Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নওগাঁর সাউথইস্ট ব্যাংক

১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দম্পতি ভারতে

Icon

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা থেকে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এক দম্পতি ভারতে পালিয়ে গেছেন। এ নিয়ে শাখাপ্রধান ৯ অক্টোবর নওগাঁ সদর থানায় অভিযোগ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। এরা হলেন- জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল আগরওয়ালা (৫৬) ও তার স্ত্রী মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের স্বত্বাধিকারী দীপা আগরওয়ালা (৪৮)। তারা নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ মোড়ের বাসিন্দা।

থানায় করা অভিযোগে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ঋণ হিসেবে গোপালকে ৮৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ও দীপাকে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার টাকা (মোট ১১৪ কোটি ৯৪ লাখ ২ হাজার টাকা) দেয়া হয়। কিন্তু তারা নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের মৌখিক আশ্বাস ও ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করে তাদের বারবার সময় দিয়ে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ তারা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আত্মগোপন করে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওই দম্পতি দেশের বাইরে (সম্ভাব্য ভারত) অবস্থান করছে। জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জগন্নাথনগর এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তরপাশে অবস্থিত। ১৫ অক্টোবর সেখানে সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখা সম্পত্তির তফশিল উল্লেখ করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। এতে বলা হয়েছে- মোট জমি ৪৩৪ শতক (১৩ দশমিক ১৫১ বিঘা)।

১৪ অক্টোবর তার বাসায় গিয়ে দেখা গেছে তালা লাগানো। ১৬ অক্টোবর জেএন ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা গেছে, মূল গেটটি তালাবদ্ধ। তবে পকেট গেট খোলা। নিরাপত্তাকর্মীরা (ব্যাংকের পক্ষে চারজন ও ওরেঞ্জ নামে একটি সিকিউরিটি কোস্পানির ১০ জন দিনে-রাতে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন) পাহারায় রয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রির সব কার্যক্রম বন্ধ। যে যন্ত্রপাতি রয়েছে, তাতে মরিচা ধরতে শুরু করেছে, মাকড়সা জাল বাঁধছে। গুদাম ঘরগুলো ফাঁকা।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তিন কর্মচারী দেখভালের জন্য রয়েছেন। তারা জানান, প্রতিষ্ঠানে ৪৫ জন কর্মচারী ছিলেন। পর্যায়ক্রমে তাদের ছাঁটাই করা হয়। এখন যে তিনজন রয়েছেন দুই মাস ধরে বেতন পাননি তারা। তিন মাস থেকে ইন্ডাস্ট্রির সব কার্যক্রম বন্ধ।

ইন্ডাস্ট্রি এলাকার ভেতরে পূর্বদিকে প্রায় ১ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ‘মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিং’। এর ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে- এটি আদতে একটি গুদাম। মেঝেতে কয়েকটি পলিথিন পড়ে পড়েছে। যন্ত্রপাতি বা সামগ্রী বলতে কিছু নেই। অথচ এর স্বত্বাধিকারী দীপাই নিয়েছেন প্রায় ৩১ কোটি টাকা ঋণ। কর্মচারীরা জানিয়েছেন, মূলত এ গুদামে জেএন ইন্ডাস্ট্রিজের ধান রাখা হতো। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকার জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা শতাংশ। সেই হিসাবে ওই জমির মূল্য আনুমানিক ১৩ কোটি টাকা। স্থাপনা ও যে যন্ত্রপাতি রয়েছে তার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা হবে। তবে মরিচা ধরে নষ্টপ্রায় এসব যন্ত্রপাতিসহ পুরো ইন্ডাস্টি (জমি, মালামাল ও স্থাপনা) বিক্রি করে ২৫-৩০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে।

ঋণ প্রসঙ্গে কর্মচারী ও স্থানীয়রা প্রশ্ন তোলেন- কী দেখে এত টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে জানা নেই। তাদের মতে, নিশ্চয়ই এর সঙ্গে ব্যাংক কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। জেএন ইন্ডাস্ট্রিজের এক কর্মচারী বলেন, এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ব্যাংক। দুই মাস থেকে আমরা বেতন পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আমার মতো আর ৪৫ জন বেতন না পেয়ে কান্নাকাটি করে বাড়ি চলে গেছেন। আর শুভ ফিডের নামে তো কোনো কার্যক্রমই নেই, তাকে (দীপা) কীভাবে টাকা দেয়া হল।

বিমান নামে এক কর্মচারী বলেন, ১২ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। তিন মাস আগে থেকে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে মালিক এখানে আর আসেন না। পরে জানলাম মালিক দেশের বাইরে চলে গেছেন। ব্যাংকের লোকজন এসে এখন দখল নিয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা বলেন, তাদের যে পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়েছে, তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যোগসাজশ করে অনেক বেশি টাকা তাদের ঋণ দিয়েছে। সুযোগ নিয়েছে দম্পতি। আমরা চাই দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি আমলে নিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখার প্রধান কামারুজ্জামান কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি ব্যাংকের প্রধান শাখায় মিডিয়া সেলে যোগাযোগ করতে বলেন। সেখানে যোগাযোগ করলে বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শাখা (নওগাঁ শাখা) বলতে পারবে। সেখান থেকেই তারা তথ্য সরবরাহ করবেন।

নওগাঁ সদর থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম