সাংবাদিকদের ডিএসইর পরিচালক: শেয়ারবাজারে দুরবস্থা পাঁচ কারণে
ব্যাংকে সুশাসন না হলে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অত্যন্ত খারাপ সময় পার করছে দেশের শেয়ারবাজার। বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম তলানিতে। চারিদিক থেকে বিনিয়োগকারীদের কান্নার আওয়াজ আসছে।
আর দুরবস্থার সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। এগুলো হল- বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, সামগ্রিকভাবে সুশাসনের অভাব, আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক পরিচালকদের কারসাজি এবং এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক।
এ অবস্থায় বাজারের উন্নয়নে ব্যাংকের সাপোর্ট জরুরি। বিশেষ করে ব্যাংকে সুশাসন না হলে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। শনিবার রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
তার মতে, ভারতের শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাপোর্ট দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পালন করছে না ব্যাংকগুলো।
রকিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাজারের সবচেয়ে বড় খাত ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ খাতের অবস্থান মোট মূলধনের ২৭ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে খাত দুটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ; যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেছেন- ব্যাংকের পরিচালকরা পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার ঋণ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। রকিবুর রহমান বলেন, শুধু আমানতকারীদের টাকাই নয়, এরপর শেয়ারবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে টাকা নিয়েছেন এই পরিচালকরা। আইন পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন তাদের পরিচালক পদে থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু বাজারের চরম পতন হলেও তারা শেয়ার কিনছেন না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০১০ সালে একটি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৮০০ কোটি টাকা।
ওই সময়ে শেয়ারটির দাম ২০১ টাকায় উঠেছিল। কিন্তু এরপর প্রতি বছরই বোনাস দিয়ে পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা করেছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকটির পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে বড় অংকের টাকা নিয়ে গেছেন। বর্তমান ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ৬ টাকায় নেমে এসেছে।
কিন্তু বিনিয়োগকারীদের দুঃসময়ে পরিচালকরা কোনো শেয়ার কিনছেন না। ফলে এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চরমে পৌঁছেছে। তিনি আরও বলেন, ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে বাইব্যাক (পুনরায় শেয়ার কিনে নেয়া) আইন রয়েছে।
এর মানে হল- কোনো কোম্পানির শেয়ার মূল্যে চরম দুরবস্থা নেমে এলে, নির্দিষ্ট দামে মালিকরাই কিছু শেয়ার কিনে নেন। কিন্তু বিভিন্ন মহলের দাবির পরও বাংলাদেশে সে আইন করা হচ্ছে না। তার মতে, এ ধরনের আইন করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারকে টেকসই করবে। এ সময়ে প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালককে ১ থেকে ২ লাখ করে শেয়ার কেনার আহ্বান জানান তিনি।
ডিএসইর এই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, বাজারের পতনের পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকগুলোকে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগের জন্য বলেছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি একটি মিটিং পর্যন্ত করেনি।
এর মানে হল, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমলেই নিচ্ছেন না তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজার পতন ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস নিয়ে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর ফলে বাজারে আরও পতন হয়েছে। কিন্তু এটি কোনো আতঙ্কের বিষয় নয়। এ সময়ে ধৈর্যসহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের আতঙ্কসহ অন্যান্য কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে চরম দুর্যোগ নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজারমূলধন ১৬ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এ সময়ে মূল্যসূচক কমেছে ২৫৫ পয়েন্ট। শতকরা হিসাবে যা প্রায় ৬ শতাংশ।
এর মানে হল, এক সপ্তাহ প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দাম গড়ে ১০০ টাকা থাকলে বর্তমানে তা ৯৪ টাকায় নেমে এসেছে। সামগ্রিকভাবে বাজার পরিস্থিতি ৯ বছর আগের অবস্থানে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত আতঙ্ক তৈরি করেছে। আর এ ঝুঁকি নিয়েই আজ রোববারের লেনদেন শুরু হচ্ছে।
