Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঢাকা সিটি ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

আট বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্প

সাত বছর আগে কোটি টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আট বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্প

ঢাকা শহরকে অপরাধমুক্ত করার লক্ষ্যে আট বছর আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা সিটি ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামের প্রকল্পটি শুধু সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সাত বছর আগে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। তবে সময়মতো প্রকল্প শুরু করতে না পারায় তা বাতিল করা হয়। এ কারণে নতুন করে দেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট-১) গাজী মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, ২০১৬-১৭ সালের ফিজিবিলিটি স্টাডি দিয়ে বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে না বিবেচনায় নতুন করে স্টাডির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ অনুযায়ী আইআইএফসির মাধ্যমে নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। ইতোমধ্যেই সেটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরের অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে। আর অপরাধ হলেও তা সহজে চিহ্নিত করা যাবে। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেসব দেশের শহরগুলো সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেসব দেশের শহরের অপরাধপ্রবণতা শূন্যের কোটায়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবি) সবুজ পাতায় ‘ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা সিটি ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ শীর্ষক প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গোটা ঢাকা শহরকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারসংক্ষেপ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করতে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে ডিপিপি তৈরির নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। ২০১৬ সালে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। চীনা প্রতিষ্ঠান হোয়াশিং কন্ট্রাকশন ফার্ম কাজ পায়। পুলিশ, বিআরটিএ, বিআরটিসিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠান বৈঠক করে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে হোয়াশিং কন্ট্রাকশন ফার্ম পুলিশ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করে।

চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো ঢাকাকে সিসিটিভির আওতায় আনতে হলে ৩৬ হাজার ক্যামেরা প্রয়োজন। পাশাপাশি ফোর জি এলইটি ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করে মনিটরিংয়ের সুপারিশ করা হয়। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা মাঠপর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্যামেরা স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধানরা আইজিপির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-পুলিশ সদর দপ্তর ডিপিপি প্রস্তুত করে। এতে এলটিইি (লং টার্ম ইভালুয়েশন), আধুনিক ওয়াকিটকি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গানশট ডিটেকশন সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় পাঁচ হাজার ৬৮ কোটি টাকা ধরা হয়। ডিপিপি ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

ডিপিপির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো-সিসিটিভি সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম, ইন্টেলিজেন্স ক্রাইম অ্যান্ড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সেন্ট্রাল ক্রাইম অ্যান্ড ট্রাফিক মান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, পুলিশের বিভিন্ন ইাউনিটের মনিটরিং সেন্টার, ডাটা সেন্টার, ট্রেনিং সেন্টার, প্রাইভেট এলটিই (ফোরজি) ব্রডব্যান্ড কমিউনিটি সিস্টেম, কম্পিউটার এইডেড ডিসপাস সিস্টেম, পি-জিআইএস সিস্টেম, গানশট অ্যাকুইস্টিক ডিটেকশন সিস্টেম, মোবাইল কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং ভেহিকেল, ট্রাফিক ম্যাসেজ ডিসপ্লে বোর্ড সিস্টেম এবং ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম।

 

এ ডিপিপির কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। এ প্রস্তাবে ব্যয় কমিয়ে দেখানো হয়-প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তরে ফেরত পাঠানো হয়।

২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ডিপিপি পুনর্গঠন করে প্রস্তাবটি আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ৩১ অক্টোবর সেটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন এ প্রকল্পের জনবলসহ বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরে সেগুলো সংযোজন করে পুনরায় প্রস্তাব পাঠাতে বলে। কমিশনের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশের আলোকে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তা না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ২৮ জুন এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। ওই বছরের ৩০ জুলাই বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরকে জানিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালের ১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি নিয়ে আবার পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডিপিপির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি কম্পিউটার কাউন্সিল, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সভা করে। ২০২১ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রকল্পটির জন্য আবার নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরকে জানানো হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটিশনের কো¤পানি (আইআইএফসি) মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ সদর দপ্তর। ইতোমধ্যে আইআইএফসি সম্ভাব্যতা যাচাই করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এ প্রতিবেদনে ফোরজি এলইটি টেকনোলজির পরিবর্তে ফাইভজি টেকনোলজি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রকল্পটির ব্যয় এক হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে বেশ কিছু বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হলো-প্রাইভেট এলটিই (ফোরজি) ব্রডব্যান্ড কমিউনিটি সিস্টেম, কম্পিউটার এইডেড ডিসপাস সিস্টেম, গানশট অ্যাকুইস্টিক ডিটেকশন সিস্টেম, মোবাইর কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং ভেহিকেল এবং ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম।

ঢাকা সিটি পুলিশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম