করোনা সন্দেহে চিকিৎসা দেয়নি পাঁচ হাসপাতাল, ধুঁকে ধুঁকে যুবকের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো ও নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আল আমিন নামে এক যুবক (২২) মারা গেছেন। জ্বর, সর্দি, কাশি, ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার বিকালে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আল আমিনের বাড়ি নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার অলংকারদিঘি গ্রামে। অসুস্থ হয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামে ফেরেন। কিন্তু সেখানকার লোকেরা তাকে বাড়িতে থাকতে দেয়নি।
এ কারণে তিনি নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল, আদমদিঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, রানীনগর উপজেলা হাসপাতালসহ পাঁচটা হাসপাতাল ঘুরে কোনো চিকিৎসা না পেয়ে শনিবার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন।
আল আমিনের বাবা মোখলেসুর রহমান জানান, তার ছেলে নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মীর কাজ করতেন। শনিবার সকালে সে প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাড়িতে ফেরে।
এ সময় গ্রামের লোকেরা তাকে গ্রামে থাকতে নিষেধ করে। তাই দ্রুত তাকে নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেন।
উপায়ান্তর না দেখে পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলা হাসপাতালে যান। সেখানেও তাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করা হয়।
পরে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুনকে জানালে তার হস্তক্ষেপে আল আমিনকে প্রথমে রানীনগর উপজেলা হাসপাতালে ও পরে আবার নওগাঁ জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেখান থেকে বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা আল আমিনকে ২৩ নং মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আল আমিন মারা যান।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, আল আমিনের লাশ রাতেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি করোনায় নয়, মস্তিষ্কের সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
ভর্তির সময় তার শরীরে জ্বরের মাত্রা তীব্র ছিল। মাথাব্যথা ও গলা ব্যথা ছিল। মেডিকেলের ডেথ প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার বিভিন্ন উপসর্গ থাকলেও আল আমিন মারা গেছেন মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের সংক্রমণে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কীভাবে মেনিনজাইটিস শনাক্ত হল জানতে চাইলে সাইফুল ফেরদৌস কোনো উত্তর দেননি। রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আল আমিনের করোনার কোনো নমুনা সংগ্রহ করেনি বলে জানান তিনি।
এদিকে নওগাঁর রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম জানান, আল আমিনকে আমাদের হাসপাতালে আনা হয় তখন তার তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল। অবস্থা বিবেচনা করে তাকে আমরা নওগাঁ জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।
সেখানে করোনার নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। সেটা করা হয়েছে কিনা জানি না।
রোববার সকালে নিজ গ্রাম অলরংকারদিঘিতে আল আমিনের লাশ দাফন করা হয়। তবে আল আমিনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল সন্দেহে গ্রামবাসী প্রথমে লাশ গ্রামে আনতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
