শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ১২ হত্যা মামলা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আরও ১২টি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় চারটি, গাজীপুরে তিনটি, সাভারে একটি ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এবং ফতুল্লায় চারটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপির মোহাম্মদপুর, আদাবর, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানায় চারটি মামলা করা হয়।
মামলাগুলো করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্বজনরা। এর মধ্যে ট্রাকচালক সুজন হত্যায় মোহাম্মদপুর থানায় তার ভাই রফিকুল ইসলাম, পোশাক শ্রমিক রুবেল হত্যায় আদাবর থানায় তার বাবা রফিকুল ইসলাম, কিশোর নাইম হাওলাদার হত্যায় তার বাবা কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
এছাড়া নিহত যুবক ইমনের আত্মীয় সানি বাদী হয়ে কদমতলী থানায় মামলা করেন। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম মাসুদ, তার দুই ছেলে আহসানুল আলম মারুফ ও আশরাফুল আলম, জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ ১৯৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকশজনকে আসামি করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম ও যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. মাইনুল ইসলাম নিজ নিজ থানায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদপুর থানায় ট্রাকচালক সুজন হত্যা মামলা : মোহাম্মদপুর থানার মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৭৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪৫০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ এ আরাফাত, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসাদুজ্জামান খান, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন ও ১৪ দলের অনেককে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্রে রফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, আসামিদের নির্দেশনা, পরিকল্পনায় এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে ২০ জুলাই বছিলায় শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি করা হয়। এতে তার ভাই ট্রাকচালক সুজন আহত হন। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আদাবর থানায় পোশাক শ্রমিক রুবেল হত্যা মামলা : আদাবর থানায় শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৬ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম মাসুদ এবং তার দুই ছেলে আহসানুল আলম মারুফ (৩০) ও আশরাফুল আলমকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন-শেখ রেহেনা, আমির হোসেন আমু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, দিলীপ বড়ুয়া, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ ফজলে নূর তাপস, সাকিব আল হাসান।
যাত্রাবাড়ী থানায় কিশোর নাইম হত্যা মামলা : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত কিশোর নাইম হাওলাদারের বাবা কামরুল ইসলাম। এ মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৯৩ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা হিসাবে ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিদের মধ্যে-আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আমির হোসেন আমু, তাজুল ইসলাম, আনিসুল হক, শ ম রেজাউল করিম, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, ফাহিম গোলন্দাজ বাবলে, মহিউদ্দিন খান আলমগীর রয়েছেন। ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গুলিতে নাইম হাওলাদার (১৭) কাঁধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ শনাক্ত করা হয়।
কদমতলী থানায় মামলা : চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, হত্যা ও বিস্ফোরণের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের সাবেক এমপি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর-রশিদ, চান্দিনা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মফিজুল ইসলামসহ ৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপির কদমতলী থানায় মামলাটি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ১৯ জুলাই বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ডে আন্দোলন চলাকালে ইমন (২৬) নামের এক যুবককে গুলি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত ইমনের আত্মীয় সানি বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গাজীপুর : নগরীর গাছা ও বাসন থানায় মোট তিনটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এসব মামলায় প্রায় ৪০০ জনের নামোল্লেখসহ প্রায় ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গাছা থানার পূর্ব কলমেশর এলাকার সাইফুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. রজ্জব আলী একটি হত্যা মামলা করেন। গাছা থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন পুলিশের গুলিতে নিহত পান দোকানি হুমায়ুন কবিরের বড় ভাই হযরত আলী। বাসন থানায় হত্যা মামলা করেন কুড়িগ্রাম সদরের মোল্লাপাড়া মধ্য কুমরপুর এলাকার মো. আমির আলী (৪৪)।
তিনি গাজীপুরের তেলিপাড়ায় গুলিতে নিহত নূর আলমের বাবা। গাছা ও বাসন থানার দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গাছা থানার মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে তার ছেলে আরিফ বেপারীকে (২৮) ২০ জুলাই গুলি করে হত্যা করে আসামিরা। মামলায় ওবায়দুল কাদের, আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেল, আজমত উল্লাহ খান, মতিউর রহমানসহ ১১৫ জনের নামোল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সাভার : ঢাকার সাভারে আব্দুল আহাদ সৈকত (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৬ জনের নামোল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সাভার মডেল থানায় মামলাটি করেছেন নিহত শিক্ষার্থী সৈকতের বাবা নজরুল ইসলাম। সৈকতদের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা থানার উত্তর দিগলকান্দি গ্রামে। তিনি ঢাকা কমার্স কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। মামলায় আসাদুজ্জামান খান কামাল, মোহাম্মদ এ আরাফাত, ডা. এনামুর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে শফিক মিয়া ও আশিক মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নিহত শফিক মিয়ার চাচাতো ভাই আবু হানিফ ও আশিক মিয়ার মা কুলসুম বেগম বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, ড. হাছান মাহমুদ, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, আব্দুল্লাহ আল কায়সারসহ ৬৯৮ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সিএনজি অটোরিকশা মিস্ত্রি রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় এ মামলাটি রেকর্ড করা হলেও শুক্রবার রাতে পুলিশ এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। এই মামলার বাদী অটোরিকশা মিস্ত্রি রানা।
বৈষম্যবিরোধেী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই বিকাল ৩টায় ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় খলিল মিয়ার ছেলে সিএনজি মিস্ত্রি রানা গুলিতে আহত হন। মামলায় আসামিরা হলেন-তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান তার ছেলে অয়ন ওসমান ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ দলীয় দেড়শ থেকে দুইশ।
এদিকে, ৪ আগস্ট নারাণগঞ্জ জেলা পরিষদের সামনে আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয় নামে এক আন্দোলনকারী। এই ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শেখ হাসিনাসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০০ জন অজ্ঞাত আসামি করেছেন।
