উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর ইকবাল বাহার
jugantor
উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর ইকবাল বাহার

  সাইফ আহমাদ  

২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর ইকবাল বাহার

যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এমন মানুষের কাছে পরিচিত নাম ইকবাল বাহার জাহিদ। ‘চাকরি করব না, চাকরি দেব’ এই ব্রত নিয়ে যিনি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফরম ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প। বেকারত্ব দূরীকরণে তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখান নিজে কিছু করার। এ বিনয়ী, হাস্যোজ্জ্বল, স্বপ্নবাজ মানুষটির সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেবিস্তারিত লিখেছেন-সাইফ আহমাদ

যুগান্তর : কেমন চলছে অনলাইন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম?

ইকবাল বাহার : জি ধন্যবাদ, এখন পর্যন্ত খুবই ভালো চলছে আলহামদুলিল্লাহ। অনলাইনে এখন পর্যন্ত ৭ লাখের মতো শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

যুগান্তর : আপনাকে উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর বলা হয় কেন?

ইকবাল বাহার : আমি তো আসলে শুধু কীভাবে উদ্যোক্তা হবে সেটা শিখাই না বরং উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে নার্সিং করি। দেখুন, উদ্যোক্তা তৈরি করা খুব সহজ কিন্তু তার ব্যবসাটা চালিয়ে যাওয়া, পরবর্তী ধাপে পোছানো এর উন্নয়ন এ জায়গাগুলোতে আমি বেশি কাজ করি। যাতে কোনো উদ্যোক্তা ঝরে না পড়ে। সেই অর্থে হয়তো কারিগর বলা যেতে পারে। আমি শুধু স্বপ দেখাই না, স্বপ্নটাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় আমি সেটাও শেখাই।

যুগান্তর : নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের শুরুটা কীভাবে?

ইকবাল বাহার : আমি ছাত্রজীবন থেকেই স্বেচ্ছাসেবি কাজ করতাম। সেখান থেকে নিজের মধ্যে একটা তাগিদ তৈরি হয় যে, আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। মাথায় ঘুরতে থাকে কী করব? কীভাবে করব? এরই মধ্যে মনে হলো আমি যখন কথা বলি মানুষ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনে। আমি ভাবলাম তাহলে আমি তাদের গল্পের মতো করে শেখাই। আমি নিজে যখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্তা হই তখন থেকেই মাথায় কাজ করত বাংলাদেশে বেকার সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়? সে লক্ষ্যেই এনবিএমইজিএফ প্রতিষ্ঠা করি। যেন এখান থেকে উদ্যোক্তা তৈরি হয়।

যুগান্তর : কতগুলো ব্যাচ শেষ হয়েছে এবং কততম ব্যাচ চলছে?

ইকবাল বাহার : শুরুতে ভেবেছিলাম সাত দিন চলবে একটি ব্যাচের পর হয়তো শেষ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এতটাই তীব্র দেখেছি যে, আমি এটাকে বন্ধ করতে পারিনি। এরই মধ্যে আমরা ২০টা ব্যাচ শেষ করেছি যেখানে প্রায় সাত লাখ ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।

যুগান্তর : কেন এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করলেন?

ইকবাল বাহার : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রতিটা মানুষের একটা বলার মতো গল্প থাকা দরকার। বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, বিশাল প্রতিপত্তির মালিক, আমি একা অনেক বড় হয়ে গেলাম, এটা আসলে কোনো গল্প হতে পারে না। আপনার গল্পটা বলার মতো হবে যখন আপনি এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দশজন, বিশজন, একশজন মানুষকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন। এ চিন্তা থেকেই গড়ে তুলেছি এনবিএমইজিএফ।

যুগান্তর : বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোন কোন দেশে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন?

ইকবাল বাহার : বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় আমাদের নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তারাই আমাদের ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। ঠিক তেমনি করে সৌদি আরব, দুবাই, ইতালি, জার্মানি, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো প্রায় ৫০টি দেশে আমাদের ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তারাই বিদেশে নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন।

যুগান্তর : যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?

