Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০: শেষ শুক্রবারে জনস্রোত

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০: শেষ শুক্রবারে জনস্রোত

যেদিকে চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ। কেউ এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ বন্ধুবান্ধব, কেউ একলা। তবে হাতে হাতে শুধু বই আর বই। যারাই এসেছেন কোনো না কোনো বই কিনেছেন। প্রকাশকদের মুখে হাসি, ছোট বা বড় কোনো প্রকাশনার স্টল বা প্যাভিলিয়নেই বিক্রয়কর্মীদের নেই এতটুকু ফুরসত। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শেষ শুক্রবারের চিত্র ছিল এমনই। আজ বইমেলার শেষ দিন। মেলায় এদিনও থাকবে মানুষের ঢল।

মেলার শেষ শুক্রবার দ্বার খুলে যায় সকাল ১১টায়। সকাল ছিল শিশুপ্রহর। বেলা একটা পর্যন্ত শিশুরা শিশুচত্বরে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছে। কিনেছে বই। তবে সেই সময় অন্যান্য বয়সী পাঠকদের সমাগমে মুখর ছিল মেলা। দুপুরের সময়টা বাদ দিয়ে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা মেলার মানুষের বন্যা বয়ে যায়।

বিকেলে ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নের সামনে গিয়ে দেখা যায় পাঠকরা যে যার পছন্দের বই কিনছেন। প্যাভিলিয়নের তিন দিকে শুধু পাঠক আর পাঠক। অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে বিক্রয়কর্মীদের কোনো বিশ্রাম ছিল না। ক্রেতাদের হাতে বই তুলে দিতে সবাই ব্যস্ত। অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এখন যারা আসছেন তাদের সবাই আসলে বইয়ের ক্রেতা। অনেকে লিস্ট ধরে ধরেও বই কিনছেন।

শুক্রবার সকালে মেলার গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধা আলী ইদরীস-এর বই ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলি’র মোড়ক উন্মোচন হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাষা গবেষক ড. সেলু বাসিত, খেলাঘরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ, কবি ও সাংবাদিক শূচি সৈয়দ, প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, লেখক আলী ইদরীস ও প্রকাশক গোলাম কিবরিয়া।

মূলমঞ্চের আয়োজন : বিকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আবুল কাসেম রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন : জাতীয়করণনীতি এবং প্রথম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন অসীম সাহা। আলোচনায় অংশ নেন কাজী রোজী, এমএম আকাশ এবং নাসিমা আনিস। সভাপতিত্ব করেন আতিউর রহমান।

প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু কী রাজনীতি, কী অর্থনীতি, কী বিশ্বব্যবস্থা- সর্বক্ষেত্রেই তার বিস্ময়কর দক্ষতা আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে তিনি যে দূরদর্শী অর্থনৈতিক পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করেছিলেন, তাকে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ শুধু স্বাগত জানাননি, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়কর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলো কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তাকেও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৭২-১৯৭৫ সালের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু কতটা উচ্চতায় তুলে এনেছিলেন এবং তিনি বেঁচে থাকলে আরও কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতেন, তারই একটি পূর্ণাঙ্গ আকরগ্রন্থ আবুল কাসেমের বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শন।

আলোচকবৃন্দ বলেন, নিুবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সমাজব্যবস্থায় আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনাই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শনের মূলনীতি। বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন দেশে কৃষি ও শিল্পবিপ্লব ঘটিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা সম্ভব। এ কারণে তার পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ, বিশ্লেষণধর্মী এ গ্রন্থ অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ।

গ্রন্থের লেখক আবুল কাসেম বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে উত্থিত উন্নয়নের দর্শনই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন। এ মহান রাজনীতিবিদ কেবল রাষ্ট্রদর্শনই নয়, অর্থনীতি সম্পর্কেও গভীর জ্ঞান রাখতেন। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন সে বিষয়গুলো এ গ্রন্থে তুলে আনার চেষ্টা করেছি।

সভাপতির বক্তব্যে আতিউর রহমান বলেন, রাজনীতির মহান কবি বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল কথাই ছিল মানুষ ও মানুষের কল্যাণ। তিনি যেমন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন তেমনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে অর্থনৈতিক নীতিও নির্ধারণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে এ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি রুবী রহমান, কামাল চৌধুরী, নূহ-উল-আলম লেনিন এবং হারিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফরিদা পারভীন, সাইদুর রহমান বয়াতি, লীনা তাপসী খান, অদিতি মহসিন এবং সেলিম চৌধুরী।

শুক্রবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কামরুল হাসান, জাহিদ রেজা নূর, অদিতি ফাল্গুনী এবং মাসুদ পথিক।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৪১টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে আবুল কাসেম রচিত বঙ্গবন্ধুবিষয়ক বই ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন জাতীয়করণনীতি এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’, ভাষাচিত্র প্রকাশ করেছে মাসুদ সেজানের কবিতার বই ‘দাঁড়াও সভ্যতা’, দ্যু প্রকাশন এনেছে মনি হায়দারের উপন্যাস ‘চলুন, মানুষের কারখানায়’, পুঁথিলিয়ন এনেছে বিপ্রদাশ বড়ুয়ার শিশুতোষ বই ‘জাদুর বাঁশি’, হরিৎপত্র এনেছে সেলিনা হোসেনের গল্পগ্রন্থ ‘খোল করতাল’, চন্দ্রবিন্দু এনেছে মাহবুব ময়ূখ রিশাদের উপন্যাস ‘আরিমাতানো’, একই প্রকাশনা থেকে এসেছে হরিশংকর জলদাসের গল্পগ্রন্থ ‘আহব ইদানীং’, বাংলানামা প্রকাশ করেছে মোহাইমেন মানির ছড়াগ্রন্থ ‘স্বপ্ন পেখম মেলে’, ক্রিয়েটিভ ঢাকা প্রকাশ করেছে তানভীর মোকাম্মেলের ‘নদীর নাম মধুমতি’, ভাষাচিত্র থেকে প্রকাশ হয়েছে কমল কর্নেলের দু’টি উপন্যাস ‘স্বপ্ন ছোঁয়া ভালোবাসা’ ও ‘স্বপ্নের মায়াজাল’। এ ছাড়া পরিলেখ প্রকাশনী এনেছে ড. মীর মো. নুরুল ইসলামের ‘চলনবিল অঞ্চলের লোকমেলা ও লোক উৎসব’।

বইমেলা-২০২০

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম