Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আক্রান্ত ৯০ হাজার ৯২৫ জন, মৃত্যু ২৯৪৩ জনের

নতুন করোনাভাইরাস: সন্দেহভাজন ৫ জন আইসোলেশনে

আতঙ্কের কিছু নেই, আমরা প্রস্তুত : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন করোনাভাইরাস: সন্দেহভাজন ৫ জন আইসোলেশনে

দেশে এখনও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে যে কোনো সময় দেশে রোগী শনাক্ত হতে পারে। তাতেও আতঙ্কের কিছু নেই। এ রোগ মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেছেন। নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অংশ হিসেবে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ নিয়ে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচজনকে ‘আইসোলেশনে’ রাখা হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন। এখনও বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। এদিকে চীনের মূল ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ১৫১ এবং মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৪৩ জনের।

বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১২৫ জন করোনায় মারা গেছেন। বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ৯০ হাজার ৯২৫ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অপরদিকে ৪৮ হাজার মানুষ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে -স্বাস্থমন্ত্রী : দেশে এখনও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তবে যে কোনো সময় দেশে রোগী শনাক্ত হতে পারে। এ রোগ মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর দুটি হাসপাতাল সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এছাড়া সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার্থে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেডসহ পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলে তাদের সুচিকিৎসায় চিকিৎসক ও নার্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটিসহ দেশব্যাপী তিনটি কমিটি বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

সুতরাং দেশে করোনাভাইরাস দেখা দিলেও জনগণের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ মন্ত্রীর। ভারত-শ্রীলংকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটলেও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো কারণে এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লেও তা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। আশপাশের দেশে যেহেতু করোনাভাইরাস এসে গেছে, বাংলাদেশেও আসবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুসারে ইতিমধ্যে ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজাধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল এবং সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২০ শয্যার বিশেষ আইসিইউ ইউনিট করা হয়েছে।

এছাড়া সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে আইসিইউর দুটি শয্যা পৃথক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সব হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এগুলো করা হয়েছে হাসপাতালের টপ ফ্লোরে। যদি কখনও দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা রাড়ছে, তাহলে হাসপাতালের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মিলনায়তন) প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জাহিদ মালেক জানান, হাসপাতালে যেসব চিকিৎসক-নার্স কাজ করবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গাউন, মাস্ক, গ্লাভস যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ সময়ে বিদেশ থেকে দেশে আসতে এবং বিদেশে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যে দেশ থেকেই আসুক না কেন তাকে সেলফ কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে।

করোনাভাইরাস বাংলাদেশে না ছড়ানো এবং বিশেষ প্রস্তুতি রাখায় ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে আগত বিদেশিরা নিরাপদে থাকবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা বিদেশ থেকে আসবেন, তাদের আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় রাখব, তারা তো অল্প সময় থাকবেন। আশা করি, তারা ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সেইফ থাকবেন।

ঢাকায় ‘আইসোলেশনে’ ৫ জন : নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অংশ হিসেবে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ নিয়ে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচজনকে ‘আইসোলেশনে’ রাখা হয়েছে। তবে তাদের সবার অবস্থাই ভালো বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)।

মঙ্গলবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সন্দেহভাজন পাঁচ রোগীকে আইসোলেশনে রাখার কথা জানিয়ে ফ্লোরা বলেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট চালু করেছে আইইডিসিআর। সেখানে সন্দেহভাজন রোগী পৃথকভাবে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে সব সময়ই আইসোলেশন থাকে। যখনই আমরা সন্দেহজনক রোগী পাই, যার মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ আছে, আমরা তাকে আগে হাসপাতালে পাঠাই। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে রোগী নয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ছাড়া হয়। আইসোলেশনে থাকা পাঁচজনের সবারই শারীরিক অবস্থা এখন ভালো বলে জানান তিনি। ঢাকায় আসা অতিথিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে হোটেলগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত ৫ হাজার ছাড়াল : আরও ৩৭৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। যার মাধ্যমে দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে চীনের বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের তালিকায় স্থান পেল দক্ষিণ কোরিয়া।

এদিকে মঙ্গলবার দেশটির মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন বলেন, সংক্রামক এ রোগের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হল। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই দক্ষিণাঞ্চলীয় দেগু শহরের বাসিন্দা। যারা শিনচেওঞ্জি চার্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে সোমবার রোগ ছড়ানোর জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চান দক্ষিণ কোরিয়ার ধর্মীয় একটি গোষ্ঠীর প্রধান।

 

ইরানে ২৩ এমপি আক্রান্ত : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইরানের অন্তত ২৩ জন এমপি আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার আবদুল রেজা মিসরি এক ঘোষণায় এ তথ্য জানিয়েছেন। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় কয়েকদিন ধরে দেশটির পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত রয়েছে।

২৯০ সদস্যের ইরানের পার্লামেন্টের এই স্পিকার বলেন, নমুনা পরীক্ষায় ২৩ সংসদ সদস্যের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ফারসি বিভাগ বলছে, এই সংসদ সদস্যরা তাদের নির্বাচিত এলাকায় জনগণের সংস্পর্শে আসায় করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ঘোষণায় দেশটির উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী আলী রেজা রাইসি বলেছেন, করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৩৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৭৭ জন।

চীনে আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু : চীনে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। ওই চিকিৎসকের নাম মেই ঝংমিং। উহানের সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

৭ ফেব্রুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অপর চিকিৎসক লিওয়েনলিয়াংয়ের সহকর্মী ছিলেন মেই ঝংমিং। করোনাভাইরাসের বিষয়ে প্রথমবার সতর্ক করেছিলেন চিকিৎসক লিওয়েনলিয়াং। এ বিষয়ে সতর্ক করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি নিজেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে গত সোমবারও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে টানা ৩৩ দিন ডিউটি পালন করতে গিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

২৬ জানুয়ারি থেকে কোনো ধরনের ছুটি নেয়া ছাড়াই টানা চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন এই চিকিৎসক। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংশি প্রদেশের লিংফেং শহরের একটি ক্লিনিকের উপপরিচালক ছিলেন চিকিৎসক ঝং জিনজিং। নতুন করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা লিংফেং টাউন ক্লিনিকের মেডিকেল কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের উপপ্রধানও ছিলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন স্থগিত : ২০ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন স্থাগিত ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। সোমবার এই ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর এই সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল।

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম