Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

চার জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা-সংঘর্ষ

আহত অর্ধশত : আটক ১৫

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চার জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা-সংঘর্ষ

সারা দেশের জেলা ও মহানগরে শনিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এ সময় চার জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি স্থানে লাঠিচার্জ, ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও টিয়ার শেল ছোড়া হয়েছে। নাটোরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা। পরে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। খুলনায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রাজশাহীতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। সিলেটে পুলিশের বাধায় নির্ধারিত স্থানে কর্মসূচি পালন করতে পারেনি মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ব্যুরোর পাঠানো খবর-

নাটোর : দুপুরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা। পরে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, যুবদল নেতা রনি ব্যাপারী গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০ নেতাকর্মী আহত হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আহতদের মধ্যে শরিফ ও রনিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব ও নাটোর শহর যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সায়েম হোসেন উজ্জ্বলসহ ৫ জন আহত হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বিপ্লব ও উজ্জ্বলকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নাটোর উপশহর মাঠে মঞ্চ তৈরির সময় বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা-ভাঙচুর শেষে মঞ্চে অগ্নিসংযোগ করে। শান্তি রক্ষার জন্য তারা উপশহর মাঠ ছেড়ে দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে অবস্থান ধর্মঘট করেন। প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বক্তব্যের সময় সেখানে মিছিল নিয়ে এসে হামলা করে আওয়ামী লীগ। এ সময় জেলা বিএনপির কার্যালয় ও দুলুর বাসভবনে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ প্রমুখ।

তবে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, তাদের শান্তি সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়েছে। এসময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন গুলি করে বলে দাবি করেন তিনি।

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এটিএম মাইনুল ইসলাম বলেন, সমাবেশ চলাকালে দুপক্ষই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুলি ছোড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন।

খুলনা : বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের বাধাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ৮ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, একটি মিছিল থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। বিএনপির দাবি, দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা মহানগর বিএনপির অফিসের ভিতরে ছিলেন। বাইরে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করার পরপরই পুলিশ বিনা কারণে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে থাকে। নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা যুগান্তরকে জানান, ছাত্রদলের ইস্তি, যুবদলের রুবাইয়েদসহ ২০ নেতাকর্মী পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন।

কেএমপি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। যেটা ৭-৮ রাউন্ড হতে পারে। এ সময় ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

রাজশাহী : জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিকালে বিএনপির মিছিল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির। পুলিশ বলছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু দাবি করেন, তারা বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর সন্ধান পাচ্ছেন না। ধারণা করছেন, পুলিশ তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করছে না। এছাড়া পুলিশের হামলায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ রাজশাহীর চারটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপি নেতা মিনু আহতদের নাম ও পরিচয় দিতে পারেননি।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন-পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফর হোসেন, চারঘাট লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মৃধা, চারঘাট শলুয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শিক্ষক এমদাদুল হক, যুবদল সদস্য বাঘা উপজেলার হরিরামপুর এলাকার স্বপন, যুবদল সদস্য উপজেলার রামরামা গ্রামের মনির মণ্ডল, গোদাগাড়ী উপজেলার ছাত্রদল সদস্য আমিনুল ইসলাম।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির জন্য ভুবন মোহন পার্কে অনুমতি ছিল। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা বাটার মোড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিলেন। এ কারণে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিলেট : পুলিশের বাধায় নির্ধারিত স্থানে কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। সকাল থেকে শহিদ মিনার ও চণ্ডিপুল এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। দুপুরে এই দুই স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে মঞ্চ বাঁধতে শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মহানগর বিএনপি সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সামনে এবং সিলেট জেলা বিএনপি দক্ষিণ সুরমার শুভেচ্ছা কমিউনিটি সেন্টারে কর্মসূচি পালন করে। বেলা আড়াইটায় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সামনে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরীর পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

এদিকে বিএনপির নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিনের সভাপতিত্বে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম