Logo
Logo
×

শিল্প বাণিজ্য

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ হচ্ছে

ঋণ চুক্তির বিষয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের অনুমোদন

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ঋণ চুক্তি বিষয়টি আটকে ছিল। ফলে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় সরকারের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরের প্রস্তুতি নেয়ার সময়ই এলো সুখবরটি। গত শুক্রবার ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়, ঋণ চুক্তি করতে স্টেট কাউন্সিলের অনুমোদনের পরই চীনের প্রেসিডেন্ট অনুমোদন দিয়েছেন। এ পর্যায়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের চীন সফরও বাতিল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এশিয়া উইংয়ের যুগ্মসচিব ড. একেএম মতিউর রহমান সোমবার যুগান্তরকে জানান, এতদিন শুধু চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য পরবর্তী কার্যক্রমগুলো আটকে ছিল। অবশেষে অনুমোদন মিলেছে। এখন চীন থেকে খসড়া ঋণ চুক্তি আমাদের কাছে পাঠানো হবে। তারপর আবার নেগোসিয়েশন হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর ঋণ চুক্তি। তবে সাধারণত এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে ৭-৮ সপ্তাহ সময় লাগে। আমরা আশা করছি ২ মাসের মধ্যেই ঋণ চুক্তি করতে পারব।

সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় রেলপথের নতুন রুট তৈরি হবে। নতুন রেলপথ দিয়ে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ রেলপথ দিয়ে খুলনায় যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংযোগ প্রকল্পে চারটি সেকশনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ হবে। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আড়াই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দিন থেকে রেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। নতুন রুটটি হবে ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত।

ইআরডি সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিনের চিঠি চালাচালি এবং নানা জটিলতার অবসান হওয়ায় এ প্রকল্পে অর্থায়নে গত বছরের নভেম্বর মাসে ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আবারও দেখা দেয় দীর্ঘসূত্রতা। ফলে ডিসেম্বর মাসে এ ঋণ চুক্তি হবে বলে জানায় ইআরডি। কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও এ মাসে চুক্তি হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর চীনে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল না।

ইআরডির অপর এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের শেষ বছর হওয়ায় এ প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দিন থেকে এর ওপর দিয়ে রেল সংযোগ চালুরও লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় কিছুটা চাপে ছিল সরকার। এখন চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় সব জটিলতার অবসান হয়েছে।

সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা এবং বাকি ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময়ই এ প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তীতে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এজন্য চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্বিত হতে থাকে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের হস্তক্ষেপে সুদ ও শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যায়। আগের ২ শতাংশ সুদেই ঋণ দিতে রাজি হয় চীন। পরবর্তীতে চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফাঁদে আটকে যায় এ প্রকল্পের ঋণ চুক্তি।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ভূমি অধিগ্রহণ, ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং এবং ৩ কিলোমিটার ডাবলসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ, ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, এক দশমিক ৯৮ কিলোমিটার র‌্যাম্বপস, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং, ৪০টি আন্ডারপাস, ১৪টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ছয়টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ কম্পিউটার বেজ রেলওয়ে ইন্টারলক সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ করা হবে।

ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এত বড় ঋণ এর আগে চীনের কাছ থেকে নেয়া হয়নি। তাই অভিজ্ঞতা ছিল না। বিষয়টি আমরা জানতাম যে, তাদের দেশের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। কিন্তু সেজন্য যে এতটা সময়ক্ষেপণ হবে, সেটি ভাবনার মধ্যে ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, এর আগে সর্বোচ্চ ২৯ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ নেয়া হয়েছিল চীনের কাছ থেকে। সেখানে এসব সমস্যা ছিল না। তবে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হলেই ঋণ চুক্তির জন্য যে তাদের প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগে, সেটা পরবর্তীতে জানানো হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম