এবার সিটির সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বেসিক ব্যাংক
সোনালী ও বিডিবিএলে পৃথক বোর্ড সভা একীভূত হতে সায় পরিচালকদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এবার বেসরকারি খাতের ভালো ব্যাংকের তালিকায় থাকা সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, স্বেচ্ছায় সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সোমবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই ব্যাংকের কমকর্তারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। ব্যাংক দুটি একীভূত হলেও আগামী তিন বছর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদন করবে।
বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতি সহায়তা যেহেতু অনেক বেশি, তাই সবল ব্যাংক হিসাবে কোনো দুর্বল ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যায়, তা খতিয়ে দেখছি। যেটাই করি না কেন, আগে ওই দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠন করব এবং তিন বছর বা তার বেশি সময় পর দুই ব্যালেন্সশিট এক করব। এটাই ইচ্ছা। পলিসিতে বলা আছে, ব্যাংক পুনর্গঠনে ৩ বছর সময় পাব। ভালো পথে এই তিনটা বছর গেলে আমি আশাবাদী সময় আরও বাড়বে। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ চলছে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের আলোচনা হচ্ছে। একীভূত হওয়া নিয়েও অনেকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে; চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হলে জানাব।’
এ নিয়ে মোট আটটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক পাঁচটা আর বেসরকারি ব্যাংক তিনটি। গত মার্চ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূত করার ধারা শুরু হয়। এছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল পৃথকভাবে বোর্ড সভা করেছে। এতে উভয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা একে অপরের সঙ্গে একীভূত হতে সম্মত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যাংকের র্শীষ কর্মকর্তারা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ-সদস্য শেখ আবদুল হাইকে চেয়ারম্যান বানিয়ে বেসিক ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তার পাঁচ বছরে (২০০৯-১৪) নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয় বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ফলে ২০১৩-২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির লোকসান হয় ৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ও অবলোপনের বিপরীতে ২০২২ সালে ব্যাংকটি ৫৫৬ কোটি টাকা আদায় করেছে। ২০২১ সালে আদায় হয়েছিল ১৯৯ কোটি টাকা। তবে আদায় বাড়লেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ কমেনি।
জানা গেছে, ব্যাংক খাতের সংস্কারে নানা সমস্যার সমাধান করতে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি পথনকশা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ব্যাংক একীভূত করার বিষয়টি রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছর থেকে তাদের চাপ দিয়ে একীভূত করা হবে।
