শামসুজ্জামান ফের কেরানীগঞ্জ কারাগারে
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আবার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে।
শনিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে পুলিশের নিরাপত্তায় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। যুগান্তর প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম।
যুগান্তরের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, শামসুজ্জামানকে স্থানান্তরের বিষয়টি শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে জানান কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।
এর আগে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে তাকে কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়। রাতে তিনি সেখানে সাধারণ সেলে বন্দি হিসাবে ছিলেন।
এদিকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগান্তরের বিশেষ প্রতিবেদক মাহবুব আলম লাবলুর বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ, আটক সব গণমাধ্যমকর্মীর মুক্তি ও এই আইন বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শনিবারও বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঢাবি সাদা দলের নিন্দা ও প্রতিবাদ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, বর্তমান সরকার ভোটাধিকারসহ মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে দেশে এক রকমের ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের ভিন্নমত দলনের অপচেষ্টা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হামলা-মামলাসহ নানা রকম নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে রুদ্ধ করা হচ্ছে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা। সরকারের দুর্নীতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা তুলে ধরে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ বা ক্ষুধার কথাও জনগণ প্রকাশ্যে বলতে পারছে না।
বিএফইউজে-ডিইউজে’র উদ্বেগ : সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেফতার, এই আইনের অপপ্রয়োগ, প্রথম আলোর দায়িত্বহীন ও অপেশাদারি সাংবাদিকতার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
শনিবার সংগঠন দুটির পক্ষে যৌথ বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ এবং ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএফইউজে ও ডিইউজে মনে করে, প্রথম আলো অনলাইন মাধ্যমে ২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসে একজন শিশুর ছবির সঙ্গে ভিন্ন একজনের বক্তব্য সংযোজন করে যে ফটো কার্ড প্রচার করে, সেটি সেই সংবাদপত্রের সম্পাদক ও বার্তা কক্ষের পেশাদারি ব্যর্থতার বড় দৃষ্টান্ত। শিশুর ছবির সঙ্গে ভিন্ন পরিচয়ের ব্যক্তির উদ্ধৃতিটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি ও ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
অন্যদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে আমরা মনে করি সেটিও এড়ানো যেত। আমরা আবারও বলি-সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমের বেলায় এই আইন প্রয়োগের আগে উত্থাপিত অভিযোগটির ‘প্রাইমা ফেসি’ ঠিক করার জন্য তা প্রেস কাউন্সিলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। আইনের কতিপয় ধারা সম্পর্কে আমাদের আগের সুপারিশ আমলে নিয়ে তা সংশোধন করা হোক। এসব ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আইনটির অপপ্রয়োগ বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এই মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি-ডিএসইসি : ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) সভাপতি মামুন ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয় শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আইনমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন স্তর থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে গ্রেফতার না করে অভিযোগ যাচাই করার জন্য নির্ধারিত সেলে পাঠানো হবে। অথচ এই ক্ষেত্রে তার বরখেলাপই শুধু করা হলো না, বরং যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার আরেকটি উদাহরণ তৈরি হলো।’ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘এই আইনে যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মাহবুব আলম লাবুলর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। এটি সরকারের ভাবমূর্তিকেই শুধু ক্ষুণ্ন করছে না, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করছে।
অবিলম্বে প্রথম আলোর সাংবাদিককে মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ থেকে শুরু করে ওইদিন কী ঘটেছিল তার সুষ্ঠু তদন্ত করে জনগণকে জানানোর দাবি জানিয়েছে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি)।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা শনিবার দুপুরে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন-জাবির ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কল্লোল ভৌমিক, ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গোলাম মুর্তজা ধ্রুব প্রমুখ।
ধামরাইয়ে মানববন্ধনে কাঁদলেন শামসুজ্জামানের মা : শনিবার ঢাকার ধামরাইয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন গ্রেফতারকৃত প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের মা করিমন নেছা। এ সময় তার বুকফাটা আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ‘ডিজিটাল আইন বাতিল করে আমার ছেলেকে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। আমার কলিজার টুকরো শামসকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন।’ এভাবে আহাজারি করতে করতে একপর্যায়ে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। বেলা ১১টায় ঢাকা-আরিচা সহাসড়কের ধামরাইয়ের ডাউটিয়া চেয়ারম্যান আড়তের সামনে এলাকাবাসী, ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাব ও ধামরাই রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্যদের অংশগ্রহণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মৌলভীবাজার : শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের চৌমুহনীতে গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) জওহর লাল দত্তের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মঈনুর রহমান মগনু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ নন্দী, ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার জেলা সংসদের সভাপতি তপন দেবনাথ প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিতি ছিলেন-সিপিবির জেলা সদস্য অ্যাডভোকেট আবু রেজা সিদ্দিকী ইমন ও বাসদ জেলা সদস্য রেহনোমা রুবাইয়াৎসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
নীলফামারী : জেলা শহরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সচেতন নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে ওই মানবন্ধন ও সমাবেশ হয়। মানববন্ধন শেষে নীলফামারী বন্ধুসভার সভাপতি নিপুণ রায়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন-জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ সরকার, সাংবাদিক তাহমিন হক ববী, হাসান রাব্বি প্রধান, আতিয়ার রহমান, মিল্লাদুর রহমান, মীর মাহমুদুল হাসান, আরিফ হোসেন, আব্দুর রশীদ শাহ, সাদিকউর রহমান শাহ, সমাজকর্মী ওমর ফারুক, বিকাশ রায়, রুবি আক্তার, গোকুল রায় প্রমুখ।
মানববন্ধনে সাংবাদিক, এনজিওকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বাউফল (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর বাউফলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। শনিবার বাউফল প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই কর্মসূচি চলে। এ সময় বক্তব্য রাখেন-বাউফল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান বাচ্চু, জিতেন্দ্র নাথ রায়, দেলোয়ার হোসেন, আসাদুজ্জামান সোহাগ, এমএ বাশার, আরেফিন সহিদ, অহিদুজ্জামান ডিউক, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক স্যামুয়েল আহম্মেদ লেনিন প্রমুখ।
