নানামুখী ষড়যন্ত্রে আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জের হবে: শেখ হাসিনা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জের হবে। এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনটা একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ, নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়। যারা বাংলাদেশের বদনাম করে, তাদের কুলাঙ্গার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবন যখন একটু উন্নত হয়, তখনই বাংলাদেশেরই কিছু কুলাঙ্গার দেশের বিরুদ্ধে সব জায়গায় বদনাম করে বেড়ায়। মিথ্যা বলে বেড়ায়। আর কিছু আছে বিদেশি অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়।
সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। এ সংগঠন যেন আরও মজবুত থাকে, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দিনের পর দিন কারাবরণ, অত্যাচার, নির্যাতন, তারপর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ মুক্তিযুদ্ধ করে যুদ্ধাহত হয়ে বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা, স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলা, জয় বাংলা মুছে ফেলা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলাসহ অনেক অপকর্মই করা হয়েছে। আসলে সত্য একসময় না একসময় উদ্ভাসিত হবেই। সত্য কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আজ সেটাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করেনি, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন করেছে; তারা আছে, তাদের আওলাদ আছে, তারা সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেই যাচ্ছে। যারা স্বাধীনতার সময় আমাদের সমর্থন করেনি; তাদের কাছেই সব আত্মীয়তা। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্য।
বিগত বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহর রহমতে এইটুকু করতে পেরেছি, এই ১৪ বছরে, ২০০৮-এ সরকারে আসার পর, একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই আজ বাংলাদেশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে পেরেছি। আজ সেই ভিক্ষুকের জাতি বলে কেউ আর অবহেলা করতে পারবে না। এই জায়গাটা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণ ঘটিয়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের তৈরি হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। এটাকে আমাদের স্থায়ী করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বাইরে গেলে সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে আমাকে বলে আপনার ম্যাজিকটা কী? আমি বলি, ম্যাজিক কিছু নেই ওখানে। আমার শক্তিশালী সংগঠন আছে। আর আমাদের সংগঠনের শক্তিশালী নীতিমালা আছে। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে, একটা পরিকল্পনা আছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে, জনগণকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করি বলেই আমরা সাফল্য আনতে পেরেছি।
আ.লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে : এদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতারা। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের করে এনেছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার ঘটনায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জোরপূর্বক গুম, হত্যা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর পিতৃহত্যার বিচার চাওয়ার ও বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। অথচ এটি ছিল মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আজ আমরা ন্যায়বিচার না পাওয়ার পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে। সরকার জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। আমাদের সরকার বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করেছে, যাতে মানুষ ভোগান্তির সম্মুখীন না হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিচার পেতে পারে।
চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যুতের কারণে জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশে সাড়ে ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার কারণে বাংলাদেশে চমকপ্রদ উন্নয়ন হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নিবেদিতপ্রাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশরক্ষায় গাছ লাগানোর আহ্বান : বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার গণভবনে পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমি গাছ লাগিয়েছি। আমি আশা করি, বাংলাদেশের সবাই এটি অনুসরণ করবেন। বাংলাদেশ যাতে আরও সুন্দর, সবুজ ও উন্নত হয়, সেজন্য সরকার ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, আমি চাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যেন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তাই সবাইকে গাছ লাগাতে বলছি। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতিটি স্থানে গাছ লাগাতে এবং প্রতিটি এলাকাকে উৎপাদনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের জনগণকে সংকট থেকে রক্ষা করতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গাছ লাগানোর আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
