Logo
Logo
×

শেষ পাতা

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাধা শনাক্তের নির্দেশ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাধা শনাক্তের নির্দেশ

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের বাধা শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সর্বকালের বড় এ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অনভিজ্ঞতা থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতিবন্ধকতা ও নিরসনে করণীয় জানতে চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে তা চূড়ান্ত করা হবে।

পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতা কাটাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত অর্থের জোগান দিতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য কম গুরুত্বপূর্ণ ৯ খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের বিদেশ ভ্রমণ না করতে বলা হয়েছে। এসব নির্দেশ জারি করে রোববার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নির্বাহীদের কাছে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়।

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক বাংলাদেশ (এবিবি) নেতাদের সঙ্গে। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথও চ্যালেঞ্জিং হবে জানিয়ে মন্ত্রী এ সময় খেলাপি ঋণের হার (এনপিএল) নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ব্যয় কমানো এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ওই চিঠি দিয়েছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের অভিমত, অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজগুলো কঠিন শর্তের জালে আবদ্ধ। এসব শর্ত পালন করতে গেলে ঋণ পেতে সময়ক্ষেপণ ও ভোগান্তি হবে সীমাহীন। বাস্তবতা হচ্ছে, উদ্যোক্তাদের ঋণের প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে। এছাড়া শর্ত বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে প্যাকেজের ৭৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হবে। এজন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি করোনার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- সেটিও নিরূপণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এর আগে এত বড় অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা কারও নেই। সেক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজের আওতায় ছাড় করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বড় অঙ্কের টাকা ছাড় করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেবে ৭৩ হাজার কোটি টাকা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেবে ২৫ হাজার কোটি টাকা। কেবল প্যাকেজের ঋণে সুদ ভর্তুকি বাবদ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা এবং রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সংস্থান হবে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে। এছাড়া গরিব মানুষের নগদ সহায়তা বাবদ ৭৬১ কোটি টাকা, ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দের টাকাসহ বেশকিছু অর্থ বাজেট থেকে সংস্থান করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকার কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। যেহেতু একসঙ্গে কয়েকটি প্যাকেজ এজন্য বাস্তবায়নে কাজও বেশি। ব্যাংকগুলোকে প্যাকেজ থেকে ঋণ দেয়া, ঋণের চাহিদা, আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পৃথক ইউনিট গঠন করা হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। মনিটরিং সেল থেকে প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে নিরসন করা হবে।

৯ নির্দেশ : বলা হয়েছে, এ সংকট মোকাবেলায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধিকতর তারল্য প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এজন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনাবশ্যক পরিচালন ব্যয় হ্রাসকল্পে নিম্নরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে।

১. এখন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও নির্বাহীদের অনাবশ্যক বিদেশ ভ্রমণ না করা। ২. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অস্থাবর সম্পদ কেনা, অফিস স্পেস ভাড়া, সাজসজ্জা ইত্যাদি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা। ৩. ব্যাংকের গাড়ি ব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসরণ ও সাশ্রয়ী হতে হবে। ৪. পরিচালনা পর্ষদেরসহ অন্যান্য সভা অনুষ্ঠান, বার্ষিক সাধারণ সভা, আপ্যায়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ব্যয় কাটছাঁট করা।

৫. ব্যাংকের বিভিন্ন সভার জন্য ভেন্যু ভাড়া না করে নিজস্ব কনফারেন্স রুমেই আয়োজন করতে হবে। এছাড়া বার্ষিক ক্যালেন্ডার, ডায়েরি মুদ্রণ বা এ জাতীয় প্রচারমূলক ব্যয়ে অর্থ বরাদ্দ সীমিত করতে হবে। ৬. কর্মচারীদের ভ্রমণ ও যাতায়াত ভাতা, আপ্যায়ন খরচ, স্টেশনারি, উন্নয়ন ফান্ডসহ বিবিধ খরচে মিতব্যয়ী হতে হবে। ৭. এই ক্রান্তিকালে বিভিন্ন সভাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান ভিডিও কনফারেন্সে করতে হবে। ৮. পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ৯. ব্যাংকের ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করেন, তাদের অধিকতর স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করা ও যাতায়াতসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে।

ব্যাংক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম