Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আ’লীগ চায় আসন ধরে রাখতে রাজত্ব পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি

Icon

মো. মাহ্ফুজ আলম মুনী, নাটোর ও মো. সাইফুল ইসলাম, সিংড়া

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মৎস্য ও শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-৩ আসনে নির্বাচনী আমেজ বইছে। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় সরব হয়ে উঠেছেন। তারা তৃণমূলের ভোটারদের তুষ্ট করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। অনেকে গণসংযোগের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবিসংবলিত পোস্টার ঝুলছে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে। ভোটাররাও প্রার্থীদের নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আসনটি দীর্ঘদিন ছিল বিএনপির দখলে। বিশেষ করে নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটিতে জয়লাভ করে বিএনপির প্রার্থীরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম আঘাত করে বিএনপির দুর্গ ভাঙেন আওয়ামী লীগের উদীয়মান নেতা অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। আওয়ামী লীগের অপেক্ষাকৃত তরুণ এ নেতার হাত ধরেই সিংড়ায় আওয়ামী লীগ এখন অনেক বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক নাটোর-৩ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী। তবে বিএনপিও তাদের হারানো রাজত্ব ফিরে পেতে চাইছে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

নাটোর-৩ আসনে ১৯৯১ সালের ভোটে বিজয়ী হন নাটোর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি কাজী গোলাম মোর্শেদ। পরের দফায় ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির প্রয়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ। ’৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে ফের জয়লাভ করেন গোলাম মোর্শেদ। ২০০১ সালের ভোটেও এমপি হন গোলাম মোর্শেদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটের হিসাব পাল্টে যায়। ঝড়োগতিতে এ আসনে আঘাত হেনে বিজয় ছিনিয়ে আনেন আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমেদ পলক। সবশেষ নির্বাচনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও পলক বিজয়ী হন।

দুই টার্ম এমপি থাকার কারণে এ আসনে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। নানা কারণে অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সিংড়ার মাটিতে ২২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী তিন বছরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে প্রায় বিশ হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া চলনবিলের সিংড়া-বারুহাস-তাড়াশ ডুবন্ত সড়কসহ এলাকায় শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে অসংখ্য সেতু, কালভার্ট নির্মাণ ও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গত বন্যায় ১০টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে বন্যার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করা ও পরে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এলাকায় শাসক দলে প্রকাশ্যে কোনো বিরোধ না থাকলেও সিনিয়র নেতাদের অভিযোগ- জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিভিন্ন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এমপি। এ ছাড়া দলীয় কর্মকাণ্ডে সিনিয়রদের না ডাকার অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে পলকের বক্তব্য জানতে চওয়া হলে তিনি বলেন, দু-একজন নেতার সঙ্গে বিরোধ থাকলেও তা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সিংড়ায় আওয়ামী লীগ এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সংগঠিত। পলক ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সিংড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক। গোল-ই আফরোজ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতি শফিকের সুনাম রয়েছে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে।

সিংড়ায় অনেকটা চাপে থাকা বিএনপি তাদের দুর্গ ফিরে পেতে আগামী নির্বাচনকে কাজে লাগাতে চাইছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্য ছয়জন প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন- জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহসভাপতি এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ। তার বাবা কাজী আবুল মসউদ ছিলেন পাকিস্তান পার্লামেন্টের সেক্রেটারি এবং চাচা কাজী আবদুল মজিদ ছিলেন জাতীয় পরিষদের সদস্য। এমপি থাকার সময় কাজী গোলাম মোর্শেদ এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। তিনি ৪০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও করা, বিদ্যুতায়নসহ অবহেলিত চলনবিল এলাকার উন্নয়ন করেছেন। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় তার সুনাম রয়েছে। বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিশ বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট এম ইউসুফ আলী, সিংড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও ২০ দলীয় জোটের সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান সভাপতি ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান মন্টু এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন।

ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শাহীন ২০১৫ সালে সিংড়া উপজেলা উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করার সময় সিংড়া থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। মুক্তির পর থেকেই এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েন। নব্বইয়ের দশকে সিংড়ার মেধাবী তরুণ ছাত্রনেতা এম ইউসুফ আলী জার্মানি থেকে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি চলনবিলের অবহেলিত ও নির্যাতিত জাতীয়তাবাদী জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিতে চান। নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দাউদার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সংগ্রামে একাধিক রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান মন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়াত আবুল কালাম আজাদ ও অধ্যাপক শামীম আল রাজির অবর্তমানে শক্তহাতে সিংড়া বিএনপির হাল ধরব। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শামীম হোসেন বলেন, ছাত্রজীবনে তিনি সিংড়া গোল-ই আফরোজ কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও সাত বছর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করায় এলাকার ভোটারদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ভালো, মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান। তিনি বলেন, দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। আশা করছি মহাজোট বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার তালিকায় রয়েছে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান এবং নাটোর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক বেলাল উজ্জামান। এরই মধ্য তারা মাঠে নেমে পড়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম