Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

যুগান্তরকে রামেন্দু মজুমদার

মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকলের যুদ্ধ

Icon

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকলের যুদ্ধ

মহান বিজয়ের মাস চলছে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বিজয়। আজ ৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল শুক্রবার। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। রণাঙ্গনে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। ভিন্ন মাত্রা পায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় যৌথ কমান্ডের সম্মুখযুদ্ধ। পশ্চিম পাকিস্তানিদের দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা, স্বার্থপরতা ও একচোখা নীতি থেকে মুক্তি পেতে বাঙালিদের মরণপণ যুদ্ধের প্রক্রিয়া একাত্তরের এদিন থেকেই শুরু হয়।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব শ্রেণিপেশার মানুষ এই যুদ্ধে অংশ নেন। সেই কথাই আবার প্রতিধ্বনিত হলো স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠযোদ্ধা ও অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের কণ্ঠে। ১৯৭১ সালের স্মৃতি হাতড়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিটপিতে আমাদের বন্ধু ছিল রেজা আলী। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়টাতে তার গাড়িতে সে আমাদের ইলিয়টগঞ্জ নামিয়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে নৌকায়, রিকশায়, হেঁটে আমরা সীমান্তবর্তী ‘বসন্তপুর’ গ্রামে যাই। সেখানে আমাদের আশ্রয় দেয় এক কৃষক পরিবার। তারা সেদিন আমাদের যত্ন করে খাইয়েছিলেন। কিন্তু একটি পয়সাও নেননি। কারণ, এ কাজটা তারা বেশ কয়েকদিন ধরেই করে আসছিলেন। তারা মনে করেছেন, এটাই তাদের মুক্তিযুদ্ধ। ওপারে যেসব শরণার্থী বা মুক্তিযোদ্ধা যাচ্ছেন তাদের সহায়তা করা। সেখানে আমরা রাতে থেকে যাই। গভীর রাতে গোলাগুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে গেল। মনে হলো গোলাগুলি খুব কাছেই হচ্ছে। তারা আমাদের জানালেন, মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছুড়ছে, ভয়ের কিছু নেই।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই যুদ্ধ আসলে বাংলাদেশের সব মানুষের ছিল। গুটিকয় স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া সবাই মিলে, সবার সমর্থনের কারণেই নয় মাসের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিলাম আমরা। সুতরাং এই যুদ্ধ ছিল সকলের যুদ্ধ।

রামন্দেু মজুমদার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা। বললেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমি ঢুকতে চেয়েছিলাম খবর পড়ার জন্য। তখন তারা বললেন, আমি নিজের নামে খবর পড়তে পারব কিনা? সেটাতে আমি রাজি হলাম না। কারণ, তখনো নোয়াখালীতে আমার কাকা থাকেন। ঢাকাতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তারা বিপদাপন্ন হতে পারেন। সেই ভেবে আমি সেটাতে রাজি হইনি। পরে আমি কয়েকটি আবৃত্তি অনুষ্ঠান, কথিকা, জীবন্তিকা এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। আরেকটি কাজ আমি করেছি, বাংলাদেশ মিশনে পুরোনো পত্র-পত্রিকা ছিল। সেগুলো থেকে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, বিবৃতির একটা ইংরেজি সংকলন তৈরি করি। যার সময়সীমা ছিল ১৯৭০-এর নির্বাচন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা পর্যন্ত সময়ে বঙ্গবন্ধু যেসব বক্তৃতা এবং বিবৃতি দিয়েছেন তার একটা ধারাবাহিক সংকলন। প্রতিটি বক্তৃতা বা বিবৃতির আগে একটা নোট দিয়েছিলাম। যেন পাঠক বুঝতে পারে এই আন্দোলন বা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি কি ছিল।

বিজয়ের ৫১ বছরে নিজের অনুভূতি প্রকাশে এই বিশিষ্টজন বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সেটি হয়নি। সুতরাং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে আমাদের নির্মূল করতে হবে। এই জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। যেসব আদর্শের জন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এত মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তাদের সেই বিসর্জন যেন ব্যর্থ না হয় সেজন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাগুলোতে ফিরে যেতে হবে। এটাই প্রত্যাশা।

মুক্তিযুদ্ধ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম