প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেনে অব্যাহত যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কেবল নিউজ নেটওয়ার্ক (সিএনএন) টিভিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব মঙ্গলবার সকালে সম্প্রচার করা হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমরা বিশ্বাস করি। যে কোনো বিরোধ সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আমরা কখনোই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা কোনো যুদ্ধকে সমর্থন করি না। এ যুদ্ধ (ইউক্রেনে) বন্ধে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

বিখ্যাত সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্টের নেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা নানা প্রশ্নের জবাব দেন। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে চীনের সৃষ্ট মরণফাঁদ ও রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট-সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়। আমরা এটি অনুসরণ করছি, তাই যখন আমরা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ দেখি, আমরা অবশ্যই এর বিরোধিতা করি। তিনি বলেন, যুদ্ধ এক পক্ষের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে না, উভয় পক্ষের সম্পৃক্ততা থাকে। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভূখণ্ডে (স্বাধীনভাবে) বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষার অধিকার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমর্থন করে-এমন প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়ছে। আমরা চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত সবার কাছাকাছি। যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তারা বিনিয়োগ করছে এবং কিছু নির্মাণকাজ করছে। জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নই।

চীন থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। আমরা বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে বেশির ভাগ ঋণ নিয়ে থাকি। চীন থেকে আমাদের ঋণ খুবই কম। এটা শ্রীলংকা বা অন্য কারও মতো নয়। তিনি বলেন, অকারণে তার সরকার কোনো ঋণ বা কোনো মেগা প্রকল্প নেয় না। কোনো মেগা প্রকল্প বা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করি কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমরা সুবিধাভোগী হব।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন-জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি-তারা যেন মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে চাপ দেয়। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপও শুরু করেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না। তার সরকার ইতোমধ্যে চীন, আসিয়ান দেশ, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যসব দেশের সঙ্গে কথা বলেছে এবং মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মিয়ানমার সরকার কারও কথাই শুনছে না। এটাই বড় সমস্যা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশি (এক কোটি) মানুষের প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গা (১২ লাখ) বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে। কারণ, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। তিনি বলেন, আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।