ইকবাল বাহার : যারাই আমার কাছে শিখতে আসে আমি সব সময় বলি, তুমি উদ্যোক্তা হবে, অনেক বড় কিছু করবে তার আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে। এটাতেই আমি বেশি গুরুত্ব দেই। সবাইকে বলতে চাই, তুমি একা বড় না হয়ে কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বড় হও। অন্যদেরও বড় হতে সাহায্য কর। যার কারণে বাংলাদেশে এই প্রথম আমাদের প্ল্যাটফর্মের ছেলেমেয়েরা একজন আরেকজন উদ্যোক্তাকে প্রমোট করে বিনা পয়সায়।

উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর ইকবাল বাহার

 সাইফ আহমাদ 
২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর ইকবাল বাহার
ইকবাল বাহার জাহিদ।

যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এমন মানুষের কাছে পরিচিত নাম ইকবাল বাহার জাহিদ। ‘চাকরি করব না, চাকরি দেব’ এই ব্রত নিয়ে যিনি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফরম ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প। বেকারত্ব দূরীকরণে তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখান নিজে কিছু করার। এ বিনয়ী, হাস্যোজ্জ্বল, স্বপ্নবাজ মানুষটির সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলে বিস্তারিত লিখেছেন-সাইফ আহমাদ

যুগান্তর : কেমন চলছে অনলাইন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম?

ইকবাল বাহার : জি ধন্যবাদ, এখন পর্যন্ত খুবই ভালো চলছে আলহামদুলিল্লাহ। অনলাইনে এখন পর্যন্ত ৭ লাখের মতো শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

যুগান্তর : আপনাকে উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর বলা হয় কেন?

ইকবাল বাহার : আমি তো আসলে শুধু কীভাবে উদ্যোক্তা হবে সেটা শিখাই না বরং উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে নার্সিং করি। দেখুন, উদ্যোক্তা তৈরি করা খুব সহজ কিন্তু তার ব্যবসাটা চালিয়ে যাওয়া, পরবর্তী ধাপে পোছানো এর উন্নয়ন এ জায়গাগুলোতে আমি বেশি কাজ করি। যাতে কোনো উদ্যোক্তা ঝরে না পড়ে। সেই অর্থে হয়তো কারিগর বলা যেতে পারে। আমি শুধু স্বপ দেখাই না, স্বপ্নটাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় আমি সেটাও শেখাই।

যুগান্তর : নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের শুরুটা কীভাবে?

ইকবাল বাহার : আমি ছাত্রজীবন থেকেই স্বেচ্ছাসেবি কাজ করতাম। সেখান থেকে নিজের মধ্যে একটা তাগিদ তৈরি হয় যে, আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। মাথায় ঘুরতে থাকে কী করব? কীভাবে করব? এরই মধ্যে মনে হলো আমি যখন কথা বলি মানুষ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনে। আমি ভাবলাম তাহলে আমি তাদের গল্পের মতো করে শেখাই। আমি নিজে যখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্তা হই তখন থেকেই মাথায় কাজ করত বাংলাদেশে বেকার সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়? সে লক্ষ্যেই এনবিএমইজিএফ প্রতিষ্ঠা করি। যেন এখান থেকে উদ্যোক্তা তৈরি হয়।

যুগান্তর : কতগুলো ব্যাচ শেষ হয়েছে এবং কততম ব্যাচ চলছে?

ইকবাল বাহার : শুরুতে ভেবেছিলাম সাত দিন চলবে একটি ব্যাচের পর হয়তো শেষ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এতটাই তীব্র দেখেছি যে, আমি এটাকে বন্ধ করতে পারিনি। এরই মধ্যে আমরা ২০টা ব্যাচ শেষ করেছি যেখানে প্রায় সাত লাখ ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।

যুগান্তর : কেন এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করলেন?

ইকবাল বাহার : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রতিটা মানুষের একটা বলার মতো গল্প থাকা দরকার। বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, বিশাল প্রতিপত্তির মালিক, আমি একা অনেক বড় হয়ে গেলাম, এটা আসলে কোনো গল্প হতে পারে না। আপনার গল্পটা বলার মতো হবে যখন আপনি এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দশজন, বিশজন, একশজন মানুষকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন। এ চিন্তা থেকেই গড়ে তুলেছি এনবিএমইজিএফ।

যুগান্তর : বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোন কোন দেশে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন?

ইকবাল বাহার : বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় আমাদের নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তারাই আমাদের ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। ঠিক তেমনি করে সৌদি আরব, দুবাই, ইতালি, জার্মানি, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো প্রায় ৫০টি দেশে আমাদের ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তারাই বিদেশে নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন।

যুগান্তর : যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?

ইকবাল বাহার : যারাই আমার কাছে শিখতে আসে আমি সব সময় বলি, তুমি উদ্যোক্তা হবে, অনেক বড় কিছু করবে তার আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে। এটাতেই আমি বেশি গুরুত্ব দেই। সবাইকে বলতে চাই, তুমি একা বড় না হয়ে কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বড় হও। অন্যদেরও বড় হতে সাহায্য কর। যার কারণে বাংলাদেশে এই প্রথম আমাদের প্ল্যাটফর্মের ছেলেমেয়েরা একজন আরেকজন উদ্যোক্তাকে প্রমোট করে বিনা পয়সায়।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন