Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা

কুমিল্লায় গুলিবিদ্ধ পাঁচ শিক্ষার্থী : আহত ৩০

এসিল্যান্ডের গাড়িতে আগুন

Icon

কুমিল্লা ব্যুরো ও কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুমিল্লায় গুলিবিদ্ধ পাঁচ শিক্ষার্থী : আহত ৩০

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। শনিবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইনস ও রেসকোর্স এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৌম্য চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুর ও পরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে আত্মরক্ষা করেন। ইউএনও বলেছেন, এটি দুষ্কৃতকারীদের কাজ। এদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা স্থানীয় পত্রিকার দুই সাংবাদিককেও মারধর করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর জিলা স্কুলের ফটকে অবস্থান নেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরাও সেখানে মুখোমুখি অবস্থান করলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে নগরীর পুলিশ লাইনস এলাকায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। শিক্ষার্থীরাও পালটা ইট-পাটকেল ছোড়েন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। এতে ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মিতুল, কুমিল্লা সরকারি কলেজের আসিফ, সৌরভসহ ৫ জন গুলিবিদ্ধ এবং ৩০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশ লাইন্সের ভেতর ও আশপাশের বিভিন্ন বাসায় অবস্থান নেন।

স্থানীয় পত্রিকার দুই সাংবাদিককে মারধর করে একজনের ফোন নিয়ে যান ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন তারা। এরপর টাউনহল মোড় থেকে টমসম ব্রিজ রোডের সিএনজি স্টেশন, ভিক্টোরিয়া কলেজ গেট, রাজগঞ্জ মোড়, জিলা স্কুল গেটসহ বিভিন্ন গলিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শটগান, রামদা, লাঠি নিয়ে মহড়া দেন। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক দেখলেই মারধর ও হুমকি দিতে থাকেন। ইত্তেফাকের সংবাদ প্রদায়ক মানছুর আলম অন্তরকেও আওয়ামী লীগের একজন কর্মী লাঠি হাতে মারার জন্য তেড়ে আসেন।

এর আগে সকাল থেকেই কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জিলা স্কুল, কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল, কুমিল্লা হাই স্কুল, কুমিল্লা মডার্ন স্কুলসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন ও জামাল উদ্দিন বলেন, এটা আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি। আমরা কুমিল্লা মহানগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। অন্যায়ভাবে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে গুলিবিদ্ধ ৩ ছাত্রের নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম বলেন, মারা যাওয়ার বিষয়টি গুজব। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাণভয়ে পুলিশ লাইন্সের ভেতর আশ্রয় নেয়। আমরা তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছি।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন বলেন, কোনো শিক্ষার্থীকে গুলি করা হয়নি। তাদের কর্মসূচি পালনে আমরা সহযোগিতা করেছি। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিপক্ষ কিংবা টার্গেট নয়। আমরা বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা ঠেকাতে রাজপথে অবস্থান করছি।

এসিল্যান্ডের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ : চান্দিনায় আন্দোলন চলাকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৌম্য চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা-বাগুর বাসস্টেশন এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী লেনে সরকারি ওই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তারা। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত আত্মরক্ষা করেন সৌম্য চৌধুরী ও তার গাড়িচালক। ওই ঘটনায় হামলাকারীরা কেউ শিক্ষার্থী নয় বলে দাবি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা মহাসড়ক অবরোধ করে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আন্দোলনকারীদের মাঝে আটকা পড়েন। মুহূর্তের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা তার গাড়ি ভাঙচুরের এক পর্যায়ে গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মহাসড়কের চান্দিনা-বাগুর বাসস্টেশন থেকে উভয় পাশে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব বলেন, আন্দোলনে কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের আমরা বুঝিয়ে বলায় তারা বিক্ষোভ শেষে মহাসড়ক থেকে সরে যায়। দুষ্কৃতকারীরা এসিল্যান্ডের গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। তারা কেউ শিক্ষার্থী নয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম