হাইকোর্টের নির্দেশ
সালাম মুর্শেদীকে গুলশানের বাড়ি ছাড়তে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত রাজধানীর গুলশানের বাড়ি সরকারকে হস্তান্তর করতে সংসদ-সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। ওই সম্পত্তি বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবকে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রায়ে আদালত বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলে উল্লেখ করেছেন। এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে তিনি খুলনা-৪ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ-সদস্য হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে একই আসন থেকে তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজধানীর গুলশান-২-এ অবস্থিত পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি দখলে রাখার অভিযোগ তুলে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর রিট করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক (বর্তমানে সংসদ-সদস্য)। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে বাড়িসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। রুলে বাড়িটি বেআইনিভাবে দখলে রাখার অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর রাজউক নথি দাখিল করে। অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে প্রশ্ন ওঠা ওই ভূমি বা প্লটের চেইন অব টাইটেল (মালিকানা হস্তান্তরের পরম্পরা), দখলসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে পক্ষগুলোকে হলফনামা (অ্যাফিডেভিট ইন অপজিশন) দাখিল করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে দুদককে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দুদক হলফনামা আকারে তথ্যাদি দাখিল করে। এ সংক্রান্ত রুলের ওপর শুনানি শেষে পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ রুল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার হাইকোর্ট রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী অনিক আর হক ও সৈয়দ সায়েদুল হক এবং সালাম মুর্শেদীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে অংশ নেন।
রায়ের পর আইনজীবী অনিক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছেন, এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হওয়ায় রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদীকে বাড়িটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব সম্পত্তি বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে তা হলফনামা করে জানাতে বলা হয়েছে।
তবে এ রায়কে ‘বিরল’ উল্লেখ করে সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা সাংবাদিকদের বলেন, এটি যে পরিত্যক্ত সম্পত্তি, তা কোনো দেওয়ানি মামলার রায় দ্বারা স্বীকৃত নয়। সাধারণত দেওয়ানি আদালতের সুনির্দিষ্ট রায় ছাড়া সরাসরি সরকারের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের এরকম আদেশ দেয় না। এটি একটি বিরল রায়। এ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান আইনজীবী।
