বিশ্বব্যাপী বাড়ছে মোবাইল গেমের বাজার
সাইফ আহমাদ
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বব্যাপী বড় হচ্ছে গেমিং খাত। শুধু বিনোদন বা সময় কাটানো নয় গেমিং বড় অবদান রাখছে দেশের অর্থনীতিতেও। করোনাকালীন সারা বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত এ খাতটির পরিধি বেড়েছে হু হু করে। বিশেষত মোবাইল গেমের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে আরও বাড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে চলতি বছর লাভজনক অবস্থায় থাকবে মোবাইল গেমিং।
মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম ডাটা ডট এআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে মোবাইল গেমিং খাতে ১০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ব্যয় ছাড়িয়ে যাবে। যদিও ২০২২ সালে এ খাতে যে পরিমাণ ব্যয় হয়েছিল তার তুলনায় চলতি বছরের পূর্বাভাস ২ শতাংশ কম। তবে এ খাতের একটি বড় অংশ এখনো মোবাইলের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
আইডিসি ও ডাটা ডট এআই-এর দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গেমিং খাতের মোট ব্যায়ের ৫৬ শতাংশই থাকবে মোবাইল গেমিংয়ের দখলে। অন্যদিকে কনসোল গেমিংয়ের আয়ত্তে থাকবে ২২ শতাংশ এবং ২১ শতাংশ ব্যয় হবে ম্যাক বা কম্পিউটার গেমিংয়ে। হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসে ব্যয় নতুন মোড় নিতে পারে। এ খাতে ব্যয় কমে ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। মূলত নিনটেনটো সুইচ লাইট ক্রয়ে ব্যবহারকারীদের আগ্রহ কমে যাওয়া মূল কারণ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইক্রোসফটের এক্সবক্স সিরিজ এক্স/এস ও সনির প্লেস্টেশন ৫-এর জনপ্রিয়তা বাড়ায় হোম কনসোলের জন্য গ্রাহক ব্যয় বাড়বে। চলতি বছর ব্যয়ের হার ৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে উইন্ডোজ কম্পিউটার ও অ্যাপলের ম্যাকবুকে ভোক্তা ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে।
গেমিংয়ে সরাসরি ব্যয় কমলেও এ খাতে মোবাইল এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারি সময়ের পর থেকে বৈশ্বিকভাবে গেমিংকে বড় ব্যবসা হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে।
সেই বছরই মোবাইল গেম ডেভেলপাররা ১৫০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। যদিও পিসি গেম ডেভেলপারদের রোজগার ছিল ৮৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, মোবাইল গেমে ডেভেলপাররা প্রায় দ্বিগুণ রোজগার করেছেন। অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমের জনপ্রিয়তা ও গেম খেলে অর্থ উপার্জন করার সুবিধা থাকায় মোবাইল গেমের জনপ্রিয়তা এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যায়। পাবজি থেকে শুরু করে ক্ল্যাশ রয়্যাল, ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা এমনকি পোকেমন গো-র মতো গেমও ব্যাপক অর্থ রোজগার করেছে ২০২০ সালে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ বৈশ্বিক গেমিং বাজারের প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ২১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর এ খাতের নেতৃত্ব দেবে মোবাইল প্ল্যাটফরম। নিউজ।
স্মার্টফোন ব্যবহার বৃদ্ধি ও মোবাইল কম্পিউটিংয়ের সক্ষমতা বাড়ায় গেমিং খাতের নেতৃত্ব দেবে মোবাইল প্ল্যাটফরম। এমনটাই সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানিয়েছে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ। অন্যদিকে গেমিং খাতের আয় গেমারদের সংখ্যার মাধ্যমেও প্রভাবিত হবে। ২০২৩ সালে গেমারদের সংখ্যা ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৩৩৮ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও বর্তমানে ক্লাউড গেমিংও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। চলতি বছর স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে ক্লাউড গেমিংয়ে ব্যয় করা সময়ের পরিমাণ ২৬ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে ডাটা ডট এআই ও আইডিসির প্রতিবেদনে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল চলতি বছর ভালো প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে মোবাইল গেমিং খাত। আর এ খাতে বিশ্বজুড়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্রাজিল, তুরস্ক ও মেক্সিকো।
বাংলাদেশেও মোবাইল গেমসের বাজার বড় হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের এ মোবাইল গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন একটিভ প্লেয়ার আছে যারা নিয়মিত নানা ধরনের মোবাইল গেমস খেলছে। গেমিংয়ের এ বিলিয়ন ডলার বাজার ধরতে দেশে শতাধিক গেমিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান; আসছে বিদেশি বিনিয়োগ।