Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক

বন্দরে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় হ্রাসসহ ৮ দফা সুপারিশ

বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দ্রুত পরিকল্পনা দাখিলের নির্দেশ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্দরে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় হ্রাসসহ ৮ দফা সুপারিশ

বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য চার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের এবং আমদানি বাণিজ্য প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের। ফাইল ছবি

ব্যবসা-বাণিজ্য প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে আমদানি-রফতানির কার্যক্রম নিষ্পত্তিতে সময় ও ব্যয় হ্রাসসহ ৮ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন’ সম্পর্কিত বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাস্টমস ও বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের (ডকুমেন্ট) সংখ্যা কমিয়ে আনা। পাশাপাশি সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন কোয়ারেন্টাইনের জন্য ডকুমেন্ট আবশ্যক। কিন্তু বর্তমান দেশের প্রযুক্তির উন্নতির প্রেক্ষিতে এ ক্ষেত্রেও বিদ্যমান দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। প্রযুক্তিনির্ভর হতে পারলে কম সময়ের মধ্যে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হাতেম যুগান্তরকে বলেন, ডুয়িং বিজনেস সহজ করতে সরকার অনেক আন্তরিক। কিন্তু এটি যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা আন্তরিক নন। এটি আদৌ সহজ করা হবে কি না তা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে সন্দেহ রয়েছে। কারণ এ নিয়ে আগেও বহু কথা হয়েছে। কিন্তু ডুয়িং বিজনেস দিন দিন আরও কঠিন হচ্ছে। তবে এ প্রক্রিয়া সহজ করতে পারলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

বছরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য চার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের এবং আমদানি বাণিজ্য প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের।

বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। এ অবস্থান কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। এজন্য ইজি অব ডুয়িং বিজনেসের ট্রেডিং অ্যাক্রোর্স বর্ডার সূচকে কাস্টমস ও বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বন্দরে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে বর্তমানে ১৬৮ ঘণ্টা লাগে। এটি ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে ওই কমিটি। বর্তমানে রফতানিতে ৪০৮ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে কমিটি ২০০ ডলার বেঁধে দিয়েছে। রফতানি কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে ২০৮ ডলার ব্যয় কমানো হয়েছে। অন্যসব সূচকের মধ্যে বন্দরে রফতানির অনুকূলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাইয়ে ১৪৭ ঘণ্টা নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে এটি ২ রিয়েল টাইমে শেষ করতে বলা হয় এবং একই ক্ষেত্রে ২২৫ ডলার ব্যয় কমিয়ে ১০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যয় ও সময় কমিয়ে আনার জন্য লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করতে বন্দরে ২১৬ ঘণ্টা লাগে এবং ৯০০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টা ও ১৮০ থেকে ২১০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের যাচাই-বাছাইয়ে সময় ১৪৪ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ২৪ ঘণ্টা এবং ব্যয় ৩৭০ ডলার থেকে কমিয়ে ৫০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমিটির অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিল অব এন্ট্রি এবং রফতানির প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের সংখ্যা কমিয়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা, আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে সব পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু, বন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় স্ক্যানার স্থাপন ও আইআরসি-ইআরসি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নবায়ন করা। বর্তমানে আইআরসি-ইআরসি প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। দেশের সীমানায় জাহাজ প্রবেশের আগে অগ্রিম বিল অব এন্ট্রি দাখিলের ব্যবস্থার জন্য এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করার সুপারিশও করেছে কমিটি।

বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডিমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, রফতানি পণ্য জাহাজীকরণের সময় সিঙ্গাপুরের মতো বাংলাদেশে করতে হলে বর্তমান জাহাজ ছাড়ার কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা আগে বন্দর কর্তৃপক্ষের এক্সপোর্ট জেনারেল মেনিফেস্ট (ইজিএম) নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর অন্যতম দক্ষ বন্দর সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাঁচটি ডকুমেন্টের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে আমাদের আমদানি-রফতানিও পাঁচটি দলিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ডকুমেন্টের সংখ্যা কমিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে ১৪টি ডকুমেন্ট দাখিল করতে হয়। এ সংখ্যা কমিয়ে সাতটি করার কাজ শুরু হয়েছে। এনবিআর সূত্র জানায়, ডকুমেন্টের সংখ্যা কমিয়ে আনার কাজ সংস্থাটিও শুরু করেছে। বিশেষ করে আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট ও কান্ট্রি অব অরজিনের মতো তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এসআরও পুনরায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বন্দর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম