Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বরিশাল বিভাগীয় রোডমার্চে বিএনপি নেতারা

বিজয় নিশ্চিত, সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার

গৌরনদীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, আহত ১১

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয় নিশ্চিত, সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার

সরকার পতনের একদফা দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে শনিবার সকালে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকে রোডমার্চ শুরু করে দলটি।

ঝালকাঠি হয়ে দীর্ঘ ৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পিরোজপুরে গিয়ে শেষ হয়। এই কর্মসূচি চলাকালে গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলায় বিএনপির ১১ নেতাকর্মী আহত হন। এদিন চারটি সমাবেশ হয়। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কিছু দিনের মধ্যে সরকারের পতন হবে। বিজয় আমাদের নিশ্চিত।

সমাবেশে স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, জনগণকে একত্রিত করে বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে দেব দেশের জনগণ তাকে আর চায় না। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। গণআন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে পদত্যাগ করানোর জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো সময় নেই। এই ভোট চোর সরকারকে পদত্যাগ করাতেই হবে।

সকাল ১০টায় নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ শুরু হয়। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিপুলসংখ্যক বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে নেতাকর্মীরা পিরোজপুর অভিমুখে রওয়ানা দেন। এতে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক জেলা-বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং মহানগর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর থেকে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় উচ্ছ্বাস। পৌনে ১২টার দিকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলে তা উপেক্ষা করেই চলে রোডমার্চ। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে যায়। বরিশাল নগরীতে একটি, ঝালকাঠিতে দুটি ও পিরোজপুরে একটি সমাবেশ হয়। এদিকে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় রোডমার্চের কারণে সকাল ১০টা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল ঢাকা-কুয়াকাটা রুটে যান চলাচল। এতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয় দক্ষিণাঞ্চলে। কেননা এ মহাসড়ক ধরেই বরিশালসহ পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠিতে যাতায়াত করতে হয়। যে কারণে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ১১ বছর পর কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ করে বিএনপি। বরিশালের এ রোডমার্চ ঘোষিত টানা কর্মসূচির মধ্যে দ্বিতীয়। এছাড়াও ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে, পহেলা অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ, ৩ অক্টোবর ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগে এবং সবশেষ ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ করবে দলটি।

বরিশাল বু্যুরো জানায়, নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে উদ্বোধনী সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এ রোডমাচর্কে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসাবে দেখা হচ্ছে। মনে রাখবেন কোনো আন্দোলন বৃথা যায় না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি, মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। একটি ডিমের দাম ১৬ টাকা। নিু আয়ের মানুষ হালাল পথে ইনকাম করে জীবন নির্বাহ করতে পারেন না। বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার ও হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর-উত্তম, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, আবুল হোসেন খান, নাজিমউদ্দিন আলম, দুলাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম জামাল, এবাদুল হক চান, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ। ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, দুপুরে ঝালকাঠিতে রোডমার্চ পৌঁছলে হাজারো নেতাকর্মী স্বাগত জানান। পরে এ জেলায় দুটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণ নির্বিঘ্নে ভোট দেবে। যে দলকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে তারা দেশ পরিচালনা করবে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। আগামী দিনে সেই লড়াইয়ে সাধারণ জনগণসহ সবাইকে পাশে থাকতে হবে। এটা কারও স্বার্থরক্ষার আন্দোলন নয়, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর আন্দোলন।

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সৈয়দ হোসেনের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও আরও বক্তব্য দেন-সাবেক সংসদ-সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠির পর বিকালে পিরোজপুরে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় রোডমার্চ। এতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আমরা আর কোনো নির্বাচনে যাব না। একদফা দাবি আদায়ের পর দেশে গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান।

শিয়ালকাঠি কাউখালীতে সমাপনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান।

গৌরনদীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, আহত ১১ : গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, একদফা দাবিতে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় রোডমার্চে যোগ দিতে যাওয়ার সময় গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলায় বিএনপির ১১ নেতাকর্মী আহত হন। সকালে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ড, গয়নাঘাট সেতু এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীদের লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে মহড়া দিতে দেখা যায়। গুরুতর আহত বরিশাল জেলা উত্তর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইদুল আলম সেন্টু, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি কেএম আনোয়ার হোসেন বাদলকে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলায় আহত গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামাল পারভেজ অভিযোগ করেন, ঢাকা থেকে বিএনপি নেতাদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাস সকাল পৌনে ৯টার দিকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় যুব ও ছাত্রলীগের ২০-২৫ নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা, পাইপ, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে লোকাল বাস কাউন্টারের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে মাইক্রোবাস থামিয়ে ভাঙচুর করে ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে রোডমার্চে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী মাহিলাড়া এলাকায় হামলা চালিয়ে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য রাকিব শিকদার, জিশান ও ফাহাদকে এবং গয়নাঘাট এলাকায় হামলা চালিয়ে বিএনপি কর্মী হুকুমালী সরদারকে মারধর করে। এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহাবুব আলম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে বিএনপির দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ঘটতে পারে।’

বিজয় নিশ্চিত সরকার পতন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম