Logo
Logo
×

২২ বছরে যুগান্তর

দারিদ্র্য, উন্নয়ন ও দুর্নীতি

Icon

ড. আর এম দেবনাথ

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দারিদ্র্য, উন্নয়ন ও দুর্নীতি

কয়েকদিন আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের ওপর কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা এক বুভুক্ষু দরিদ্র জাতি ছিলাম। এখন একটু আয়-উন্নতি হয়েছে। টাকার প্রবাহ বেড়েছে। লোভ-লালসা বেড়েছে।’ এসব বলতে বলতে তিনি দুর্নীতি সম্পর্কে বলেন, ‘মানতেই হবে দুর্নীতির একটা জোয়ার উঠেছে।’ তার দুটি বক্তব্যই প্রণিধানযোগ্য। তবে আমি আজকের নিবন্ধে দুর্নীতির আলোচনায় যাব না। দারিদ্র্যের ওপরই লেখাটা সীমিত রাখতে চাই। কারণ দারিদ্র্য আমাদের নিত্য সঙ্গী। 

এ সম্পর্কে ড. আকবর আলি খানের একটা সুচিন্তিত গ্রন্থ রয়েছে। তিনি তাতে দেখিয়েছেন বাঙালি সব সময়ই দারিদ্র্য পীড়িত। আমরা এর প্রমাণ পাই বাঙালির আদিগ্রন্থ ‘চর্যাপদেও’। সেখানেও একদিকে প্রাচুর্যের কথা, লোভ-লালসা, ভোগ ও ঈর্ষার কথা। অন্যদিকে দারিদ্র্য, চরম দারিদ্র্যের কথা। এসব মধ্যযুগের কথা। এর পরবর্তীকালে কি বাঙালির আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল?

বাঙালির ছিল ঐতিহ্যবাহী মসলিন শিল্প বা বস্ত্রশিল্প, ছিল জাহাজশিল্প। ঢাকা শহর ছিল এর কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁতিবাজার, বসাক সম্প্রদায় অধ্যুষিত নওয়াবপুর রোডসংলগ্ন এলাকা, সূত্রাপুর (সূত্রধর থেকে) ইত্যাদি অঞ্চল আমাদের মসলিন ও বস্ত্রশিল্প এবং জাহাজশিল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়। দিন চলছিল। কিন্তু সব লণ্ডভণ্ড করে দেয় ব্রিটিশ শাসন। তারা বৈষম্যমূলক প্রশাসনিক ও রাজস্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের তাঁতি সম্প্রদায়ের বারোটা বাজায়। দুর্ভিক্ষের সময় অন্যদের সঙ্গে তাঁতি, বিশেষ করে নারী তাঁতিরা হাজারে হাজারে মৃত্যুবরণ করেন। জাহাজশিল্প শেষ হয়। এসব খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ১৯৪৭ সালে আসে ভারত বিভক্তি ও স্বাধীনতা। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় পাকিস্তান নামের একটা কৃত্রিম রাষ্ট্র (১৯৪৭-১৯৭১)। এ সময়েও বাঙালি দারিদ্র্য পীড়িত। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যে দেখা যায় পাকিস্তানের প্রথমদিকে আমাদের দারিদ্র্যের হার ছিল ৮০ শতাংশ। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি মানুষের কী কষ্ট। মানুষের কাজ ছিল না। তাঁতিদের সুতা, রং নেই, কাপড়ের বাজার নেই। ভূমিহীন চাষির আধিক্য। মানুষ অভাবে-অনটনে নিত্যদিন। পরনে কপড় নেই, শীতে গায়ে চাদর নেই। পায়ে জুতা নেই। টিনের ঘরবাড়ি খুবই কম। অধিকাংশই ‘ছনের’ অথবা মাটির ঘর। চিকিৎসার সুযোগ নেই। ডাক্তার ওষুধ পাওয়া যায় না। মানুষ ভাতের ‘মাড়’-এর জন্য বাড়ি বাড়ি আসত। ভিক্ষুক আর ভিক্ষুক। উত্তরাঞ্চলে ‘মঙ্গা’ নিত্যদিনের ঘটনা। ভিক্ষা চাইলেও তা মিলে না। কতবার যে দরিদ্রদের জন্য লঙরখানা খুলতে হয়েছে তার হিসাব নেই। মার্কিনি চালের ‘জাও’। এই যে চিত্র তার সঙ্গে যে কোনো ‘সিনিয়র সিটিজেন’ই পরিচিত। এই যে দারিদ্র্য, অসাম্য-বৈষম্য তার বর্তমান অবস্থা কী? কতটুকু কমেছে দারিদ্র্য? দেশের সব অঞ্চলে কী সমভাবে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে? শহর ও গ্রামের চিত্র কী একই? বৈষম্যের অবস্থা কী? বৈষম্য কতটুকু কমেছে? না কি তা বেড়েছে? স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে এসব প্রশ্ন করাই যায়, করা দরকার। কারণ ৫০ বছর মানে অর্ধ শতাব্দী। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের বহু দেশই অসাধ্য সাধন করেছে। এর মধ্যে জাপান আছে, চিন আছে, ভিয়েতনাম আছে, আছে মালয়েশিয়া। ভারতও কম কী।

২০২১ সালে এসে দেখা যায় বেশ কিছু উন্নতি। দৃশ্যত মানুষ ভাত-কাপড় পাচ্ছে, গায়ে তাদের জামা-কাপড় আছে, আছে শীতবস্ত্র। পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। পয়ো ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমদানি রপ্তানি ব্যবসার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বিদেশ থেকে উপার্জন করে বাংলাদেশিরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। গ্রামের বাজার মালামালে ভরপুর। যেখানে সেখানে স্বর্ণের দোকান। ১২-১৩ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাংক আমানত। ৬০টি ব্যাংক ২০-২৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেশে কাজ করছে। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। লাখ লাখ লোক ব্যাংকের সেবার আওতায় আসছে। ঢাকা শহর কলেবরে বিশাল হয়েছে। তার ব্যবস্থাপনার জন্য শহরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পে ৩০-৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে যাদের বেশিরভাগই নারী। ৩-৪ হজার হচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানা। বিশাল একটা শিল্প খাত গড়ে উঠেছে। সিমেন্টশিল্প, বস্ত্রশিল্প, চিনিশিল্প, ওষুধশিল্প, ইস্পাতশিল্প থেকে শুরু স্বল্প বিস্তৃত কলেবর হয়েছে শিল্প খাতের। ইকোনমিকস জোনে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসছে। অবকাঠামোর অপূর্ব উন্নতি হয়েছে। মনেই হয় দেশে আর নতুন করে রাস্তাঘাট করার দরকার নেই। দরকার শুধু মেরামত ও সংস্কার। চারতলা লঞ্চে বরিশালবাসীরা বাড়ি যায়। উত্তরাঞ্চলে ‘মঙ্গা’ শব্দ নির্বাসিত। ‘মঙ্গা’ আনে ভিক্ষার অভাব, মঙ্গেও চাল পাওয়া যায় না এমন অবস্থা। এটা আর নেই। রংপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এর অভিশাপ থেকে মুক্ত। খাদ্যে না হোক, চালে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাল আমদানি সামান্য যদিও গম আমদানি প্রচুর। মাছ-মাংস, দুধ-ডিম, শাকসবজি, ফলমূলের উৎপাদন যথেষ্ট বেড়েছে। যদিও দেশি মাছের প্রায় বিলীন অবস্থা। দালান-কোঠায় ভরপুর ঢাকাসহ বড় বড় শহর। এমনকি গ্রামাঞ্চলেও এখন পাকা বাড়ি হচ্ছে। এই যে চিত্র তা একটা সাধারণ চিত্র। এসব দেখে আনন্দিত হওয়ার কারণ আছে। দৃশ্যতই আমরা এখন উন্নয়নশীল-নিম্নমধ্য আয়ের দেশ। এখন লক্ষ্য হচ্ছে মধ্য আয়ের দেশ হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার। এসব আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমান এ উন্নতি-উন্নয়নের ভাগিদার কি সবাই? না, এর মধ্যে পার্থক্য আছে? দারিদ্র্যের প্রকৃত চিত্র কী। বর্ণিত উন্নতি-উন্নয়নের ফলে কি দেশের সব অঞ্চল সমানভাবে উপকৃত হচ্ছে? দারিদ্র্য কি সমানভাবে হ্রাস পাচ্ছে? বৈষম্যের অবস্থা কী? এসব বড় প্রশ্ন। বড় প্রশ্ন হওয়ার ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। আমরা বাঙালি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছি। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অন্যতম বড় অভিযোগ ছিল বৈষম্যের। তারা ছিল ধনী, আমরা দরিদ্র। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার জন্য। তা আমরা লাভ করেছি বহু মূল্যে। ৫০ বছর পর কী অবস্থা আমাদের? দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় দারিদ্র্য বিমোচনে দৃশ্যত অনেক অগ্রগতি হলেও অঞ্চলভেদে রয়ে যাচ্ছে বিশাল পার্থক্য। বৈষম্যও দিনদিন বাড়ছে।

‘পারসপেকটিভ প্ল্যান অব বাংলাদেশ’-২০২১-৪১-এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচারে আমাদের অগ্রগতি প্রশংসাযোগ্য। ২০০০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। তা ২০১৬ সালে নেমে এসেছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে। অর্থাৎ দারিদ্র্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার আরও হ্রাস পেয়েছে। তা এখন ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। কথা আছে এর মধ্যে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ লোক চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। শতকরা হিসাবে তা ভালোই দেখায়। কিন্তু জনসংখ্যার হিসাবে যদি দেখা যায় তাহলে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। যেমন ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্য মানে কী? দেশের লোকসংখ্যা যদি ১৬ কোটিও ধরি তাহলেও তিন-সাড়ে তিন কোটি লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে। এ সংখ্যা কিন্তু বিশাল। আর চরম দারিদ্র্যের কথা বললে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ লোক চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। মনে রাখতে হবে এ অবস্থা ৫০ বছর পর, সাধীনতার ৫০ বছর পর। এদিক বিবেচনায় কিন্তু আমাদের সামর্থ্য ও সাফল্য সম্পর্কে প্রশ্ন তোলাই যায়। আবার সারা দেশের এ চিত্রকে যদি ভৌগোলিকভাবে ভাগ করি তাহলে খুবই খারাপ চিত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। দেখা যাচ্ছে রংপুর বিভাগ দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র অঞ্চল। শুধু তাই নয় সেখানে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি কী রংপুর বিভাগের রাজনৈতিক নেতা, সংসদ সদস্য এবং সেখানকার বুদ্ধিজীবীরা জানেন? মনে হয় না। এমনকি ঢাকার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ তথ্য জানা এমনটাও মনে হয় না। আমরা কেউ কি জানি ২০১৬ সালে রংপুর বিভাগের ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ লোক ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। এ সংখ্যা ২০১০ সালে ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। এটা কেমন করে হয়? বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সে অঞ্চলে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। পুরনো রাজশাহী বিভাগের অবস্থাও তাই। সেখানেও ২০১০-২০১৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে দেশের পশ্চিমাঞ্চল পূর্বাঞ্চল থেকে অনেক বেশি দরিদ্র। পশ্চিমাঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে- বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী (পুরনো), রাজশাহী (নতুন) এবং রংপুর বিভাগ। পূর্বাঞ্চলে পড়ছে- চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট। দারিদ্র্যের উপস্থিতি বিবেচনায় ঢাকার স্থান প্রথমে। দ্বিতীয় স্থান সিলেটের এবং তৃতীয় স্থান চট্টগ্রামের। এ তিন বিভাগে দারিদ্র্যসীমার নিচের লোকের সংখ্যা যথাক্রমে ১৬.০০ শতাংশ, ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ চিত্র মোটেই সুখকর চিত্র নয়। দৃশ্যত বরিশাল বিভাগের লোক রাজধানী ঢাকার সুবিধা পায়। ঢাকাতে বহু লোক আছে যারা বরিশালের। তারা কর্মরত- এরা প্রশাসনে আছে, নানা ধরনের কাজে আছে। আবার রংপুরের লোকও প্রচুর। ঢাকার বিরাট সংখ্যক রিকশাওয়ালা রংপুর বিভাগের। তাদের দৈনন্দিন একটা রোজগার আছে। অবশ্য রংপুর বিভাগের লোক প্রশাসনসহ সরকারি বিভাগে কম। খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের লোক ঢাকায় বিরল। তারা রাজধানীর সুবিধা সেভাবে পায় না। এসব কারণ হয়তো তাদের দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। অবশ্য পরিকল্পনা কমিশন দারিদ্র্যের আধিক্যের কারণ চিহ্নিত করেছে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। এখন নজর দেব বৈষম্যের দিকে।

পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ দলিল থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় আয়-বৈষম্য দেশে দিনদিন বাড়ছে। জাতীয়ভাবে আয়বৈষম্যের মাপকাঠি হচ্ছে ‘গিনি কোফিশিয়েন্ট’। এটা যত বেশি হবে তত বেশি হবে আয়-বৈষম্য। এ নিরিখে বলা যায় বিগত ২৫ বছরে আয়-বৈষম্য বেশ বেড়েছে।

১৯৯১-৯২ সালে ‘গিনি কোফিশিয়েন্ট’ ছিল শূন্য দশমিক ৩৮৮। ২০১৬ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৮২। এর মধ্যে শহুরে আয়-বৈষম্য গ্রামীণ আয়-বৈষম্যের চেয়ে সামান্য একটু বেশি।

এ আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি দারিদ্র্যের হার শতকরা হিসাবে হ্রাস পেলেও সংখ্যার বিচারে তা বেশ বড়। দ্বিতীয়ত দারিদ্র্য বেশি, সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে বা পদ্মার ওই পারের অঞ্চলে বা বিভাগগুলোতে। আর সবচেয়ে কম পূর্বাঞ্চলে বা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে। তৃতীয়ত দেখা যাচ্ছে যত উন্নতি হচ্ছে ততই আয়-বৈষম্য বাড়ছে। বলা বাহুল্য এ তিনটি লক্ষণই আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য অশুভ লক্ষণ। পঞ্চাশ বছর কেটে গেছে। এখনই সময় এসব বিপজ্জনক লক্ষণ দূর করার। আমার ধারণা আমরা সবাই বুঝি এ সবের কারণ কী। উগ্র বাজার অর্থনীতিই যে প্রধান কারণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পাকিস্তান আমলের মিশ্র অর্থনীতি ছেড়ে স্বাধীনতার পর আমরা সমাজতন্ত্রের পথ ধরি। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এ চারটি হয় আমাদের মূলনীতি। সংবিধানে যাই থাকুক না কেনো বাস্তবে আমরা ‘বাজার অর্থনীতি’ (মার্কেট ইকোনমি) নয় অনুসরণ করছি ‘উগ্র বাজার অর্থনীতি’ যার কোনো মানবিক দিক নেই। ‘ব্যাংক ফিন্যান্সড গ্রোথ’, রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিই আমাদের প্রধান উপায়। আমাদের রাজস্ব বাড়ে না, খরচ বাড়ে। উন্নয়নের কাজ চলে ঋণের টাকায়। অবকাঠামো গড়ে ওঠে বিদেশি ঋণে। আবার উন্নয়নের টাকা, ব্যাংকের টাকা চুরি হয়। পরিকল্পনা কমিশনের মতে যারা সরকারি সাহায্য পাওয়ার কথা তারা পায় না, যারা পাওয়ার কথা নয় তারা পায়। আবার পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলছেন, ‘মানতেই হবে দুর্নীতির একটা জোয়ার উঠেছে।’ এ সবের লক্ষণই দেখা যাচ্ছে উন্নয়নের পাশাপাশি।

লেখক : অর্থনীতিবিদ

দারিদ্র্য

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম