Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ঝালকাঠি-২: আমুতেই ভরসা আ’লীগে ঘাঁটি ফেরত চায় বিএনপি

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল ব্যুরো ও আক্কাস সিকদার, ঝালকাঠি

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঝালকাঠি-২: আমুতেই ভরসা আ’লীগে ঘাঁটি ফেরত চায় বিএনপি

ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-২ আসনটি ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমুর দখলে। ২ লাখ ৭৭ হাজার ভোটার অধ্যুষিত দুটি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে এই নির্বাচনী এলাকাটি বারবার হাতবদল হয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে।

তবে খাদ্য এবং শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে শক্ত জায়গায় নিয়ে গেছেন আমু। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে দলে ভেড়ানো ছাড়াও ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে দল সংগঠিত। ক্ষমতাসীন দলের এই শক্ত অবস্থানের বিপরীতে মনোনয়ন প্রশ্নে বিভক্তি রয়েছে বিএনপিতে। আওয়ামী লীগে আমির হোসেন আমু একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকলেও বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন একাধিক নেতা।

এ আসনে আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং নেই। আমুর নেতৃত্বে একাট্টা সবাই। ১৯৯৬ সালের আগে যেখানে ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কমিটি করার মতো লোক পাওয়া যেত না সেখানে দুই উপজেলাতেই ইউনিয়ন পর্যন্ত রয়েছে দলের শক্ত অবস্থান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে টেকনোক্র্যাট খাদ্যমন্ত্রী হন আমু। তখনই দল গোছানো কাজে হাত দেন। এর আগে বিশেষ করে নব্বইয়ে পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে আসা গাজী আজিজ ফেরদৌস। ১৯৯৬ সালে এমপি হন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব জুলফিকার আলী ভুট্টো। ২০০০ সালে জুলফিকার আলীর মৃত্যু হলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আমির হোসেন আমু। ২০০১ সালের ভোটে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে আসা প্রয়াত জুলফিকার আলী ভুট্টোর স্ত্রী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের ভোটে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আমু। আগামী নির্বাচনে তিনি দলের একক শক্তিশালী প্রার্থী। ২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটে আমু ৯৬ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইলেন ভুট্টো পান ৫৫ হাজার ভোট।

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের দলে একক প্রার্থী আমির হোসেন আমু। তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।’ বছরখানেক আগে থেকেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নৌকায় ভোট চাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে নির্বাচিত হলে আগামীতে আরও কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ‘এ আসনে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করেছে। খেটেখাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের এলিট শ্রেণীও আমুর জন্য কাজ করছেন। আগামী নির্বাচনে ঝালকাঠি-২ আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব।’ আমু প্রশ্নে দল একাট্টা হলেও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আমুর পাশাপাশি বৃহস্পতিবার দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আরও ২ জন। তারা হলেন- যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মিল্লাত হোসেন ও ঝালকাঠি পৌরসভার সাবেক মেয়র আফজাল হোসেন।

মনোনয়ন নিয়ে খানিকটা বেকায়দায় আছে বিএনপি। দলটির প্রায় হাফ ডজন নেতা মনোনয়ন দৌড়ে। দুই উপজেলায় বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও মনোনয়ন প্রশ্নে কিছুটা দুশ্চিন্তায় বিএনপি। এ আসনে বিএনপিতে বারবার দলীয় নেতাদের উপেক্ষা করে ধার কিংবা হাইব্রিডদের মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল বারেককে পাশ কাটিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয় মুসলিম লীগ থেকে সেসময় দলে আসা অ্যাডভোকেট আবদুর রবকে। ১৯৮০ সালের শেষ দিকে ঝালকাঠি ডাকবাংলোয় বিএনপির জেলা কমিটি গঠন নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর এবং ঝালকাঠি পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বেলায়েত আহত হন। পরে সমঝোতার ভিত্তিতে শাহজাহান ওমর জেলা বিএনপির সভাপতি এবং বেলায়েত হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও ‘হাইব্রিডদের’ও মনোনয়ন দেয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে- বিএনপির মধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টা চললেও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিরোধ টিকিয়ে রাখছেন। আওয়ামী লীগে জায়ান্ট প্রার্থীর বিপরীতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির মূল ভরসার জায়গা হচ্ছে দলটির ভোট ব্যাংক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সাবেক এমপি ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিঞা আহম্মেদ কিবরিয়া, কারাবন্দি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু, জেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তফা কামাল মন্টু এবং ঝালকাঠি পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত এমপি গাজী আজিজ ফেরদৌসের ছোট ভাই আবদুল হালিম গাজী। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে ২০ দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান এবং জাগপা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক জামাল উদ্দিন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, ‘এই আসনে বিএনপি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী দল। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে আমাদের প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। তার ওপর মামলা-নির্যাতনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা। এতসব প্রতিরোধের মধ্যেও আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ধানের শীষের সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ নেই। প্রতিটি কর্মসূচিতে যাকে কাছে পেয়েছি তিনি হচ্ছেন সহ-সভাপতি মিঞা আহম্মেদ কিবরিয়া। তারপরও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।’

ইলেন ভুট্টো বলেন, ‘টানা ১০ বছর দাঁড়াতে দেয়া হয়নি আমাদের। যতবার এলাকায় গিয়েছি হামলার ভয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে। দলের কাজে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। আমার গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। জননী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে জেলে। মনোনয়ন চাইব। বাকি সিদ্ধান্ত দেবে দল।’ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের সব প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। মামল- হামলা এখন নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে মাসের পর মাস জেল খেটেছি। বর্তমানে আমিসহ ১৮-২০টি মামলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছি। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’ এ আসন থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সমন্বয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক এমএ কুদ্দুস খান, জাসদের সোহরাব হোসেন ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রশান্ত দাস হরি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগ বিএনপি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম