Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফুল দেওয়া নিয়ে হামলা সংঘর্ষ

বিভিন্ন স্থানে আহত ৪৫

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফুল দেওয়া নিয়ে হামলা সংঘর্ষ

ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর সময় দেশের কয়েকটি স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৪৫ জন আহত হয়েছেন।

এর মধ্যে কুমিল্লার দেবিদ্বারে আওয়ামী লীগের এক গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর আরেক গ্রুপের হামলায় আহত হয়েছেন ১২ জন। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। মানিকগঞ্জে শ্রমিক লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৬ জন। ঝিনাইদহে বিএনপি ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। সোনাগাজীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলায় আহত হয়েছেন ১০ জন। আর চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছেন ১২ জন। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) : কুমিল্লার দেবিদ্বারে একুশের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারে ফুল দিতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থকরা হামলা চালায় বলে জানা গেছে। এ সময় কয়েকটি ককটেলেরও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে অন্তত ১০-১২ জন আহত হন। আহতদের দেবিদ্বার ও চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সোমবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের সমর্থকরা যেন শহিদ মিনারে ফুল দিতে না আসতে পারেন এজন্য সন্ধ্যা থেকেই পথে পথে অবস্থান নেন সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সমর্থকরা। রাত পৌনে একটার দিকে রোশন আলী মাস্টার জেলা ও উপজেলার নবগঠিত কমিটির একাংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ শহিদ মিনারের দিকে রওয়ানা হয়ে কলেজ রোডে ওঠার পরই প্রতিরোধের মুখে পড়েন। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তারা শহিদ মিনারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পেছন থেকে তাদের ওপর হামলার পাশাপাশি কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান সংসদ সদস্যের সমর্থকরা। একই সময় বিভিন্ন ভবনের ছাদের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এ সময় অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দেবিদ্বার উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি সামসুল হক, উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা সৈয়দ আলী মাস্টার, সমর্থক আলী আশরাফ একং শেখ সাফিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সৈয়দ আলী মাস্টারের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে।

কুমিল্লা (উ.) জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম সফিকুল আলম কামাল বলেন, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শহিদ মিনারে যাওয়ার পথে চান্দিনা রোডের মাথায় এমপি সমর্থক প্রভাষক সাইফুল ইসলাম শামিমের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা হয়। পিটিয়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর মাথা ফাটিয়ে ও পা ভেঙে দিয়েছে তারা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে এমপির সমর্থক প্রভাষক সাইফুল ইসলাম শামিম বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জেলা কমিটি কর্তৃক স্থগিত করা উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে শহিদ মিনারে যাচ্ছিল। এতে বাধা দেওয়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা নিরসনে আমরা এগিয়ে যাই। এ সময় বিক্ষুব্ধ পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের হামলা ও ইটপাটকেলে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চান্দিনা রোডের মাথায়ও বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখি। ইটপাটকেল নিক্ষেপে কয়েকজন আহত হওয়ার সংবাদ পেলেও বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে শ্রমিক লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও সংঘর্ষে জড়ায়। এতে কমপক্ষে ছয়জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন-সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আহসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সানজিদ কাজল ও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা জসিম উদ্দিন।

জানা যায়, অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল ফুল দিতে জেলা শ্রমিক লীগের নেতা আবদুল জলিলের নাম ঘোষণা করলে শ্রমিক লীগের আরেক নেতা বাবুল সরকারের অনুসারীরা প্রতিবাদ জানান। এ নিয়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া।

জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা শ্রমিক লীগ নেতা জলিলের পক্ষে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা বাবুল সরকারের পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়ান। পরে দলের সিনিয়র নেতা এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় আধা ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

সংঘর্ষের কারণে শহিদ মিনারে ফুল দিতে আসা সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এলাকা ত্যাগ করেন।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে শহিদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের অন্তত ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণের অস্থায়ী শহিদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগ ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় এই হামলা চালায় বলে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

আহতরা হলেন-ছাত্র ইউনিয়ন কোতোয়ালি থানার সাধারণ সম্পাদক এসএম নাবিল, পাহাড়তলী থানার সভাপতি ডেনি বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক বর্ষা দেবী, হালিশহরের সহসভাপতি মিজানুর রহমান আরিফ, অর্ণব, অয়ন সেনগুপ্ত, শুভ দেবনাথ, কিংশুক বণিক, মুক্তা পাল, শিরিন আক্তার, সৌম্য মল্লিক। তাদের রক্ষা করে গিয়ে আহত হন চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি ইমরান চৌধুরী।

ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ইমরান চৌধুরী বলেন, শহিদ মিনারে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ফুল দিতে যান। সেখানে বিভিন্ন সংগঠন সারিবদ্ধভাবে এগোচ্ছিল। আমরাও সিরিয়াল অনুযায়ী ফুল দিতে যাচ্ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা সিরিয়াল ভেঙে ঢুকে যায়, শহীদ বেদিতে তারা জুতা নিয়ে ওঠে। এর প্রতিবাদ করায় ছাত্র ইউনিয়নের ওপর কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগ ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে আমাদের ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

এদিকে এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরী।

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শহিদ বেদিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরের সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের শহিদ মিনারে ফুল দিতে যান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কলেজের পেছন গেট দিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বেরিয়ে যান। এ সময় কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরাও পালটা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া। এ ঘটনায় পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শহরে মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের বন্ধু খালেদ সাইফুল্লাহ মিলনের পূর্বাশা পরিবহণ কাউন্টার ভাঙচুর করেন।

সোনাগাজী (ফেনী) : ফেনীর সোনাগাজীতে একুশের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারে যাওয়ার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপির অন্তত ১০ কর্মী আহত হয়েছেন। জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা হেঁটে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যাচ্ছিলেন। তারা সোনাগাজী-ফেনী সড়কের মাহবুব চেয়ারম্যানের বাড়ির দরজায় পৌঁছলে ছাত্রলীগ নেতা শেখ মিরাজ উদ্দিন ও তানভীরের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে মাস্টার আহছান উল্লাহ, সুজন, সাইফুল ইসলাম, রিপন, আবু তৈয়ব, কামরুল ইসলাম, শাকিল, আবুল কাসেম মিয়াজি, রাকিব উদ্দিন আহত হন। তারা সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি শেখ মিরাজ উদ্দিন বলেন, তারা ফুল দিয়ে মিছিল নিয়ে ফেরার সময় আমাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে নিবৃত্ত করে। হামলার ঘটনা সত্য নয়।

কুষ্টিয়া : একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা শহিদ মিনারে হট্টগোল হয়েছে। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আ.ক.ম সরোয়ার জাহান বাদশার সমর্থক এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর সমর্থকরা বিরোধে জড়ায়। প্রথমে ফুল দেওয়ার জন্য বর্তমান সংসদ সদস্যের নাম ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। এ কারণে সাবেক সংসদ সদস্যের সমর্থকরা অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের ওপর চড়াও হয়। এতে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

হিজলা : বরিশালের হিজলায় শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার এবং যুগ্ম সম্পাদক আলতাব মাহমুদ দিপু সিকদারের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।

সারাদেশ ফুল সংঘর্ষ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম