Logo
Logo
×

যুগান্তরের বিশেষ আয়োজন

বঙ্গবন্ধুর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মাইলফলক

Icon

মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ফিরে আসার পর জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজারো যুগান্তরকারী কাজের মধ্যে দুটি খুব দুঃসাহসিক কাজে হাত দেন- একটি হলো সংবিধান রচনা এবং অন্যটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) প্রণয়ন। প্রথমটি তিনি করতে পেরেছিলেন; দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে চার মূলনীতির ভিত্তিতে একটি চমৎকার অসাম্প্রদায়িক-চেতনাসমৃদ্ধ কারুকার্যময় হাতে লেখা এক অনবদ্য সংবিধান তিনি জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হন। এর পরই ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি রচনা করেন প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, তিনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করে তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করার সময় পেলেন না- দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রায় সপরিবারে তাকে জীবন দিতে হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল, স্বল্পোন্নত দেশের তকমা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে উত্তরণ ঘটছে, বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম ঘুচিয়েছে, বাংলাদেশ আজ পাতাল রেল, নদীর নিচে টানেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, পারমাণবিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু-এর মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের দুঃসাহস দেখিয়েছে, বাংলাদেশ আজ সাড়ম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালন করছে। এ মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যেও মনের গহিনে একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা নিরন্তর ঘুরপাক খায়। কেবলই মনে হয়, আমরা যদি মহাপাতকীর কাজটা না করতাম, আমরা যদি তাকে মুক্তিযুদ্ধের মতোই দেশ গড়ার কাজে সহযোগিতা করতাম, আমরা যদি তার স্বপ্নের ক্যানভাসটা আরও প্রসারিত করার চেষ্টা করতাম তাহলে বাংলাদেশকে এ সমৃদ্ধি অর্জন করতে এতটা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হতো না। বঙ্গবন্ধুর স্বাভাবিক মৃত্যু হলে আজকের এ আনন্দের দিনেও মনের গহিনে যন্ত্রণাটা অনুভব করতে হতো না- অনির্বচনীয় আনন্দে আজ সবাই অবগাহন করতে পারতাম।

বাংলাদেশ আজ যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে ক্রমধাবমান, বাংলাদেশ যতটা অর্জন করেছে- তার মূল ভিত্তি রচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তার ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিনের শাসনামলে দেশ গড়ার বহুমুখী কর্মপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে। শুরুতে ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয় ১৯৭৩-৭৮ বছরের জন্য প্রণীত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রণয়নের কাজ শুরু হয় আরও আগে থেকেই। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে এত কম সময়ের একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন রীতিমতো দুঃসাহসের ব্যাপার। কারণ একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মতো অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য যেসব তথ্য-উপাত্ত, জনবল প্রয়োজন হয়, তা একটি সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে সংগ্রহ করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কমিটির সদস্যদের বক্তব্য থেকে সে কথা স্পষ্টভাবেই জানা গেছে। তবুও বঙ্গবন্ধু তার কর্মে অটল ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের এবং বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। অবশ্য সাহসের অভাব বঙ্গবন্ধুর কোনোদিনই ছিল না। স্কুলে পড়ার সময় দুই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একে ফজলুল হক এবং ক্যাবিনেটমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে ছাত্রদের দাবি আদায়ের জন্য পথরোধ করে দাঁড়ানোটা কম সাহসের বিষয় ছিল না। বঙ্গবন্ধুর সাহসের উৎস ছিল তার আত্মশক্তিতে। কারণ ‘তার ছিল জনগণের আকাঙ্ক্ষা মূর্ত করার জাতীয়তাবাদী সাহস।’ তার সাহসের পরিপুষ্টি সাধিত হয়েছিল গণমানুষের কল্যাণে আঁকা- স্বাজাত আবেগ থেকে। সেই সাহসের কারণেই তিনি ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ছয়দফা নিয়ে লাহোরে উপস্থিত হতে পেরেছিলেন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। বঙ্গবন্ধুর এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটি ছিল বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি করার একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দলিল গ্রন্থে একটি মূল্যবান ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ভূমিকা লিখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভূমিকায় লিখেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দেড় বছরের মধ্যে এ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে। যে কোনো দেশের পক্ষে এত অল্প সময়ে পঞ্চবার্ষিকীর মতো একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এক অসাধারণ কাজ।...

উল্লেখ থাকে যে, এই পরিকল্পনাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকারদের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি, কম মজুরিতে নিযুক্তদের মজুরি বৃদ্ধি, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সমতাভিত্তিক আইন ব্যবস্থাসহ অর্থনৈতিক সংস্কার, বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতির সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় মূল ভিত্তি রচনা। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত উদ্দেশ্য থেকেই সে কথা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করলে এর যে সারকথা উপলব্ধি করা যায়, তা হলো- কৃষি ও শিল্পের পুনর্গঠন ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে সমতাভিত্তিক বণ্টনের মাধ্যমে মানবশক্তির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সম্পদের স্থিতিশীল কাঠামো তৈরি করা, যাতে বিদ্যমান জিডিপি সন্তোষজনক অবস্থায় উন্নীত হয় এবং গণমানুষ এ অর্থনৈতিক সুবিধা সমানভাবে ভোগ করতে পারে। জিডিপি সম্পর্কে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল- বিদ্যমান ৩ শতাংশ জিডিপিকে ৫.৫ শতাংশে উন্নীত করা। জিডিপি বৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল মূলত কৃষি উন্নয়ন ক্ষুদ্র-বৃহৎ শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে। দেশ গড়ার কাজে হাত দিয়ে তিনি প্রথমেই কৃষির ওপরই জোর দিয়েছিলেন। সেচপাম্প, সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষিযন্ত্রপাতি ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও তিনি সাজিয়েছিলেন তার কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে। কৃষকের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল, বিশ্বাসের সম্পর্ক ছিল। এই অকৃত্রিম ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পেছনে দুটো স্পষ্ট কারণ অনুমান করা যায়- এক. তিনি নিজে ছিলেন কৃষক পরিবেষ্টিত পরিবারের সন্তান। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে তার বেড়ে ওঠা ও মানসিক-মানবিক পরিপুষ্টি সাধিত হয়েছিল। কাজেই তিনি কৃষককে কোনোদিন ভুলে যাননি; দুই. গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ ছিল কৃষক। ইতিহাস পাঠে তিনি জেনেছিলেন তার দেশের এ প্রাণভোমরা কৃষক সমাজ যুগে যুগে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত-শোষিত হয়ে আসছে। পলাশী যুদ্ধের পর বাংলার অর্থনৈতিক খাতে যে ধস নামে তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক তথা গ্রামীণ অর্থনীতি। ব্রিটিশদের উপনিবেশের অধীনে পড়ে বাঙালির চিরকালীন পেশা-বৃত্তি সাংঘাতিক হুমকির মুখে পড়ে। অত্যন্ত কৌশলে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলে। তারপর ’৪৭-এ ভারতের স্বাধীনতা পর বাঙালি পাকিস্তানের অংশ হয়ে তথাকথিত স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আশায় বুক বেঁধেছিল বাঙালি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস পাওয়ার প্রত্যাশায়। কিন্তু সেখানেও বাঙালি আবার আরেক উপনিবেশের কবলে পড়ে। বঙ্গবন্ধু এই পর্বের প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রতিবাদী। তার রাজনৈতিক জীবনের কোনো পর্বেই বাংলার কৃষককে ভুলে যাননি। যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখনই কৃষকের স্বার্থটাই আগে দেখেছেন। সে কারণেই ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের মেনিফেস্টোতে, ’৬৬-এর ৬-দফায়, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে কৃষকের মুখের হাসিটাই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে মূল অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। গোটা রাজনৈতিক জীবনে যেখানে যে ভাষণ তিনি দিয়েছেন সেখানেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তিনি কৃষকের কথা বলেছেন, কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমৃদ্ধ অর্থনীতির কথা বলেছেন। রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে, বাংলার মানুষের শোষণ-বঞ্চনা প্রত্যক্ষ করে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলার গণমানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যে স্বপ্ন তিনি মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছিলেন তার সবটাই তিনি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সমৃদ্ধি অর্জনের রক্ষাকবচ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু তার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কারণেই বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরপরই কৃষিতে বাম্পার ফলন হয়েছিল এবং অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছিল। তারই প্রভাবে ১৯৭৪ সালে জিডিপি অর্জিত হয়েছিল ৯.৬ শতাংশ। পরবর্তী ২১ বছরে বাংলাদেশের জিডিপির ধারবাহিকতা বজায় থাকেনি। এ সময়ের মধ্যে জিডিপি কোনো কোনো বছর ২.১৩ শতাংশ (১৯৮২) থেকে ০.৮২ শতাংশ (১৯৮০)-এ নেমেছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি বছরে ৭.১ শতাংশে এবং ৭.২ শতাংশে উঠেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন জিডিপি হারের একটা কাছাকাছি ওঠানামা ছিল- ১৯৯৬-এ ৪.৫২ শতাংশ, ’৯৭-এ ৪.৪৯ শতাংশ, ’৯৮-এ ৫.১৮ শতাংশ, ’৯৯-এ ৪.৬৭ শতাংশ, ২০০০-এ ৫.২৯ শতাংশ, ২০০১-এ ৫.০৮ শতাংশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আরোহণ করেন ২০০৮ সালে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বর্তমান পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং জিডিপির হারও ক্রমবর্ধমান। ২০০৯-এ জিডিপি অর্জিত হয় ৫.০৫ শতাংশ, ২০১০ এ ৫.৫৭ শতাংশ, ’১১ এ ৬.৪৬ শতাংশ, ’১২ এ ৬.৫২ শতাংশ, ’১৩ এ ৬.০১ শতাংশ, ’১৪ এ ৬.০৬ শতাংশ, ’১৫ এ ৬.৫৫ শতাংশ, ’১৬ এ ৭.১১ শতাংশ, ’১৭ এ ৭.২৮ শতাংশ, ’১৮ এ ৭.৮৬ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশ জিডিপি অর্জন করেছে ৮.২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯.৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে বিধ্বস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির সময়েও বাংলাদেশের জিডিপি পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ঊর্ধ্বগামী ছিল। চলতি বছরে কভিড ১৯-এর ধকল সহ্য করে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে সে প্রত্যাশাও অবাস্তব নয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সুচিন্তিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলেই এ অর্জন সম্ভব। প্রসঙ্গক্রমে জিডিপির এ পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হলো এই কারণে যে, গত এক যুগে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে গৃহীত অর্থনৈতিক পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের আজকের এ সমৃদ্ধির মূলমন্ত্রটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই শিখিয়ে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা আজকে যে সাফল্য অর্জন করেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজে যতটা অগ্রসর হয়েছেন তার প্রায় সবটুকু পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে। অর্থনৈতিক নানামাত্রিক বিশ্লেষণে আজকে এ সত্যটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু যদি তার প্রণীত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন তা হলে বাংলাদেশকে ৯.৫ শতাংশ জিডিপি অর্জনের জন্য এতটা সময় অপেক্ষা করতে হতো না। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত যেমনটি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে এবং সেই সঙ্গে গণতন্ত্র-জাতীয়তাবাদ-ধর্মনিরপেক্ষতা-সমাজতন্ত্র সংশ্লিষ্ট চার-দর্শনের ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবণতা যদি বহাল থাকত তাহলে মোট জাতীয় আয়, মাথাপিছু জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের যে পরিবর্তন ঘটতে পারত তা জাতীয়তাবাদের নেতৃত্বের আজকের মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেতে পারত।’

বঙ্গবন্ধুর এ জন্মশতবর্ষে নির্মমভাবে তাকে হারানোর অনিঃশেষ বেদনা মধুর হয়ে ওঠে উন্নয়নের বহুমাত্রিক অবস্থা দেখে যার সবটুকু কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার। তার যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে ’৭৫-এ থমকে যাওয়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে গতিশীল হওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ’৭৩ সালে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, ’৭৪ সালে জিডিপি অর্জন করেছিলেন ৯.৬ শতাংশ আর কন্যা শেখ হাসিনা তার এ জন্মশতবার্ষিকীর বছরে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, কোভিড-১৯ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলায় নন্দিত ৩ রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অন্যতম প্রধান হিসাবে মনোনয়ন, কোভিডের ক্ষতি কাটিয়ে ঈর্ষণীয় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে পিতার গৃহীত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সম্মান রক্ষা করার প্রয়াস গ্রহণ করেছেন, যদিও আচানক এক মরণব্যাধি কোভিড-১৯ সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে তবুও আমরা বাঙালি আশায় বুক বেঁধেছি ... ‘জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’।

লেখক : ব্যাংকার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম