Logo
Logo
×

শেষ পাতা

করোনায় গার্মেন্ট শিল্পে ৭ প্রভাব

দ্রুত কাঁচামাল খালাসের দাবি, এনবিআর চেয়ারম্যানকে বিজিএমইএ’র চিঠি

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দ্রুত কাঁচামাল খালাসের দাবি, এনবিআর চেয়ারম্যানকে বিজিএমইএ’র চিঠি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গার্মেন্ট শিল্প নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বন্ড লাইসেন্স নবায়নে দলিলাদি জমার সময়সীমা, বন্ডিং মেয়াদসহ কাস্টমস আইনের বিধি-বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করা মালিকদের পক্ষে সম্ভব নয়।

আইনের ব্যত্যয়ের কারণে যে জরিমানা, সুদ আরোপ করা হয়, তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিশোধ কষ্টসাধ্য। তাই আগামী এক বছর জরিমানা স্থগিত রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে রফতানির জন্য আনা আমদানীকৃত চালান সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া খালাসে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ২৫ মার্চ পাঠানো চিঠিতে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক গার্মেন্ট শিল্পে করোনাভাইরাসের ৭টি প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।

কাস্টমস আইন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক খাতে বন্ড সুবিধা রয়েছে। এ সুবিধার আওতায় গার্মেন্ট শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে ফেব্রিক্স, কাঁচামাল, রাসায়নিক ও এক্সেসরিজসামগ্রী আমদানি করতে পারে। এ জন্য কিছু বিধি-বিধান মানতে হয়। যেমন যেসব পণ্য বন্ড সুবিধায় আমদানি করা হয়, তা এক বছরের মধ্যে ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

আইনের ভাষায় একে বন্ডিং মেয়াদ বলে। এছাড়া প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করাতে হয় এবং এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলিলাদি জমা দেয়ার বিধান আছে। এসব বিধান পালন না করলে আমদানীকৃত কাঁচামালের ওপর শুল্কারোপসহ জরিমানা হিসেবে সুদ আরোপ করা হয়।

বিজিএমইএ’র চিঠিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ ভাইরাসকে বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা তাদের বর্তমান ক্রয়াদেশগুলো স্থগিত করছে এবং চলতি শিপমেন্টগুলো বিলম্বিত করছে।

বর্তমান শিপমেন্টগুলো ধরে রাখতে বলছে এবং ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ কমিয়ে ফেলেছে। যার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং রফতানিতে দারুণভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ১০ শতাংশ রফতানি হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে কাস্টমস সংক্রান্ত জরুরি নীতি-সহায়তা প্রয়োজন।’

চিঠিতে করোনাভাইরাসের কারণে গার্মেন্ট শিল্পে ৭ ধরনের প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ার কারণে সময়মতো কাঁচামাল আমদানি করা যাবে না এবং ক্রয়াদেশ বাতিল হবে। ইতিমধ্যে আমদানীকৃত পণ্য চালান দ্বারা তৈরীকৃত পোশাক রফতানি করতে না পারায় স্টক লট সৃষ্টি হবে। সময়মতো বার্ষিক অডিট সম্পন্ন করা যাবে না। নির্দিষ্ট সময়ে বন্ড লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।

তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে দাবিনামার উদ্ভব হবে। কাস্টমস আইনের বিধি-বিধান পালনে ব্যর্থ হওয়ার কারণে জরিমানা-শুল্ক ধার্য করা হবে। যেসব পণ্য রফতানি করা হয়েছে তা ক্রেতা গ্রহণ না করে ফেরত পাঠাতে পারে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১১ ধরনের আইনগত সহযোগিতা চেয়েছে বিজিএমইএ। এগুলো হল- আপৎকালীন সময়ে বন্ড অডিটের জন্য দলিলাদি জমার সময়সীমা এক বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা। ক্ষতিগ্রস্ত রফতানি চালানের বিপরীতে বন্ডিং মেয়াদ অতিরিক্ত এক বছর বৃদ্ধি করা। বন্ড লাইসেন্স নবায়নের সীমা এক বছর বাড়ানো। আপৎকালীন সময়ে উদ্ভূত চলমান দাবিনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি এক বছরের জন্য স্থগিত রাখা। পরবর্তীতে আপৎকালীন সময়ে উদ্ভূত দাবিনামা ও জরিমানা মওকুফ করা। তৈরি পোশাক শিল্পে ভ্যাট দাবিনামা এক বছর স্থগিত রাখা।

কাস্টমস আইনের বিভিন্ন ধারা সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে না পারার কারণে ধার্যকৃত জরিমানা আদায় এক বছরের জন্য স্থগিত রাখা। আগামী এক বছর রফতানি বিলম্বিত হতে পারে বিধায় সব ধরনের তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখা। রফতানি পণ্য ক্রেতারা গ্রহণ না করে দেশে ফেরত পাঠালে শর্তহীনভাবে বন্ডের আওতায় ফেরতের অনুমতি দেয়া। শর্ট শিপমেন্টের তথ্য তৎক্ষণাৎ অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে পোস্টিং দেয়ার ব্যবস্থা করা। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া রফতানির জন্য আনা আমদানীকৃত চালান খালাসে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিঠির বিষয়ে এনবিআরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিজিএমএই কাস্টমস ও বন্ড সংক্রান্ত সুবিধাদি চেয়েছে। এগুলোর যৌক্তিকতা জানতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটকে চিঠি দেয়া হবে। তাদের মতামত এনবিআরে পর্যালোচনার পর অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য সার-সংক্ষেপ পাঠানো হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএ’র দাবিগুলো যৌক্তিক। এ অবস্থায় এমনিতেই পোশাক খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তাই গার্মেন্ট খাতকে পলিসি সাপোর্ট দেয়া উচিত। এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রাজস্ব আদায়ের সময় নয়। তবে দাবিনামার যথার্থতা থাকলে একেবারে মওকুফ করাও ঠিক হবে না। দাবিগুলো ৬ মাস পেছানো যেতে পারে।

এনবিআর বিজিএমইএ খালাশ দাবি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম