মৈত্রী পাইপলাইন পারস্পরিক সহযোগিতার মাইলফলক
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে -নরেন্দ্র মোদি
বাসস
১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধনকে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমি নিশ্চিত যে এই পাইপলাইনটি বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংযোগের একটি চমৎকার উদাহরণ হয়ে থাকবে। শনিবার বিকালে গণভবন থেকে শেখ হাসিনা এবং ভারত থেকে নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে এই মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন।
ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেওয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত। ভারতের শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ১২৫ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেলের (এইচএসডি) বার্ষিক পরিবহণের ক্ষমতা ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটিপিএ)।
পাইপলাইন উদ্বোধনের পর উভয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশ দুটির মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও তারা জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই, যাতে ভারতের সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক। সেই সঙ্গে আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসাবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনো অসুবিধা না হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হব। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদ্যাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একই সঙ্গে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশের প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে ভারতের যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই পাইপলাইন নির্মাণ করে দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এই ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি তখন এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে। প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইন নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য ভারত সরকার এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ আসামের জনগণের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব ছিল। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে। তিনি বলেন, পার্বতীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে আমরা এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।
দুই দেশের মানুষের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভারতের থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি আর বিদ্যুৎ খাতে উপ-আঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আর এই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সমুদ্রসীমানার পাশাপাশি স্থলসীমানা নিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করতে পারায় ভারতের সব রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
মৈত্রী পাইপলাইন জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াবে-মোদি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াবে। বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রত্যেক ভারতীয় এটি নিয়ে গর্বিত এবং আমরা আনন্দিত যে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অবদান রাখতে পেরেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সূচনা করা হয়। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহের খরচ কমবে এবং সরবরাহের কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমবে। দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, দুই দেশ একসঙ্গে এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্পর্কে মোদি বলেন, দুদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোভিড ভ্যাকসিন এবং অক্সিজেন প্রেরণে সহায়তা করেছে। মোদি আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার দূরদৃষ্টির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই প্রকল্পের বিষয়ে তার সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং দুই দেশের জনগণের স্বার্থে তার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
বর্ণিল সাজে পার্বতীপুর ডিপো, তেল এসেছে ২৩ লাখ লিটার : পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মৈত্রী পাইপলাইনের পার্বতীপুর ডিপো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। রাস্তার দুধারে শহর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ডিজিটাল ফেস্টুন ও ব্যানারে সজ্জিত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা। পার্বতীপুর উপজেলা মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্স প্রদর্শনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ক্রস-পার্টি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ : যুক্তরাজ্যের ক্রস-পার্টির একটি প্রতিনিধিদল শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন পল ব্রিস্টো এমপি, জেন হান্ট এমপি, পলেট হ্যামিল্টন এমপি, এন্টনি হিগিনবোথাম এমপি এবং টম হান্ট এমপি। বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি, উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ক্রস-পার্টির প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন।
প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিশেষ করে ওষুধ ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মৈত্রী পাইপলাইন পারস্পরিক সহযোগিতার মাইলফলক
এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে -নরেন্দ্র মোদি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধনকে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমি নিশ্চিত যে এই পাইপলাইনটি বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংযোগের একটি চমৎকার উদাহরণ হয়ে থাকবে। শনিবার বিকালে গণভবন থেকে শেখ হাসিনা এবং ভারত থেকে নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে এই মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন।
ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেওয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত। ভারতের শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ১২৫ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেলের (এইচএসডি) বার্ষিক পরিবহণের ক্ষমতা ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটিপিএ)।
পাইপলাইন উদ্বোধনের পর উভয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশ দুটির মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও তারা জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই, যাতে ভারতের সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক। সেই সঙ্গে আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসাবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনো অসুবিধা না হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হব। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদ্যাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একই সঙ্গে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশের প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে ভারতের যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই পাইপলাইন নির্মাণ করে দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এই ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি তখন এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে। প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইন নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য ভারত সরকার এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ আসামের জনগণের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব ছিল। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে। তিনি বলেন, পার্বতীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে আমরা এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।
দুই দেশের মানুষের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভারতের থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি আর বিদ্যুৎ খাতে উপ-আঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আর এই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সমুদ্রসীমানার পাশাপাশি স্থলসীমানা নিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করতে পারায় ভারতের সব রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
মৈত্রী পাইপলাইন জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াবে-মোদি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াবে। বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রত্যেক ভারতীয় এটি নিয়ে গর্বিত এবং আমরা আনন্দিত যে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অবদান রাখতে পেরেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সূচনা করা হয়। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহের খরচ কমবে এবং সরবরাহের কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমবে। দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, দুই দেশ একসঙ্গে এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্পর্কে মোদি বলেন, দুদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোভিড ভ্যাকসিন এবং অক্সিজেন প্রেরণে সহায়তা করেছে। মোদি আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার দূরদৃষ্টির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই প্রকল্পের বিষয়ে তার সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং দুই দেশের জনগণের স্বার্থে তার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
বর্ণিল সাজে পার্বতীপুর ডিপো, তেল এসেছে ২৩ লাখ লিটার : পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মৈত্রী পাইপলাইনের পার্বতীপুর ডিপো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। রাস্তার দুধারে শহর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ডিজিটাল ফেস্টুন ও ব্যানারে সজ্জিত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা। পার্বতীপুর উপজেলা মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্স প্রদর্শনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ক্রস-পার্টি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ : যুক্তরাজ্যের ক্রস-পার্টির একটি প্রতিনিধিদল শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন পল ব্রিস্টো এমপি, জেন হান্ট এমপি, পলেট হ্যামিল্টন এমপি, এন্টনি হিগিনবোথাম এমপি এবং টম হান্ট এমপি। বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি, উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ক্রস-পার্টির প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন।
প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিশেষ করে ওষুধ ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।