Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাড়ে ৪ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি: গতিহীন ঢাকা উত্তর দক্ষিণ যুবলীগ

দুই অংশের শীর্ষ চার পদের তিনটিতেই ভারপ্রাপ্ত * শিগগিরই সম্মেলন হওয়ার কার্যকর উদ্যোগ নেই

Icon

হাসিবুল হাসান

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাড়ে ৪ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি: গতিহীন ঢাকা উত্তর দক্ষিণ যুবলীগ

গতিহীন হয়ে পড়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সার্বিক কার্যক্রম। প্রায় সাড়ে বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের এই দুই শাখা। শুধু তাই নয়, বর্তমান কমিটির দুটির শীর্ষ চার পদের তিনটি চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। রেওয়াজ অনুযায়ী জাতীয় কংগ্রেসের আগেই উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু কংগ্রেস শেষ হওয়ার আড়াই মাস পরেও এ সম্মেলন হওয়ার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।

তবে উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সংশ্লিষ্টদের দাবি- ক্যাসিনো ক্যালেঙ্কারিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও নগরের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার ফেঁসে যাওয়ায় সবকিছুই ঝুলে গেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের কারণে পিছিয়ে যায় উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন। সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের কারণে আরেক দফা পেছানো হয়

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বুধবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, আমরা মহানগরের সম্মেলন নিয়ে এখন কিছু ভাবছি না। আমরা আপাতত কেন্দ্রীয় যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কাজ করছি। তাহলে কি শিগগিরই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুব তাড়াতাড়ি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু একেবারে যে খুব ‘লং টাইম (দীর্ঘ সময়)’ পরে হবে তাও নয়।

২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের আগে সে বছরের ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ এবং ৮ জুলাই উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন উত্তরে মাইনুল হোসেন খান নিখিল সভাপতি ও ইসমাইল হোসেন সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর গত বছরের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এবার জাতীয় কংগ্রেসের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।

এদিকে বর্তমানে যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং উত্তরের সভাপতি পদ চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। ২০১৩ সালে মিল্কী হত্যার পর পলাতক থাকেন ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ। পরে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান এইচএম রেজাউল করিম রেজা। ক্যাসিনোকাণ্ডে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হলে মাইনউদ্দিন রানাকে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। অন্যদিকে উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল কেন্দ্রীয় যুবলীগে পদ পাওয়ার পরে জাকির হোসেন বাবুল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান।

সম্মেলনের বিষয়ে জানতে উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বুধবার বিকেলে যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে আমরা এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। নির্দেশনা পেলেই ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সম্মেলন আয়োজন করা হবে।

দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনউদ্দিন রানা যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ বিষয়ে আমরা অবগত নই। তবে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন শুধু রুটিন ওয়ার্কগুলো করি। কেন্দ্র থেকে যে কাজগুলো আমাদের করতে বলে আমরা সেগুলোই শুধু করি।

এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, শুদ্ধি অভিযান ও শীর্ষ পদে ভারপ্রাপ্তের কারণে নগর যুবলীগের সাংগঠনিক কাজে ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণের সাংগঠনিক কার্যক্রম এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছে। রুটিন কার্যক্রমের বাইরে তারা কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাওয়া- সংগঠনকে গতিশীল করতে এবং ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে উত্তর-দক্ষিণে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে ক্যাসিনো, মাদক ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে সম্পৃক্ত বিতর্কিত কেউ যাতে সংগঠনের কমিটিতে ঠাঁই না পান- সে জন্যও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এদিকে দিনক্ষণ ঠিক না হলেও সম্ভাব্য সম্মেলনের ডামাডোলে মহানগর যুবলীগের নতুন নেতৃত্বের পদপ্রত্যাশীরাও নিজেকে উপস্থাপন করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। উত্তর-দক্ষিণের যারা পদপ্রত্যাশী তারা সংগঠনটিকে আমূল পরিবর্তনের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। অনেকে নিজের পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমে জানাচ্ছেন। যুবলীগের পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, যুবলীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় এবং সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে সৎ, শিক্ষিত, ত্যাগী ও ছাত্রলীগ করে আসা সাবেক নেতাদের নতুন নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতাদের মতে, ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে যুবলীগের বিভিন্ন নেতার কর্মকাণ্ড বেশ বিব্রত করেছে আওয়ামী লীগকে। ফলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দায়িত্বপ্রাপ্তদের দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনে কিছু সময় দেরি হলেও সেখানে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের জায়গা দেয়া হবে বলে জানান তারা।

যুবলীগ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম