অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০
অন্যবারের তুলনায় এবার বেস্টসেলার বই কম
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অমর একুশে গ্রন্থমেলার একুশতম দিন পার করেছে। ইতিমধ্যে মেলায় বেশি পরিমাণে বিক্রীত বইগুলো অনেকটাই দৃশ্যমান। যদিও এবার বেশি বিক্রীত বা বেস্টসেলার বই খুব একটা বেশি নয়। অন্যবারের তুলনায় একটু কমই বলা যায়। বেস্টসেলার বইয়ের মধ্যে উপন্যাসই বেশি।
বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, এবারের বইমেলায় বেস্টসেলার বইয়ের মধ্যে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধুর লেখা তৃতীয় এ বইটির প্রথম মুদ্রণের ২০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে।
এবারের মেলায় তাম্রলিপি থেকে প্রকাশ হওয়া জাফর ইকবালের লেখা ‘প্রজেক্ট আকাশলীন’ অন্যতম বেস্টসেলার বই। বেশি বিক্রীত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আনিসুল হকের উপন্যাস ‘এখানে থেমো না’।
বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা। হেলাল হাফিজের কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ এখনও চলছে বেশ। বইটি প্রকাশ করেছে দিব্যপ্রকাশ। তরুণ লেখক জয়দীপ দে’র নতুন উপন্যাস ‘কাসিদ’ মেলাতেই দ্বিতীয় সংস্করণ এসেছে। বইটি প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স।
কবি মারজুক রাসেলের ‘দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষী চুক্তিনামা স্বাক্ষর’ রয়েছে বেস্টসেলারে। বই প্রকাশ করেছে বায়ান্ন। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশ হওয়া সাদাত হোসাইনের নতুন দুই উপন্যাস ‘মেঘেদের দিন’ ও ‘মরণোত্তম’ উপন্যাস দুটিও বেস্টাসেলারে রয়েছে। পাঞ্জেরী থেকে আসা ধ্রুব এষের উপন্যাস ‘পরেশের বউ’ নজর কেড়েছে পাঠকের।
বাতিঘর থেকে প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমদের লেখা রাজনীতিবিষয়ক বই ‘বেলা-বেলা : বাংলাদেশ ১৯৭২-১৯৭৫’ চলছে ভালো। তাম্রলিপি থেকে বেরোনো আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিকের আত্মোন্নয়নমূলক গ্রন্থ ‘কমিউনিকেশন হ্যাকস’র চতুর্থ সংস্করণ চলছে। কাকলী থেকে প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ব্ল্যাককোল রহস্য’ নামের বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের পঞ্চম সংস্করণ চলছে।
অনিন্দ্য থেকে আসা মোশতাক আহমেদের ‘প্যারাসাইকোলজি জোছনার ছায়া’ গ্রন্থের চতুর্থ সংস্করণ বেরিয়েছে। পাঞ্জেরী থেকে আসা ধ্রুব এষের উপন্যাস ‘পরেশের বউ’ চলছে বেশ।
পুরস্কার প্রদান : সকাল ১১টায় অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) অপরেশ কুমার ব্যানার্জি, অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মূলমঞ্চের আয়োজন : বিকালে অনুষ্ঠিত হয় শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন ড. সোনিয়া নিশাত আমিন, গোলাম কুদ্দুছ ও মামুন সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ। আলোচকরা বলেন, বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে আজীবন আপসহীন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র উচ্চারিত হয়েছিল।
শিল্প ও সংস্কৃতির নানা উপাদান সমৃদ্ধ এই অসাধারণ ভাষণ শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের যে কোনো ভাষার মানুষকে রোমাঞ্চিত করে। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু তার সামগ্রিক রাজনৈতিক দর্শনকে তুলে ধরেন। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বজ কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় হাজার বছরের নিষ্পেষণ ও বঞ্চনার শিকার বাঙালি জাতির প্রতিবাদী উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ জাতি গঠনের কাজে চিরদিন আমাদের উজ্জীবিত করে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম এক রাষ্ট্রদর্শন বলা যায়। বাঙালির ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ ভাষণ নিয়ে নানামাত্রিক বিশ্লেষণ হয়েছে এবং হচ্ছে।
এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধগুলো বঙ্গবন্ধু ও তার রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করবে। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, মুহাম্মদ সামাদ, মাশুক চৌধুরী, ফরিদ কবির, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, পিয়াস মজিদ ও আলতাফ শাহনেওয়াজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’র শিল্পীদের পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন সমীর বাউল, দেলোয়ার হোসেন বয়াতী, সুধীর মণ্ডল, শ্যামল কুমার পাল, রাতুল শাহ, আঁখি আলম, বিমল বাউল।
নতুন বই : শনিবারে নতুন বই এসেছে ২৪২টি। এর মধ্যে অন্যধারা এনেছে সারফুদ্দিন আহমেদ অনূদিত নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফ জাইয়ের ‘মালালা’স ম্যাজিক পেন্সিল’, পারিজাত প্রকাশনী এনেছে মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘গণহত্যা ১৯৭১’, যুক্ত এনেছে নিশাত জাহান রানার ‘আলোর নগর ছায়ার নগর’, মিজান পাবলিশার্স এনেছে নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বনির্বাচিত ১১৫ কবিতা’, রাত্রি প্রকাশনী এনেছে ‘স্বকৃত নোমানের ‘মুসলিম মনন ও দর্শন অগ্রনায়কেরা’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে মোজাফফর হোসেনের ‘তিমিরযাত্রা’, অন্বয় প্রকাশনী এনেছে নির্মলেন্দু গুণের ‘শিরোনামহীন কবিতা’, বিভাস এনেছে নির্মলেন্দু গুণের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫’, মাটিগন্ধা এনেছে আহমদ রফিকের ‘রাষ্ট্রভাষার লড়াই’, বাংলা একাডেমি এনেছে শামসুজ্জামান খানের ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
লেখক বলছি : শনিবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সলিমুল্লাহ খান, আহমাদ মোস্তফা কামাল, সাখাওয়াত টিপু ও চঞ্চল আশরাফ।
