Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গ্রামীণ টেলিকম দুর্নীতি

ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মঙ্গলবার মামলাটি করা হয়। এর বাদী হয়েছেন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক রেজানুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত সচিব) ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

ব্রিফিংয়ে দুদক মহাপরিচালক বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত অভিযোগ দুদকের কাছে আসে। সংস্থার আইন ও বিধি মোতাবেক ওই অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের সত্যতা পাওয়া যায়।

এরপরই ড. ইউনূসসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুসন্ধানকালে অভিযোগসংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তদন্ত পর্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।

জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম এবং পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আসামির তালিকায় আরও আছেন অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে ১০৮তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। ওই বছরের ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও একদিন আগে অর্থাৎ ৮ মে হিসাব খোলা হয়।

সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট ও ১০৮তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ২০২২ সালের ১০ মে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে ২২ জুন অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই অসৎ উদ্দেশ্যে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামানের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।

একইভাবে সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের হিসাবে ৩ কোটি এবং সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি, সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি এবং আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখার যৌথ হিসাবে ৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এই টাকা তাদের প্রাপ্য ছিল না।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, অনুসন্ধানে পাওয়া রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, আইনজীবী ফি হিসাবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আত্মসাৎ করেছেন। এক্ষেত্রে অসৎ উদ্দেশ্যে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, যা দণ্ডবিধি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

যে কারণে আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

জানা যায়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠান। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই ২০২২ সালের ২৮ জুলাই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

শ্রমিকদের লভ্যাংশ দেওয়ার রায়ে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা : ড. ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কল্যাণ থেকে চাকরিচ্যুত ১০৬ শ্রমিককে শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশ দিতে শ্রম অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের রায় কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শ্রম অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ ও ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী শরীফ।

পরে অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী শরীফ বলেন, চাকরিচ্যুত ওই ১০৬ শ্রমিককে শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশ পরিশোধ করতে ৩ এপ্রিল রায় দেন শ্রম অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল। এ রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ড. ইউনূস।

শ্রমিকদের পক্ষের আইনজীবীরা জানান, ওই চাকরিচ্যুতরা ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ কল্যাণে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬-২০১৩ অর্থবছরে কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়। শ্রম আইনে বলা আছে, শ্রম আইন কার্যকর হওয়ার দিন থেকে কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণ ও অংশগ্রহণ তহবিল দিতে হবে। এ লভ্যাংশ না পাওয়ার কারণে প্রথমে তারা গ্রামীণ কল্যাণকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। কিন্তু লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার পরও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা মামলা করেন।

দুদক ইউনুস মামলা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম