পারিবারিক বিরোধ না অফিসের সমস্যা
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের এমডির ঝুলন্ত লাশ
সুইসাইড নোটে মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও সম্পদ বণ্টনের নির্দেশনা আছে
সংগ্রাম সিংহ ও ইয়াহইয়াহ মারুফ, সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. লুৎফুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা আড়াইটায় হরিপুরে গ্যাসের বাংলোয় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশের ক্রাইমসিন ইউনিটের সদস্যরাও। খবরটি সকালে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। চলে নানা গুঞ্জন। আত্মহত্যা না হত্যা- এ নিয়েও নানা সন্দেহের অবতারণা হয়েছে। পুলিশ ও ক্রাইমসিনের সদস্যরা সুরতহালের পর জানান, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিস্তারিত জানা যাবে। লাশের পাশে একটি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গেছে। নোটে মায়ের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা, পরিবারকে দেখে রাখা, সন্তানদের সম্পদের ভাগ দেয়ার ব্যাপারে বেশকিছু অনুরোধ রেখে গেছেন লুৎফুর। নোটের নিচে যে স্বাক্ষর, তা লুৎফুরেরই বলে নিশ্চিত করেছেন ক্রাইমসিনের কর্মকর্তারা।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে ময়মনসিংহের নকলা উপজেলার ফুলপুর থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন লুৎফুরের মা হালিমা খাতুনসহ পরিবারের লোকজন। মোবাইল ফোনে লুৎফুরের ভাতিজা শফিকুল আলম যুগান্তরকে বলেন, পারিবারিক সমস্যা নিয়ে লুৎফুরের চাচা টেনশনে ছিলেন। তবে লুৎফুরের মা হালিমা খাতুনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, চাচা আত্মহত্যা করেছেন- এটি দাদি মানতে নারাজ। তার সন্দেহ অন্যকিছু। তিনি জানান, লুৎফুরের স্ত্রী ও দুই সন্তান ঢাকায় থাকেন। সিলেট গ্যাস অফিসের বাংলোতে একাই থাকতেন লুৎফুর। বিস্তারিত আর কিছু বলতে রাজি হননি। অপর একটি সূত্র জানায়, তাকে গ্যাস চুরির তদন্ত কমিটির প্রধান করার পর থেকে তিনি টেনশনে ছিলেন। তবে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
এদিকে ক্রাইমসিনের একটি সূত্র জানায়, ঝুলন্ত লাশের পাশে থাকা সোফাতেই রাখা ছিল স্ইুসাইড নোটটি। একটি প্যাডের দেড় পৃষ্ঠা জুড়ে নোটটি লেখা ছিল ইংরেজিতে। নিচে ছিল স্বাক্ষর। হাতের লেখা নোট ও স্বাক্ষর অফিসের অন্য ডকুমেন্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। সুইসাইড নোটে লুৎফুর রহমানের ছেলেমেয়েকে ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। দুই বন্ধুকে তার সম্পতির বিষয়ে অবগত করে ছেলেমেয়েকে ভাগ-ভাটোয়ারা করে দেয়ার জন্য বলেছেন। যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. মাহবুবুল আলম বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যাই মনে হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশলী লুৎফরের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানায়। বাংলোয় তিনি একা থাকতেন। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। তিনি ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি পেট্রোবাংলায় কর্মরত ছিলেন।
সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম যুগান্তরকে জানান, সকাল ৭টায় দু’জন মেহমানকে (পেট্রোবাংলার জিএম আনিস ফয়সাল ও ম্যানেজার আবুল এহসান) বিদায় দিয়ে ঘুমাতে যান। এ সময় বাবুর্চি এসে নাশতা দিতে বললেও লুৎফুর বলেন, পরে খাব। সকাল ৯টার দিকে বাসায় যান লুৎফুরের গাড়ির ড্রাইভার। বারবার দরজায় নক করার পর কোনো সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি তিনি আরেকজন কর্মকর্তাকে জানান। ওই কর্মকর্তা এসে জানালা খুলে দেখতে পান লুৎফুরের লাশ ঝুলছে। পরে দরজা ভেঙে তারা ভেতরে ঢোকেন এবং পুলিশে খবর দেন।
প্রথম জানাজা : ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাত ৮টায় সিলেট নগরীর মানিক পীরের মাজারে লুৎফুর রহমানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে লাশ নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হন তার ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর শরাফত ও ছেলে গালিব ইয়াসার রহমান। শরাফত জানান, ঢাকায় পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে আরেকটি জানাজা শেষে ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে। জানাজায় ছিলেন- জালালাবাদ গ্যাসের পরিচালক প্রকৌশলী এহসানুল হক পাটোয়ারি, শাহীনুর ইসলাম, শোয়েব আহমদ, মঞ্জুর আহমদ প্রমুখ।
