লোডশেডিং আরও কিছুদিন থাকবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জ্বালানি সংকটের কারণে কাল থেকে সাময়িক সময়ের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা। ফলে দেশে চলমান লোডশেডিং আরও কিছু দিন থাকবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সাভারের বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে শনিবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এলসি খুলতে দেরি হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কয়লা আমদানি করতে আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে লোডশেডিং বেড়েছে। প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে।
তিনি আরও বলেন, তেলের ব্যাপারেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে ডাইভার্ট করছি বেশির ভাগ গ্যাস। এছাড়া গরম বেড়ে ৩৮ ডিগ্রির ওপরে চলে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় ৪০-৪১ ডিগ্রি। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে। এদিকে পটুয়াখালী ও রাঙ্গাবালীর প্রতিবেদক জানান, ডলার সংকটের কারণে কয়লার দাম দিতে না পারায় প্রায় এক মাস কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এবারই প্রথম কেন্দ্রটি উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কয়লা সংকটে ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ২৫ মে বন্ধ করা হয়েছে। বাকি ইউনিটটিও কাল বন্ধ হবে বলে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ্ আব্দুল হাসিব যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন।
কয়লা সংকট সমাধান হবে কবে, এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ্ আব্দুল হাসিব বলেন, ২৫ জুন ৪০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আমাদের প্রথম জাহাজ আসবে। এর মাধ্যমেই কয়লা আসা শুরু করবে। প্রথম আসা জাহাজটি আনলোড হতে ৩-৪ দিন লাগবে। এরপরই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
সাময়িকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হলে কোন কোন এলাকায় এর প্রভাব পড়তে পারে-এমন প্রশ্নে শাহ্ আব্দুল হাসিব বলেন, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কাজেই এর প্রভাব ঢাকা, বরিশাল, খুলনা সব জায়গায় থাকবে। এ কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, এ কেন্দ্র দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ হওয়ায় এতদিন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো হলে দুটি ইউনিটে প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়।
জানা গেছে, ২০২০ সালে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি) ও বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই কেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় চীনা অংশীদার সিএমসি। প্রতি ৬ মাস পরপর সেই টাকা আদায় করে তারা। কিন্তু কয়লা বাবদ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) বকেয়া হয়েছে। গত বছর নভেম্বরে তারা যে টাকা দিয়েছে তা শোধ করার কথা ছিল এ এপ্রিলে। ডলার সংকটের কারণে সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেনি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। তাই বকেয়া বিল পরিশোধ না করা হলে সিএমসি কয়লা কেনার জন্য টাকা দেবে না। ফলে কয়লাও কেনা সম্ভব হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে শনিবারও রাজধানীসহ সারা দেশে তীব্র লোডশেডিং হয়েছে। সরকারিভাবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ১৭শ মেগাওয়াটের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর পরিমাণ ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে বলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে। তারা বলেছে, এখন আগের পরিমাণের অর্ধেকও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, গত দুদিন সরকারি ছুটির কারণে চাহিদা একটু কম ছিল। আজ সরকারি অফিস আদালত খোলার পর বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। ফলে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও আরও তীব্র হবে।
এদিকে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি বন্ধ হলে পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের একজন ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পায়রার বিকল্প হিসাবে নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ সময় ইউনাইটেড পাওয়ারের ১০০ মেগাওয়াট ও বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারের ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছোটখাটো আরও ৪-৫টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে। বর্তমানে এসব কেন্দ্র বন্ধ আছে।
