২০২০-২১ বাজেটে করোনার প্রভাব: বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা কমছে
আগামী এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা * চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা কম
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনার ধাক্কা লেগেছে বৈদেশিক সহায়তায়। ফলে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কমছে বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা। নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এই সহায়তার বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে ছিল ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা কমছে প্রায় ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি অর্থবছর মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে চলতি অর্থবছর প্রকল্পের কার্যক্রম প্রায় স্থবির ছিল। তাছাড়া এখনও বলা যাচ্ছে না করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সম্ভবত এসব কারণে মূল এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য কম ধরা হতে পারে। তবে এই বরাদ্দ কিন্তু সংশোধিত এডিপির তুলনায় বেশিই ধরা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি নির্ধারণ করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সুতরাং তারাই বলতে পারবে কেন বৈদেশিক সহায়তা কমছে।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপি’র খসড়া তৈরি করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। খসড়াটি চূড়ান্ত করতে আগামী ১২ মে অনুষ্ঠিত হবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভা। এরপরই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে তা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
চলতি মাসের শেষ নাগাদ এনইসি বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এডিপির আকার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে। সে হিসেবে এডিপি হচ্ছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাদে)। সে তুলানায় বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ কমলেও সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থ বরাদ্দ বাড়ছে।
বৈদেশিক বরাদ্দ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, করোনার কারণে আগামী অর্থবছর থেকে হিসেবে বৈদেশিক সহায়তার একটি অংশ রাখা হয়েছিল। এই থোকসহ বৈদেশিক অংশে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে থোকের অংশসহ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখনও যেহেতু চূড়ান্ত হয়নি সেহেতু এই বরাদ্দের পরিমাণ কিছুটা বাড়তেও পারে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় কমেছে। মার্চ মাসের হিসাবে বৈদেশিক সহায়তা আলাদা করে দেখানো হয়নি। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বৈদেশিক সহায়তা অর্থ ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের ৩৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এটি আগের দুই অর্থবছরের তুলনায় শতাংশের দিক থেকে কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৪১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে অর্থের পরিমাণের দিক থেকে ব্যয় কিছুটা বেশি ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি’র সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ শুক্রবার জানান, করোনার কারণে প্রকল্প ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড় কম হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছুটা কম হতে পারে। তাছাড়া আমাদের পাইপলাইনে প্রচুর অর্থ রয়েছে, সেগুলো ব্যয় করতে পারলেও ভালো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনে কেন বৈদেশিক সহায়তার অংশ আলাদা করে দেখানো হয়নি সেটি খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি আমার নজরে আসেনি।
ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার কারণে নির্ধারিত সহায়তার বাইরে আরও অনেক সহায়তা দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে। সে হিসাবে আগামী অর্থবছর বৈদেশিক সহায়তা তো বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু উল্টো কমছে কিভাবে সেটি আমার বোধগম্য নয়। তবে চলতি অর্থবছর বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার যে লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল সেটি উচ্চাভিলাষী ছিল। সেই তুলনায় আগামী অর্থবছর যদি বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে কম লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
