রফতানি উন্নয়ন তহবিল : আকার বেড়ে ৫০০ কোটি ডলার
সুদহার কমে ২ শতাংশ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার বাড়িয়েছে।
একই সঙ্গে কমিয়েছে ওই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার সুদহার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মঙ্গলবার একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, ইডিএফের আকার ৩৫০ কোটি ডলার থেকে ১৫০ কোটি ডলার বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এর সুদহার গড়ে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এই তহবিল থেকে রফতানিকারকরা ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় কম সুদে ঋণ নিতে পারেন। যে কারণে রফতানিকারকদের কাছে এ তহবিলের গুরুত্ব অনেক বেশি। পোশাক ও বস্ত্র খাতের রফতানিকারকরা এ তহবিল থেকে এক দফায় সর্বোচ্চ ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দিতে পারেন। ওই ঋণ পরিশোধ করে তারা আবার নতুন ঋণ দিতে পারেন। এই ঋণ আগে তিন মাসের জন্য দেয়া হতো। করোনার প্রভাবে এর মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। এটি একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল।
এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তারা সুদসহ পরিশোধ করেন। পরে আবার নতুন করে ঋণ নেন। এভাবে তহবিলের আকার বাড়ছে। এছাড়া এর চাহিদা বেশি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তহবিলের আকার বিভিন্ন সময় বাড়িয়েছে।
এই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আগে সুদের হার নির্ধারিত হতো ছয় মাস মেয়াদি লাইবর রেটের (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট) সঙ্গে দেড় শতাংশ সুদ যোগ করে। বর্তমানে লাইবর রেট ১ দশমকি ২৩ শতাংশ। এর সঙ্গে দেড় শতাংশ যোগ করে সুদ নির্ধারিত হতো। ফলে সুদের হার দাঁড়াত ২ দশমকি ৭৩ শতাংশ। লাইবর রেট বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ওঠানামা করত বলে এডিএফ থেকে নেয়া ঋণের সুদের হারও ওঠানামা করত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলারের মাধ্যমে এর সুদের হার এবার বেঁধে দিয়েছে। এখন থেকে এর সুদের হার আর লাইবর রেটের সঙ্গে ওঠানামা করবে না। ২ শতাংশ নির্ধারিত থাকবে। অর্থাৎ ঋণের বিপরীতে গ্রাহকদের দিতে হবে ২ শতাংশ। এর মধ্যে ১ শতাংশ সুদ নেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এবং বাকি ১ শতাংশ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১ এপ্রিল থেকে সুদের নতুন হার কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নতুন সুদের হার ও তহবিলের আকার কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ গত ১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত এ তহবিল থেকে যেসব ঋণ দেয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও সুদের হার ২ শতাংশ প্রযোজ্য হবে।
তবে ১ এপ্রিলের আগে যেসব ঋণ দেয়া হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে সুদের হার আগের নিয়মে আরোপিত হবে। অর্থাৎ লাইবর রেটের সঙ্গে দেড় শতাংশ যোগ করে। রফতানিকারকদেও সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে প্রথম ইডিএফ গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন তা বেড়ে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হল।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনার কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছেন।
এর মধ্যে তিন নং প্যাকেজে ইডিএফের আকার ৩৫০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা এবং সুদের হার ২ দশমকি ৭৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার কথা বলেছিলেন। এ ঘোষণার ২ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিল। সূত্র জানায়, অন্য প্যাকেজগুলোর বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। অচিরেই সেগুলোর ব্যাপারে আলাদা নীতিমালা জারি করবে।
