যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে রমজানেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পহেলা এপ্রিল থেকে সারা দেশে ৭ দিনব্যাপী অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে মতবিনিময় ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে ইফতার মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের সম্মানে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে দলটি।

৭ দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ১ এপ্রিল সব মহানগর ও জেলায় দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি। একই দাবিতে ৮ এপ্রিল সব মহানগরের থানা ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি। ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত ১০ দফার প্রচারপত্র বিতরণ (১০দফা, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি), মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি। ইউনিয়ন পর্যায়ের এ কর্মসূচি সাংগঠনিক বিভাগ অনুযায়ী হবে। ৯ এপ্রিল রংপুর বিভাগে, ১০ এপ্রিল রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে, ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগে, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে এবং ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগে পালন করা হবে এ কর্মসূচি।

এছাড়াও ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা এবং দুস্থ, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তাসহ বিভিন্ন গণসংযোগমূলক কর্মসূচিতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেবেন।

রমজানে কেন এই কর্মসূচি তার ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রমজান মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া কথা নয়। কিন্তু আজকে দেশের যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে আমরা বাধ্য হয়েছি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সর্বোপরি এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন তা এ রমজানেও চলমান রাখতে চাই। সেজন্য আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছি। আশা করব এই কর্মসূচিগুলোতে দেশে আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহণ করবেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে দেশ ও জাতি চরম সংকটে। এখন দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় দিন যাপন করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইফতারে তেজগাঁও রহমতে আলম ইসলামী মিশন এবং শান্তিনগর এতিমখানা ও মাদ্রাসার কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশ নেন। ওলামা-মাশায়েখদের মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, রেসিডেন্সিয়াল কলেজ মসজিদের ইমাম মাওলানা মহিউদ্দীন, ‘স্পেস অব ইসলাম’-এর প্রেসিডেন্ট মাওলানা রেজোয়ানূর রহমান খান অংশ নেন।

ইফতারের পূর্বে প্রতিটি টেবিলে গিয়ে ওলামা-মাশায়েখ এবং এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হক, সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।