ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশ সংলাপ

গণতন্ত্র মৌলিক অধিকার আইনের শাসনে গুরুত্ব

অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তিতে সম্মত উভয়পক্ষ * মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা
 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এসব ইস্যুতে বিশ্বের উন্নত ২৭টি দেশের জোট এবং বাংলাদেশ উভয় পক্ষ কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংলাপ শেষে যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এছাড়া সংলাপে পার্টনারশিপ কো-অপারেশন (অংশীদারত্ব সহযোগিতা) চুক্তির ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে-চুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে আরও দরকষাকষির প্রয়োজন রয়েছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে-বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ৫০ বছরের পুরোনো সম্পর্ক। নতুন করে চুক্তির মাধ্যমে এ বিষয়টিকেই আইনি কাঠামোতে আনা প্রয়োজন। 

সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং ইইউর পক্ষে বৈদেশিক কার্যক্রমের উপমহাসচিব এনরিকে মোরা নেতৃত্ব দেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে সব পক্ষকে উদ্যোগ নিতে সংলাপে আহ্বান জানানো হয়। সংলাপের বিভিন্ন বিষয়ে উভয় পক্ষ সাংবাদিকদের ব্রিফ করে। এনরিকে মোরা বলেন, ইউক্রেনে হামলা করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেছেন।

যৌথ বিবৃতিতে ২০টি বিষয় উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, গণতন্ত্র, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, রাজনীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, অভিবাসন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। সংলাপে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপ করছে ইইউর উচ্চ পর্যায়ের দল। 

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়-গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উভয় পক্ষ একমত ও জোর দেবে। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোর দিয়েছে। এ ছাড়া আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে উভয়পক্ষ। বলা হয়-অবশ্যই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এছাড়া যুদ্ধে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়।

বৈঠক শেষে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি এ পর্যন্ত হওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক সংলাপ। এ সংলাপে বেশ কিছু বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সম্পর্ক কোথায় রয়েছে এবং সেটাকে কতদূর নিতে চাই তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আর এটি করতে হলে একটি অংশীদারত্ব চুক্তি লাগবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংগঠনটির পার্টনারশিপ কো-অপারেশন এগ্রিমেন্টে আমরা সম্মত হয়েছি। তবে দরাকষাকষির একটি বিষয় আছে।

সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, এতে আরও সহযোগিতার দাবি রাখে। সে ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তি হলে কাজটি হবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোর মধ্যে এ ধরনের চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বড় দেশগুলোর সঙ্গে তারা এ ধরনের চুক্তি করে থাকে। 

শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, আমরা নিরাপত্তা ইস্যু এবং সামগ্রিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সাইবার নিরাপত্তাও অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেভাবে খাদ্য সংকটে পড়ছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাণিজ্য সুবিধায় আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, বিশেষ করে ২০২৯ সালের পরেও যাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা থাকে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান তারা তুলে ধরেছেন। এর বাইরে ইন্দো প্যাসেফিক বা এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যোগাযোগ বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। পাশের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ অবদান রেখেছে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের ভূমিকা আরও বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইইউর প্রতিনিধি এনরিকে মোরা বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করলাম। প্রতি বছর আমরা এটাকে উদযাপন করব। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন রয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংলাপে আমরা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া পররাষ্ট্র নীতির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের বৈধ কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া আক্রমণ করেছে। আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে তারা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের নীতিমালা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশাবাদী। দ্বিতীয়ত, আমাদের সম্পর্কেও দ্বিতীয় অধ্যায় উন্মোচিত হলো। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের ভিত্তি মানবাধিকার। তবে চুক্তির মধ্যে নতুনত্ব হলো পুরোনো সম্পর্ককে একটি বৈধ কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিবেশী ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ করে আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন করেছেন। এখানে তিনি জাতিসংঘের আইনের কোনো তোয়াক্কা করেননি। আর জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। তবে বাংলাদেশের পলিসির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। তিনি জানান, ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধু বাংলাদেশ নয়, কোনো দেশের ওপরই চাপ প্রয়োগ করে না। সবাই শান্তিপূর্ণ বিশ্ব দেখতে চায়। ইইউ সব সময় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন