করোনায় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে পরিপত্র
অগ্রাধিকার প্রকল্প ছাড়া অর্থ ব্যয় নয়
স্বাস্থ্য ও কৃষি প্রকল্পের কাজ অব্যাহত থাকবে
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকারের ‘নিম্ন অগ্রাধিকার’ উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ খরচ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে যৌক্তিক কারণে ব্যয় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
আর ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে না করলেই নয় এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে নিজস্বভাবে ও স্বীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। পাশাপাশি ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের’ অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখতে হবে।
তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এ নির্দেশের আওতার বাইরে থাকবে।
উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে উল্লিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সব মন্ত্রণালয়কে। একই সঙ্গে অর্থ বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা (পরিপত্র) অবহিত করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষককে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সপ্তম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে করোনা মোকাবেলায় ব্যয় করা হবে। এ অনুশাসনের পর বুধবার অর্থবিভাগ এ নির্দেশনা জারি করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, কোন প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ এবং টাকা ব্যয় করতে হবে সেভাবে সরকার এই মুহূর্তে চিন্তা করছে। এটি আমি শুরু থেকেই বলে আসছি।
দুনিয়াব্যাপী করোনাভাইরাসের এই মহামারীর কারণে টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অন্য রাষ্ট্রগুলো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু পর্যালোচনা ও বিবেচনা করেই প্রকল্পের টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে এই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে সাশ্রয়ী অর্থ আমরা করোনা মোকাবেলায় অগ্রাধিকার খাতে ব্যয় করতে পারব।
অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে বৈশ্বিক মহামারী আকারে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে অগ্রাধিকার খাতগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হচ্ছে।
নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগের আওতাধীন সব দফতর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ (অগ্রাধিকার) প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিজস্ব মাঝামাঝি পর্যায়ের অগ্রাধিকার বা মধ্যম পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী সেক্ষেত্রে স্বীয় বিবেচনায় অর্থ ব্যয় করতে হবে মন্ত্রণালয়কে। আর কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ ছাড় করা যাবে না। অর্থ ব্যয়ও করা যাবে না। উভয় ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
প্রসঙ্গত এর আগে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবয়নের গতি আনতে অর্থ ছাড়ের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি)। অর্থাৎ অর্থ মন্ত্রণালয় বা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন বা সম্মতি ছাড়াই সরকারি তহবিলের (জিওবি) অংশের শতভাগ অর্থ ছাড় করতে পারবেন তারা। এমনকি ইচ্ছামতো খরচও করতে পারবেন। এর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় বা
অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো জবাবদিহিতা করতে হবে না।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শ্রেণির জন্য ১ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে শিল্প ঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ২০ হাজার কোটি টাকা, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি নিম্ন আয় শ্রেণির মানুষের ও কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা, রফতানি উন্নয়ন ফান্ড ১২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, প্রিশিপমেন্ট ঋণ ৫ হাজার কোটি টাকা, গরিব মানুষের নগদ সহায়তা ৭৬১ কোটি টাকাসহ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া বাজেটের অতিরিক্ত আড়াইশ’ কোটি টাকা দেয়া হয় স্বাস্থ্য খাতে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ সংস্থান চলতি বাজেটে রাখা হয়নি। এই ব্যয় মোকাবেলা করতে প্রথমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার কেটে ছোট করা হয়েছে।
অর্থবছরের ৯ মাস পর এখন এডিপি থেকে কমানো হয়েছে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফলে এ বছর (২০১৯-২০) সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
যদিও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এডিপি কাটছাঁট ছাড়াও প্রকল্প ব্যয়ে এখন আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
