উদ্যোক্তার কথা
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশে মেটার সাপোর্ট সরবরাহ করে এইচটিটি পুল। স্থানীয় পার্টনার ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করছেন তরুণ উদ্যোক্তা মুনাফ মজিব চৌধুরী। শুধু করপোরেট উদ্যোক্তা হিসাবেই নয়, নানারকম কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অবদান রাখছেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে। ‘একসাথে ফাউন্ডেশন’ তেমনি এক উদ্যোগ। ইতোমধ্যে এ উদ্যোগটি অর্জন করেছে বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি এ উদ্যোক্তা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক যুগান্তরের সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-সাইফ আহমাদ
প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত কোথায় কোথায় কাজ করেছেন?
উত্তর : বিগত ১৩-১৪ বছরের করপোরেট ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল একটি এনজিওর মাধ্যমে। তারপর এশিয়াটিক ইভেন্টসে যুক্ত হই। সেখানে কিছু বছর কাজ করার পর আমি চলে আসি কিউবিতে এবং এর পরে ডটকমে। আরও কিছু বছরের অভিজ্ঞতার পর এশিয়াটিকের অ্যাকাউন্ট ডিরেক্টর হিসাবে নিযুক্ত হই। এইচটিটি পুলের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসাবে যোগদানের আগে আমি আজিয়াটার ADA-এর সিনিয়র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর হিসাবে চার বছর কর্মরত ছিলাম।
প্রশ্ন : এইচটিটি পুলের বাংলাদেশে কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলুন। এর মাধ্যমে কীভাবে দেশ উপকৃত হতে পারে?
উত্তর : এইচটিটি পুল মেটার কার্যক্রমকে কীভাবে সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়, তার জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থানীয় পর্যায়ে পেমেন্টের সুবিধার জন্য আমরা টাকাতে পেমেন্ট গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় তাকে ডলারে পরিবর্তন করে নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে বাজারসংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা।
প্রশ্ন : ‘একসাথে ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার উৎসাহটা কীভাবে পেলেন?
উত্তর : দেখুন, আমার অভিজ্ঞতার বেশির ভাগটাই ডিজিটাল এবং টেকনোলজিবেসড বিজনেস সলিউশন নিয়ে। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় পরিবেশের উন্নয়নে কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় ছিল সব সময়ই। কয়েক বছর আগে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি মাঝে মধ্যেই গ্রামে যেতে শুরু করি। সেখানে যাতায়াতের কারণে আমি কিছু সামাজিক বিষয় লক্ষ করি। এর থেকে আমি একটি বিষয়কে বেছে নেই, কাঠের লাকড়ি দিয়ে রান্না করার চুলা। গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলে আমি এর টেকসই সমাধান তৈরির জন্য কাজ শুরু করি। আর এভাবেই আমি একসঙ্গে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করি।
প্রশ্ন : ‘একসাথে’ এর কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত বলবেন?
উত্তর : লাকড়ির চুলায় রান্না আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য দুইয়ের জন্যই ক্ষতিকর। একই সঙ্গে সময়সাপেক্ষও। সমাধান হিসাবে আমি বায়োগ্যাস প্লান্টের ব্যাপারে জানতাম। আমরা একটি সামাজিক উদ্ভাবনী মডেল তৈরি করি। একটি জমি বাছাই করি, ৩-৪টি গরু নেই। মালিকদের সঙ্গে আমরা অংশীদারত্বের চুক্তিতে আসি এবং সেখানেই বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করি। আমরা তাদের গরুর বর্জ্য সেই প্লান্টে ফেলতে এবং এর থেকে উৎপন্ন গ্যাস রান্নার কাজে ব্যবহার করতে উৎসাহ প্রদান করি। এ অংশীদারত্বের ব্যাপারটা খুব ফলপ্রসূ এবং দুই পক্ষই এতে উপকৃত হয়। আমরা তাদের জানিয়ে দিই যে, এ পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া সব বায়ো বর্জ্য আমরা নিজেরাই নিয়ে যাব এবং তারা এ গ্যাসে রান্না করবেন। দশটি বাড়ি নিয়ে শুরু করেছিলাম, পরে তা বেড়ে বিশটি হয়েছে এবং এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রশ্ন : এর সামাজিক প্রভাব কেমন লক্ষ করছেন?
উত্তর : যখন গ্রামের মানুষজন নিজেদের স্বাস্থ্যের এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে খাদ্য প্রস্তুত করে, তখন তার ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব তো থাকবেই। একই সঙ্গে এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও কাজ করে। এছাড়া এ রান্নার ফলে প্রাকৃতিক সার তৈরি হচ্ছে। যেহেতু আমাদের অংশীদারের সংখ্যা বাড়ছে, আমরা আরও বায়ো বর্জ্য সংগ্রহ করছি, যা কৃষির জন্য উপকারী এবং প্রাকৃতিক সার হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো জিরো কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে সবুজ গ্রাম তৈরি করা।
প্রশ্ন : এ প্রকল্প নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তর : আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বায়ো বর্জ্যকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সার কারখানা প্রতিষ্ঠা করা এবং স্থানীয় মানুষকে এর অংশীদার বানানো। এর ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং এমন একটি ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে, যার ফলে দুপক্ষই উপকৃত হবে।
প্রশ্ন : আপনি কি কোনো বিনিয়োগ পেয়েছেন বা খুঁজছেন?
উত্তর : হ্যাঁ, আমরা বিনিয়োগকারী খুঁজছি, যারা এ ধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হবেন। কিন্তু সমস্যা হলো বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিময়ের দ্রুত প্রতিদান চান। আপনি যদি আমাদের বিজনেস মডেলের দিকে লক্ষ করেন, তবে বুঝবেন এ প্রকল্প আপনাকে একটা মানসম্মত অর্থায়ন ফেরত দেবে, কিন্তু এর জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
প্রশ্ন : আর কিছু বলতে চান?
উত্তর : হ্যাঁ, একটা ব্যাপার জানাতে চাই, আমি ইংলিশ চ্যামপ নামে আরেকটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছি, এর মাধ্যমে গ্রামে বসেই মানুষজন ইংরেজি শিখতে পারবেন। গ্রামের মানুষদের বিশেষ করে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা ফ্রিল্যান্সারদের আরও ভালো ইংরেজি জানা জরুরি। আমি উপলব্ধি করে দেখেছি আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজে খুব দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজিতে কথা বলতে না পারার কারণে পিছিয়ে পড়ছেন। তাই এ ইংলিশ চ্যামপ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আশা করি, সবাই এর থেকে উপকৃত হবে।

