গ্রেফতারের ৮ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্ত মাহি
গাজীপুর ও বাসন প্রতিনিধি
১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের ৮ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরলে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাত পৌনে ৮টায় তিনি গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এদিকে জামিনে মুক্তির পর এক সংবাদ সম্মেলনে মাহি বলেন, গ্রেফতারের পর থেকে পুলিশ আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। প্রেগন্যান্ট বলার পরেও পানি চাইলে প্রায় এক ঘণ্টা পানি দেওয়া হয়নি। তবে কারাগারে জেলারসহ অন্যরা তার সঙ্গে খুব মানবিক ব্যবহার করেছেন বলে জানান।
চিত্রনায়িকা মাহির বিরুদ্ধে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষোদ্গার ছড়ানোর অভিযোগ এনেছিল পুলিশ। গ্রেফতারের পর দুপুর সোয়া ১টার দিকে তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারক ইকবাল হোসেন তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুপুর পৌনে ২টায় তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা এই চিত্রনায়িকার জামিনের আদেশ দেন একই বিচারক। মাহির আইনজীবী আনোয়ার সাদাত সরকার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার ফেসবুক লাইভে এসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনারের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী হামলায় মদদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেন মাহি। ওইদিনই বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মাহিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি (মাহি) পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন, সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি এতিমখানায় খাবার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি শুনেছি গাজীপুরের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে মাহি কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। এজন্য মামলা হয়েছে। আমি সবকিছু জানি না, শুনেছি। এটা ভালো করে জেনে আমি বলতে পারব। মাহির অভিযোগ তদন্ত করা হবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন একটা অভিযোগ আসে, তখন তদন্ত করতে হয়। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। মাহির বক্তব্য সঠিক কি না কিংবা পুলিশ যেটা করেছে সেটিও সঠিক কি না, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
এদিকে মাহি ও তার স্বামীসহ ২৮ জনকে আসামি করে জমি দখল ও মারামারির অভিযোগে আরও একটি মামলা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। এ মামলায় মাহি ছাড়া অন্য যাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন-স্থানীয় তেলীপাড়ার সাজ্জাদ হোসেন, পালেরপাড়ার আশিকুর রহমান, বাড়িয়ালীর ফাহিম হোসেন ওরফে হৃদয়, ভোগরা বাইপাস এলাকার জমশের আলী, দিঘীরচালার মোস্তাক আহাম্মেদ, সদর থানার শিমুলতলীর জুয়েল রহমান, খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে জুলহাস এবং গাছা থানার শরিফপুরের মাহবুব হাসান ওরফে সাব্বির হোসেন।
মাহির আইনজীবী আনোয়ার সাদাত সরকার জানান, মাহিকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য অদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। মাহির আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া উচিত। পরে রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে আদালত মাহির জামিন মঞ্জুর করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও জমিসংক্রান্ত দুটি মামলায়ই জামিন পেয়েছেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালনে গিয়ে মাহি শুক্রবার ভোরে সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন। এ সময় তিনি স্বামী রাকিব সরকারের ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেন। মাহি বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্বপাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেখানে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। তারা শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাব, দরজা-জানালা, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করছে। শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছে। অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকাপয়সা লুট করেছে। তাদের প্রতিপক্ষ ইসমাইল ওরফে লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে লোকজন নিয়ে ওই শোরুম দখল করে নিচ্ছে। আর এই কাজে সহযোগিতা করেছেন জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
এ সময় মাহির স্বামী রাকিব সরকার পাশেই ছিলেন। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার বিস্তরিত জানাবেন। লাইভের পর হামলাসংক্রান্ত বিষয়ে মাহি ফেসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্টও করেন।
এদিকে শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি তার ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও আমাকে জড়িয়ে ব্যক্তিগত বিষোদ্গার করেছেন, যা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, মাহির স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র আইনের মতো গুরুতর অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় যেভাবে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তা হতে পারে না। এগুলো ফের খতিয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জিএমপি কমিশনার জানান, ১৭ মার্চ ৯৯৯-এ কল পেয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজসংলগ্ন এলাকায় মারামারি হচ্ছে বলে জানতে পারে বাসন থানা পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে চিত্রনায়িকা মাহি লাইভে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন।
আমি প্রেগন্যান্ট, পানি চেয়েও সময়মতো পাইনি-মাহি : জামিনে মুক্তির পর রাত ৮টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তেলিপাড়ায় ফেরেশতা নামক এক রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন মাহি। এতে তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর থেকে পুলিশ আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। প্রেগন্যান্ট বলার পরেও পানি চাইলে প্রায় এক ঘণ্টা পানি দেওয়া হয়নি। তবে কারাগারের ভেতরে জেলারসহ অন্যরা তার সঙ্গে খুব মানবিক ব্যবহার করেছেন বলে জানান। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিয়ে লাইভ করা তার উচিত হয়নি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণেই তিনি এমনটা করেছেন। মাহি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তার সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়েছে, রাকিব সরকার (মাহির স্বামী) দেশে এলে তাকেও নানাভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করা হতে পারে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে এই চিত্রনায়িকা বলেন, আমি শুধু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছি, পুরো পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বলিনি। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাইনি। সংবাদ সম্মেলনে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া দুটি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান মাহি। এ সময় তার আইনজীবী ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
গ্রেফতারের ৮ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্ত মাহি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের ৮ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরলে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাত পৌনে ৮টায় তিনি গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এদিকে জামিনে মুক্তির পর এক সংবাদ সম্মেলনে মাহি বলেন, গ্রেফতারের পর থেকে পুলিশ আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। প্রেগন্যান্ট বলার পরেও পানি চাইলে প্রায় এক ঘণ্টা পানি দেওয়া হয়নি। তবে কারাগারে জেলারসহ অন্যরা তার সঙ্গে খুব মানবিক ব্যবহার করেছেন বলে জানান।
চিত্রনায়িকা মাহির বিরুদ্ধে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষোদ্গার ছড়ানোর অভিযোগ এনেছিল পুলিশ। গ্রেফতারের পর দুপুর সোয়া ১টার দিকে তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারক ইকবাল হোসেন তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুপুর পৌনে ২টায় তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা এই চিত্রনায়িকার জামিনের আদেশ দেন একই বিচারক। মাহির আইনজীবী আনোয়ার সাদাত সরকার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার ফেসবুক লাইভে এসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনারের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী হামলায় মদদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেন মাহি। ওইদিনই বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মাহিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি (মাহি) পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন, সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি এতিমখানায় খাবার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি শুনেছি গাজীপুরের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে মাহি কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। এজন্য মামলা হয়েছে। আমি সবকিছু জানি না, শুনেছি। এটা ভালো করে জেনে আমি বলতে পারব। মাহির অভিযোগ তদন্ত করা হবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন একটা অভিযোগ আসে, তখন তদন্ত করতে হয়। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। মাহির বক্তব্য সঠিক কি না কিংবা পুলিশ যেটা করেছে সেটিও সঠিক কি না, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
এদিকে মাহি ও তার স্বামীসহ ২৮ জনকে আসামি করে জমি দখল ও মারামারির অভিযোগে আরও একটি মামলা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। এ মামলায় মাহি ছাড়া অন্য যাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন-স্থানীয় তেলীপাড়ার সাজ্জাদ হোসেন, পালেরপাড়ার আশিকুর রহমান, বাড়িয়ালীর ফাহিম হোসেন ওরফে হৃদয়, ভোগরা বাইপাস এলাকার জমশের আলী, দিঘীরচালার মোস্তাক আহাম্মেদ, সদর থানার শিমুলতলীর জুয়েল রহমান, খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে জুলহাস এবং গাছা থানার শরিফপুরের মাহবুব হাসান ওরফে সাব্বির হোসেন।
মাহির আইনজীবী আনোয়ার সাদাত সরকার জানান, মাহিকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য অদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। মাহির আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া উচিত। পরে রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে আদালত মাহির জামিন মঞ্জুর করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও জমিসংক্রান্ত দুটি মামলায়ই জামিন পেয়েছেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালনে গিয়ে মাহি শুক্রবার ভোরে সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন। এ সময় তিনি স্বামী রাকিব সরকারের ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেন। মাহি বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্বপাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেখানে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। তারা শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাব, দরজা-জানালা, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করছে। শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছে। অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকাপয়সা লুট করেছে। তাদের প্রতিপক্ষ ইসমাইল ওরফে লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে লোকজন নিয়ে ওই শোরুম দখল করে নিচ্ছে। আর এই কাজে সহযোগিতা করেছেন জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
এ সময় মাহির স্বামী রাকিব সরকার পাশেই ছিলেন। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার বিস্তরিত জানাবেন। লাইভের পর হামলাসংক্রান্ত বিষয়ে মাহি ফেসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্টও করেন।
এদিকে শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি তার ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও আমাকে জড়িয়ে ব্যক্তিগত বিষোদ্গার করেছেন, যা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, মাহির স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র আইনের মতো গুরুতর অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় যেভাবে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তা হতে পারে না। এগুলো ফের খতিয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জিএমপি কমিশনার জানান, ১৭ মার্চ ৯৯৯-এ কল পেয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজসংলগ্ন এলাকায় মারামারি হচ্ছে বলে জানতে পারে বাসন থানা পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে চিত্রনায়িকা মাহি লাইভে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন।
আমি প্রেগন্যান্ট, পানি চেয়েও সময়মতো পাইনি-মাহি : জামিনে মুক্তির পর রাত ৮টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তেলিপাড়ায় ফেরেশতা নামক এক রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন মাহি। এতে তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর থেকে পুলিশ আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। প্রেগন্যান্ট বলার পরেও পানি চাইলে প্রায় এক ঘণ্টা পানি দেওয়া হয়নি। তবে কারাগারের ভেতরে জেলারসহ অন্যরা তার সঙ্গে খুব মানবিক ব্যবহার করেছেন বলে জানান। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিয়ে লাইভ করা তার উচিত হয়নি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণেই তিনি এমনটা করেছেন। মাহি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তার সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়েছে, রাকিব সরকার (মাহির স্বামী) দেশে এলে তাকেও নানাভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করা হতে পারে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে এই চিত্রনায়িকা বলেন, আমি শুধু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছি, পুরো পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বলিনি। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাইনি। সংবাদ সম্মেলনে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া দুটি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান মাহি। এ সময় তার আইনজীবী ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।