Logo
Logo
×

শেষ পাতা

যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উলিপুর পৌরসভার মেয়র: নাগরিক সেবা নিশ্চিতই আমার অগ্রাধিকার

Icon

উত্তম কুমার সেন গুপ্ত লক্ষ্মণ, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উলিপুর পৌরসভার মেয়র: নাগরিক সেবা নিশ্চিতই আমার অগ্রাধিকার

উলিপুর পৌর মেয়র তারিক আবুল আলা। ফাইল ছবি

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালের ১০ অক্টোবর। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ২৭.৩৪ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। ভোটার ৩৬ হাজার ৬২ জন।

এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫শ’ জন। মহিলা ভোটার ১৮ হাজার ৫৬২ জন। এটি একটি ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তারিক আবুল আলা। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আ’লীগের বিদ্রোহী) সাজেদুর রহমান তালুকদারকে পরাজিত করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালনের সাড়ে ৩ বছরে তিনি উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন।

তারপরও রয়ে গেছে অনেক সমস্যা। শহরের প্রধান সমস্যা যানজট ও জলাবদ্ধতা। এ সমস্যার সমাধান তিনি করতে পারেননি। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। এসব কারণে পৌরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকীর অভিযোগ, ‘পৌরবাসী কর দিয়েও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। রাস্তায় পর্যাপ্ত বাতি নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই খোদ পৌরসভা কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মাছের আড়তের পানি ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে নাকে রুমাল দিয়ে ক্রেতাদের কেনাকাটা করতে হয়।’

এসব অভিযোগের জবাব দিতে ও নিজের সফলতার কথা জানাতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন পৌর মেয়র তারিক আবুল আলা। তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিক পৌরশহর গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার ৮০ ভাগ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি। উলিপুর সদর মৌজার পোস্টঅফিস মোড় হতে গুণাইগাছ ব্রিজ পর্যন্ত ফুটপাত ও রেলিং নির্মাণ করেছি। ১৬.৪৩ কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ৫তলা বিশিষ্ট সুপার মার্কেট নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার করেছি। জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য তিন একর জমি ক্রয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তবে পরিবেশ অধিদফতরের (রংপুর) ছাড়পত্র না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’

মেয়র বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ও অর্থের অভাবে বাকি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। প্রতি বছর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয় তা দিয়ে খুব সামান্যই উন্নয়ন করা সম্ভব। সরকার উন্নয়ন বরাদ্দ ও এডিপি থেকে থোক ও বিশেষ বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ সহজ হয়।’

তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ভরাট হয়ে যাওয়া বুড়ি তিস্তা নদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে পৌর এলাকাসহ উলিপুর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়েছেন। নদী খননের ফলে এক ফসলি জমি দুই ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।’ মেয়র বলেন, ‘শহরের গুণাইগাছ মোড়, কাচারিবাজার, বসা মিঞার মোড় ও ওকে হোটেলের সামনে নতুন ড্রেন নির্মাণ করেছি। এছাড়া শহরের প্রধান ড্রেনগুলো পরিষ্কার করেছি। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে শহরে আগের মতো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না।’

তিনি বলেন, ‘পৌরসভার সদর মৌজায় রেলিংসহ ১.৫ কিলোমিটার ফুটপাত প্রায় নির্মাণ করা হয়েছে। যা পৌরসভা সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। খাস জমি দখলমুক্ত করার কাজ সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সহযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই খাসজমি দখলমুক্ত হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, ‘উলিপুর পৌর এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই নেই বললেই চলে। তবে কিছু জায়গায় মাদক বেচাকেনা হয় বলে অভিযোগ পাচ্ছি। পুলিশ, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মাদক বিক্রি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার পৌরসভা শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত। পৌরসভাকে দুর্নীতি মুক্ত রাখতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। সালিশ কমিটির মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘পৌরকর আদায়ের অর্থ দিয়ে শহরের সড়কগুলোতে বাতি স্থাপন করেছি। মশক নিধনে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারসহ ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাধ্য প্রতিবছর খেলার উপকরণ সরবরাহ করে থাকি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। পাশাপাশি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবা নিশ্চিত করতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মী দিয়ে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে সহযোগিতা করেছি।’ পৌরসভার মান উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে পৌর কর আদায় ও ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যানজট নিরসনে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেছি।’

মেয়র বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন দলীয়ভাবে না হওয়াই ভালো। নির্বাচন দলীয় ভাবে হলে তৃণমূল পর্যায়ে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। এতে করে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।’

উলিপুর পৌরসভার মেয়র

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম