রবিবাসরীয় মঞ্চে জাদুকর মেসির স্বপ্নযাত্রা শেষ
পারভেজ আলম চৌধুরী
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দিয়েগো ম্যারাডোনা না থেকেও আছেন। দোহার রাস্তায়, অলিগলিতে ঘুরছেন দূর আকাশের তারা হয়ে যাওয়া ম্যারাডোনা!
আছেন ভক্তদের জার্সিতে। হয়তো হৃদয়েও। দূরে কোথাও থেকে অনুজ মেসির ম্যাজিক দেখছেন! রবিবাসরীয় ফাইনালে উত্তরসূরির স্বপ্নযাত্রার সমাপ্তিও দেখবেন।
প্রিয় শিষ্যের বেলা যে শেষ হয়ে এলো। দোহার লুসাইলে ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপের পর্দা নামবে। সেই সঙ্গে ফুরোবে একটি গল্পও।
লিওনেল মেসি ওইদিন শেষবার বিশ্বকাপের মঞ্চে জাদু দেখাবেন! একটা জোরে হাততালি। গত পরশু রাতে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের পাকা সিদ্ধান্ত আবারও নিশ্চিত করেছেন মেসি।
এখন আর্জেন্টিনা এবং গোটা ফুটবলবিশ্ব ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ এর অপেক্ষায়। যাবার বেলায় অপূর্ণতা ঘুচিয়ে, প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মেসির হাতে যদি ওঠে বিশ্বকাপ ট্রফি, ধন্য হবে ফুটবল। এই বিশ্বকাপ মেসির কাছে আবেগের এক মহাসমুদ্র।
আর্জেন্টিনায় সবাই মাতোয়ারা ৩৫-এর মেসির মাদকতাময় নৈপুণ্যে। পথের ক্লান্তি ভুলে এতদূর এসে স্বপ্নের মহাসড়কে পৌঁছে গেছেন ফুটবল জাদুকর। শেষ দৃশ্য শুধু বাকি। সেখানে মহানায়ক মেসির হাতে জ্বলজ্বল করছে সোনালি ট্রফি, এই স্বপ্নে এখন বিভোর এই গ্রহের অগুনতি আর্জেন্টাইন ভক্ত।
ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে মেসি যা খেলেছেন, সেটিকে অতিমানবীয় বললে অতিশয়োক্তি হবে না নিশ্চয়। দশ বছর আগে তার অটোগ্রাফ চাওয়া তরুণ হুলিয়ান আলভারেজের দ্বিতীয় গোলের ক্যানভাসে তুলির আঁচড় বুলিয়েছেন মেসি। গোটা ক্যানভাসে রঙের পর রং ছড়িয়ে শেষে তুলিটা তুলে দেন আলভারেজের হাতে। অনুজ অনায়াসে শেষ আঁচড়টুকু দিয়েছেন। ড্রিবলিং, ডজ, রক্ষণচেরা নিখুঁত পাস, উপরে উঠে, নিচে নেমে একই ছন্দে খেলা-চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছেন মেসি সাঁঝেরবেলায়।
দিয়েগো ম্যারাডোনা একবার মেসি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ছেলেটা টিভি দেখতে দেখতে এবং চ্যানেল বদলাতে বদলাতে ড্রিবল করতে পারে। কিন্তু মেসি যখন খেলেন, কেউ চ্যানেল বদলাতে চাইবেন না। সবাই তার জাদু দেখতে চান। সেই জাদুই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে গেছে। আর মাত্র একটি জয়। তাহলেই ঘুচবে অপূর্ণতা। দূরে কোথাও থেকে তা দেখে প্রসন্নচিত্তে অগ্রজ অনুজকে বলবেন, ‘বেঁচে থাকো বাছা!’
এই মুহূর্তে উপভোগের মুডে আছেন মেসি। ভালো বোধ করছেন। এই বিশ্বকাপ তাকে আনন্দ দিচ্ছে। সেই আনন্দ পূর্ণতা পাবে রবিবাসরীয় রজনী যদি সাদা-নীলে নীলাকার হয়ে ওঠে।
কাতারও মনে হয় কাতর মেসিকে বরমাল্য পরিয়ে দিতে! দোহাও আর কোনো দোহাই দেবে না হয়তো! যাওয়ার বেলায় একটা ছোট্ট উপহার তার প্রাপ্য। এবার না পারলে যে আর কখনোই নয়। পারবেন, এবার পারবেন! তার বয়স এখন ৩৫। এই বয়সে যেভাবে খেলছেন, যেভাবে খেলে এতদূর এসেছেন, রেকর্ড ২৫টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। চতুর্থবার বিশ্বকাপের এক ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট দুটিই করেছেন। তার অনবদ্য নৈপুণ্যে গত পরশু লুসাইলে মিসাইল হয়ে আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে।
কাতারে নিজেকে অতিক্রম করে গেছেন মেসি। ফুটবলবিশ্ব আরেকবার তার ম্যাজিক দেখতে চায়। তার ২৬তম শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। আর্জেন্টিনার মাথায় মুকুট পরিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলকে বিদায় জানাতে পারলে মেসি হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আর্জেন্টিনার শিরোপাসিক্ত হওয়ার স্বপ্ন সত্যি হলে গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুটও শোভা পেতে পারে মেসির শোকেসে।
বহু বছর পর বার্ধক্যের বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে মেসি যখন কাতর হবেন ৩৫-এ ফিরে যেতে, কাতার কী তখন তার সুখস্মৃতি হবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে রোববার পর্যন্ত।
