Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি

আগাম নির্বাচনের কৌশল সফল হতে দেবে না জনগণ: মির্জা ফখরুল

রাস্তায় নেমেছি, রাস্তায় থাকব, এবার কোনো ফাঁদে কেউ পা দেবে না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আগাম নির্বাচনের কৌশল সফল হতে দেবে না জনগণ: মির্জা ফখরুল

সরকার আগাম নির্বাচনের ভিন্ন কৌশল নিচ্ছে দাবি করে জনগণ তা সফল হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই সরকার এত সহজে যাবে না। নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে আগাম নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অর্থাৎ তারা এখন ভিন্ন কৌশল নিতে চায়। আগাম নির্বাচন করে জাতিকে বোকা বানিয়ে আগের মতো নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করার ষড়যন্ত্র করছে। তবে এবার আর জনগণ কোনো কৌশলকেই সফল হতে দেবে না। কোনো ফাঁদে পা দেবে না। এবার জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে সব চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেবে।’
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এক অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে’ দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করে। রমজান মাস হলেও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজারো নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। আগামী ৮ এপ্রিল সব মহানগরের থানা ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি, যা আগেই ঘোষণা করা হয়। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সরকার গণতন্ত্র মানে না। মানুষের মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেয় না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। তারা ভোট ছাড়াই জোর করে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনগণের টাকায় যাদের জীবন চলে তারা আজকে এই সরকারকে সহযোগিতা করছে। এ দেশের প্রশাসন, পুলিশ এই অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের মানুষ কখনোই অন্যায়কে মেনে নেয়নি, আগামীতেও নেবে না।’ 
১০ দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। অবশ্যই রাস্তায় থাকব। জনগণ যেভাবে জেগে উঠেছে নিশ্চিত এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা পরাজিত হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আসুন সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, গণতন্ত্রকে ভালোবাসি তারা আজকে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করি। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, আজকে এক এক করে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। পত্রিকাটির আরেক প্রতিবেদকের বিরুদ্ধেও মামলা করে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই এখনো সতর্ক হন, সজাগ হন। যারা আজকে ক্ষমতাকে বেআইনিভাবে জোর করে ধরে রাখার জন্য ভিন্নমত ধারণকারী মানুষকে হত্যা-গুম-নির্যাতন করছে, কারাগারে নিচ্ছে তাদের হাত থেকে আপনারাও মাফ পাবেন না। কারণ একদিন না একদিন আপনাদেরকেও ধরবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছে। না খেয়ে থাকছেন। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক তাদেরকে দিয়ে মিথ্যা তথ্য তৈরি করে জনগণের সামনে এবং বিশ্বের সামনে দেখাতে চায়, তাদের উন্নয়ন এমনভাবে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা নাকি গত তিন বছরে কমে গেছে আরও ২৬ ভাগ। কী মিথ্যা তথ্য। এটা শুধু আমার কথা নয়, এ দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এগুলো সঠিক তথ্য নয়, এগুলো সব সাজানো তথ্য। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকার দেশের যে বর্তমান সংকট তা থেকে আর উত্তরণ করতে পারবে না। তাই অনতিবিলম্বে সরকারকে বিদায় করাই হচ্ছে এ দেশের জনগণের একমাত্র আওয়াজ। তাই বিএনপিকে এ দেশের জনগণকে নিয়ে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশের ক্ষমতার পরিবর্তন আনতে হবে। সেজন্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন। আমরা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় করে নির্বাচন করব।’ 
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘অবিলম্বে তত্ত্ববধায়ক সরকারের ঘোষণা না দিলে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। কেয়ারটেকারের নামে আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপিও তাই করবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ। 
রমজান মাসেও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ : এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, তিনি বলেছেন, রমজান মাসে কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না। অথচ তারাই আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কাউন্টার কর্মসূচি দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের জন্য সব হালাল, আমরা করলে হারাম। পবিত্র রমজান মাসেও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। 
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবেনা-ড. মঈন খান : কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের পাতানো একটি কমিশন। আওয়ামী লীগের নির্দেশ ছাড়া আর কোনো কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই। শনিবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী সদস্য আলহাজ নাজিম উদ্দিন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসমত উল্লাহ নবী প্রমুখ।
 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম