যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার

মডেল পৌরসভা গড়াই আমার লক্ষ্য: চারঘাট পৌরসভার মেয়র

 মিজানুর রহমান, চারঘাট (রাজশাহী) 
০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
মডেল পৌরসভা গড়াই আমার লক্ষ্য: চারঘাট পৌরসভার মেয়র
চারঘাট পৌরসভার মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিকুল। ছবি-যুগান্তর

রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভার যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালে ১ জুন। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ১৮.৭৩ বর্গকিলোমিটার। এখানে ৪২ হাজার ৪০৬ জন লোকের বাস। মোট ভোটার ২৮ হাজার ৭৮৯ জন।

এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৭০৮ জন ও নারী ভোটার ১৪ হাজার ৮১ জন। ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর পৌরসভাটি ক-শ্রেণিতে উন্নীত হয়। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকিরুল ইসলাম বিকুল।

২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নারগিছ খাতুনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালনের সাড়ে তিন বছরে তিনি উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন। তারপরও রয়ে গেছে নানা সমস্যা।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুস সালামের অভিযোগ- চারঘাট বাজারে আধুনিক ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও বৃষ্টি হলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে। এ কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পৌরবাসীকে।

৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, শহরের রাস্তাগুলোতে পর্যাপ্ত বাতি নেই। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নেই। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। শিশুদের জন্য পার্ক নেই। পৌর পাঠাগার নেই। শহরে যানজট সমস্যা রয়েছে। আছে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য।

৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বলেন, পৌরসভার সবচেয়ে বড় দুটি হাট হল চারঘাট ও সারদা। এ দুটি হাটে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। চরম বেকায়দার মধ্য দিয়ে দুই হাটের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়।

এসব অভিযোগের জবাব এবং পৌরসভা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানাতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিকুল। তিনি বলেন, পৌরবাসীর প্রাণের দাবি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে গেছে। তার পরও সাড়ে ৮ কোটি টাকার তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব ওয়ার্ডে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। মেয়র বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম নির্বাচিত হলে ভ্যান-রিকশা থেকে চাঁদা ওঠানো বন্ধ করব। এ প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি। পৌর এলাকায় আধুনিক বাতির ব্যবস্থা করেছি। যেসব এলাকায় এখনও বাতি পৌঁছায়নি শিগগির ওইসব এলাকায় বাতির ব্যবস্থা করব। পৌর এলাকায় বিদুতের কোনো ঘাটতি নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসের লোকজন মাইকিং করেও লোক পাচ্ছেন না। চারঘাট এখন শতভাগ বিদ্যুতায়িত পৌরসভা।

তিনি বলেন, খেলার মাঠ, রিকশা-অটোরিকশা স্ট্যান্ড নেই। শিশুদের জন্য খেলার মাঠ নেই। শহরে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। এসব সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধান করব। এ ছাড়া ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

বিকুল বলেন, পৌরসভা গঠনের ২০ বছরে প্রধান প্রধান সমস্যার স্থায়ী সমাধান কোনো মেয়র করতে পারেননি। আমি দায়িত্ব পালনের পর থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতাসহ অনেক সমস্যাই থাকবে না। হাটবাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রত সময়ের মধ্যে হাটবাজারের উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।

মেয়র বলেন, চারঘাট-বাঘার সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের চেষ্টায় এ পৌরসভাটি ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। তার সহযোগিতায় চারঘাট পৌরবাসী আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২২ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। মেয়াদ শেষের আগেই পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রূপ দেয়া আমার লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্যেই উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি। মাদক প্রসঙ্গে বিকুল বলেন, আগের তুলনায় মাদক অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে সভা-সেমিনার করে যাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার পৌরসভা দুর্নীতিমুক্ত। উন্নয়ন কাজ ও অন্যান্য সেবা পেতে কাউকে অর্থ খরচ করতে হয় না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি একটি দলের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। সামনের নির্বাচনে দল অংশগ্রহণ করলে এবং দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেব।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন