান্তই নিজস্ব। কিন্তু অনিয়মের কারণে এতদূর গেছে। ডিএসইর পদোন্নতিতে অনিয়মের বিষয়টি আজ আর্থিক খাতের সবার মুখে মুখে। এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য লজ্জাজনক। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মান কোথায় গেছে। দীর্ঘদিন থেকে অযোগ্যদের পদোন্নতি দিয়ে এ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মতে, প্রতিষ্ঠানের সাবেক নীতিনির্ধারকরাও এর দায় এড়াতে পারেন না। অপরদিকে পদোন্নতি না হওয়া কর্মকর্তারা আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হওয়ায় শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে কেউ কেউ পরোক্ষভাবে পদোন্নতি না পাওয়াদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট ডিএসইর ৯৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ডিজিএম থেকে সিনিয়র জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তাও ছিলেন। কিন্তু নিয়ম অনুসারে জিএম এবং এর ওপরে পদোন্নতির জন্য এনআরসি (নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি) অনুমোদন লাগে। কিন্তু সেটি করা হয়নি। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ২৩ আগস্ট যুগান্তরে প্রকাশিত হয়। ওইদিনই পদত্যাগে বাধ্য হন সাবেক এমডি তারিক আমিন ভুঁইয়া। এরপর এই পদোন্নতির আদেশ বাতিল করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পান প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান মজুমদার।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-পদোন্নতির তালিকা পুনর্মূল্যায়নে চরম অব্যবস্থাপনা করেন নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। সেখানে মেধাবী ও যোগ্য কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়। বিপরীতে পছন্দের লোকদের ডাবল প্রমোশন হয়। সব মিলিয়ে আগের ৯৫ জনের তালিকা থেকে ১৮-কে বাদ দিয়ে ৭৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ তালিকাও মঙ্গলবার বাতিল করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে ডিএসইর মানবসম্পদ নীতি (এইচআর পলিসি) সংক্রান্ত সভা ডেকেছে বিএসইসি। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভার বিষয়ে বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কমিশনে ডিএসইর এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভায় নিজ নিজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
এদিকে ডিএসই (বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রেগুলেশন, ২০১৩-এর রেগুলেশন ৬.৬ অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ এমডির সব সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি এমন কোনো হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা নীতিমালাপরিপন্থি বলে বিবেচিত হবে।
এছাড়া রেগুলেশন ৮.৯ অনুযায়ী, পরিচালকরা কোনোভাবেই এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তবে এমডির কোনো সিদ্ধান্ত ভুল বা ডিএসইর জন্য ক্ষতিকর হলে পরিচালনা পর্ষদ বিএসইসিকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ অডিট দল দিয়ে তদন্ত করারও সুযোগ আছে।
পদোন্নতি নিয়ে তালগোল অবস্থায় ডিএসই
ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির বৈঠক আজ
দুই দফায় ৯৫ ও ৭৭ জনকে পদোন্নতি দিয়ে অনিয়মের অভিযোগে তা বাতিল করা হয়
মনির হোসেন
১০ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। রীতিমতো তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই ইস্যুতে সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত এমডিও স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছেন। তিনি যোগ্যদের বাদ দিয়ে পছন্দের আটজনকে দুই স্তরে (ডবল) পদোন্নতি দিয়েছেন। এর আগে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনজনকে সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।
অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো জিএম পদই নেই। আর জ্যেষ্ঠদের ডিঙিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকেও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই দফায় বিভিন্ন স্তরে ৯৫ ও ৭৭ জনকে যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়। গোটা বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে আজ বৈঠকে বসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ডিএসইর একাধিক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের একান্তই নিজস্ব। কিন্তু অনিয়মের কারণে এতদূর গেছে। ডিএসইর পদোন্নতিতে অনিয়মের বিষয়টি আজ আর্থিক খাতের সবার মুখে মুখে। এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য লজ্জাজনক। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মান কোথায় গেছে। দীর্ঘদিন থেকে অযোগ্যদের পদোন্নতি দিয়ে এ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মতে, প্রতিষ্ঠানের সাবেক নীতিনির্ধারকরাও এর দায় এড়াতে পারেন না। অপরদিকে পদোন্নতি না হওয়া কর্মকর্তারা আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হওয়ায় শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে কেউ কেউ পরোক্ষভাবে পদোন্নতি না পাওয়াদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট ডিএসইর ৯৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ডিজিএম থেকে সিনিয়র জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তাও ছিলেন। কিন্তু নিয়ম অনুসারে জিএম এবং এর ওপরে পদোন্নতির জন্য এনআরসি (নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি) অনুমোদন লাগে। কিন্তু সেটি করা হয়নি। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ২৩ আগস্ট যুগান্তরে প্রকাশিত হয়। ওইদিনই পদত্যাগে বাধ্য হন সাবেক এমডি তারিক আমিন ভুঁইয়া। এরপর এই পদোন্নতির আদেশ বাতিল করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পান প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান মজুমদার।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-পদোন্নতির তালিকা পুনর্মূল্যায়নে চরম অব্যবস্থাপনা করেন নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। সেখানে মেধাবী ও যোগ্য কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়। বিপরীতে পছন্দের লোকদের ডাবল প্রমোশন হয়। সব মিলিয়ে আগের ৯৫ জনের তালিকা থেকে ১৮-কে বাদ দিয়ে ৭৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ তালিকাও মঙ্গলবার বাতিল করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে ডিএসইর মানবসম্পদ নীতি (এইচআর পলিসি) সংক্রান্ত সভা ডেকেছে বিএসইসি। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভার বিষয়ে বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কমিশনে ডিএসইর এইচআর নীতি সংক্রান্ত সভায় নিজ নিজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
এদিকে ডিএসই (বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রেগুলেশন, ২০১৩-এর রেগুলেশন ৬.৬ অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ এমডির সব সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি এমন কোনো হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা নীতিমালাপরিপন্থি বলে বিবেচিত হবে।
এছাড়া রেগুলেশন ৮.৯ অনুযায়ী, পরিচালকরা কোনোভাবেই এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তবে এমডির কোনো সিদ্ধান্ত ভুল বা ডিএসইর জন্য ক্ষতিকর হলে পরিচালনা পর্ষদ বিএসইসিকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ অডিট দল দিয়ে তদন্ত করারও সুযোগ আছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2024