আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ

ফিল্মি স্টাইলে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের ওপর হামলা

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
মামুন
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেস এলাকা। ফাইল ছবি

ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রাইভেটকার থামিয়ে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী তারেক সাঈদ মামুনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। মামুনকেও কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী এক আইনজীবীসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হন। সোমবার রাতের এ ঘটনায় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে দায়ী করছেন মামুন। এর আগে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে মামুনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ইমন। তদন্তসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মামুনের ওপর এ হামলা চালানো হতে পারে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেস এলাকার ব্যস্ততম সড়কে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করে একটি প্রাইভেটকারকে ঘিরে ধরে হামলা চালায় চারটি মোটরসাইকেলে আসা ৭-৮ দুর্বৃত্ত। প্রাইভেটকার থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করেন তিনজন। তাদের একজনকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপাতে থাকে হামলাকারীরা। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি ছোড়া হয়। শেওড়া থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে আরামবাগের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল (৫২)। একটি গুলি তার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল চালকের ওপর তিনি হেলে পড়েন। পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পথচারী আরিফও গুলিবিদ্ধ হন। তাকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১০টার পর সহযোগীরা শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সঙ্গে ছিলেন শিল্পাঞ্চল থানার এএসআই রেজাউল।

মঙ্গলবার মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, মামুন জানিয়েছে-শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। ইমনের লোকজনই হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর মামুন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়নি। তবে আহতদের স্বজনরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিজুল হক জানান, এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিবি জানায়, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় প্রায় ২০ বছর কারাভোগের পর মামুন সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছেন। সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি ইমনও। কাশিমপুর কারাগারে তিনি বন্দি রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও মামুন এক সময়ে জুটি ছিলেন। তারা ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার আতঙ্ক ছিলেন। তাদের বাহিনীর নাম ছিল ইমন-মামুন বাহিনী।

কারাগারে থাকলেও ইমনের নামে এলাকায় বিভিন্ন খাত থেকে চাঁদা উঠানো হয়। চাঁদার টাকা ইমনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ইমনের সঙ্গে মামুনের বিরোধ হয়। সম্প্রতি মামুন জামিনে বেরিয়ে তৎপরতা শুরু করেন। এতে ইমন আশঙ্কা করেন তার অপরাধ সাম্রাজ্য হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে মামুনের সঙ্গে দেখা হলে ইমন তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার রাতে মগবাজারের পিয়াসী বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে আড্ডা দেন মামুন ও তার সহযোগী খোকন, মিঠুসহ কয়েকজন। রাত সাড়ে ৯টার কিছু আগে তারা সেখান থেকে বের হন। খোকন ও মিঠুকে সঙ্গে নিয়ে মামুন প্রাইভেটকারে ধানমন্ডির শুক্রবাদ তল্লাবাগের নিজের বাসায় ফিরছিলেন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সিটি পেট্রোলপাম্প ও বিজি প্রেসের মাঝামাঝি এলাকায় পৌঁছতেই হামলার শিকার হয়। এ সময় মামুন পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। একপর্র্যায়ে হামলাকারীরাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ৩ মাস আগে মামুন জামিনে বের হন। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-হিমেল হত্যা মামলা, রহিম হত্যা মামলা, আদালত চত্বরে মোর্শেদ হত্যা মামলা। মোর্শেদ হত্যা মামলায় মামুনের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শমসেরাবাদ গ্রামের এসএম ইকবালের ছেলে মামুন।

আহত ভুবন চন্দ্র শীলের ভাবি জয়শ্রী রানী সাংবাদিকদের জানান, তাদের বাড়ি নোয়াখালীর সদর উপজেলায়। বর্তমানে মতিঝিলের আরামবাগে একটি মেসে থাকেন ভুবন। তার পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকে। রাতে পুলিশের মাধ্যমে তারা খবর পান, ভুবন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে ভুবনকে তারা মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। তখন তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

ভুবনকে উদ্ধারকারী মোটরসাইকেল চালক শামীম বলেন, রাতে শেওড়া থেকে ভুবনকে নিয়ে ভাড়ায় আরামবাগ ক্লাবের দিকে যাচ্ছিলাম। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল বিজি প্রেসের বিপরীত দিকের সড়কে হঠাৎ দুটি বিকট শব্দ হয়। এরপর দেখি আমার মোটরসাইকেলে থাকা ভুবন হেলে পড়েছেন। মাথা ধরে সোজা করে দেখি রক্ত ঝরছে। সেখান থেকে তাকে অন্য একটি গাড়িতে দ্রুত শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর সেখান থেকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাহিদুল ইসলাম সহায়তায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন