Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মিলারদের তিন অজুহাত

চালের দামে আবারও আগুন বস্তায় বাড়ল ৫শ’ টাকা

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চালের দামে আবারও আগুন বস্তায় বাড়ল ৫শ’ টাকা

বোরোর বাম্পার ফলনেও বাজারে চালের দামে স্বস্তি নেই। ১৫ দিন আগে বোরো ধানের চাল বাজারে আসায় মোটাসহ সব ধরনের চালের দাম কমলেও মিলারদের কারসাজিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে।

ছয় দিনে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মনিটরিংয়ের অভাব ও অসাধুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অসাধুরা বারবার কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা লুটছে।

এতে কিছুদিন পর পর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ বাজার ও নয়াবাজার ঘুরে শুক্রবার খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন খুচরা পর্যায়ে মাঝারি চালের মধ্যে বিআর-২৮ প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৩০০ টাকায়, যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৮০০ টাকায়।

বস্তায় বেড়েছে ৫০০ টাকা। সরু চালের মধ্যে প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ২৮০০ টাকায়, যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২৬০০ টাকায়। এ ক্ষেত্রে বস্তায় বেড়েছে ২০০ টাকা।

এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২২৫০-২৩০০ টাকায়, যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৯০০-২০০০ টাকায়। সেক্ষেত্রে স্বর্ণা চাল বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা।

এ দিন মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমাদের বেশি দরে চাল কিনতে হচ্ছে। এছাড়া পরিবহন খরচ বেশি দিতে হচ্ছে।

ফলে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, মিলারদের কারসাজিতে বোরোর এই ভরা মৌসুমেও চালের দামে ভোক্তার স্বস্তি নেই।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চলতি বছরের ২৭ মে পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ ১১ লাখ ৩৯ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৮ লাখ ২৩ হাজার টন ও গম ৩ লাখ ১৬ হাজার টন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র আরও বলছে, দেশে এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের মজুদ সন্তোষজনক। এছাড়া মাসিক চাহিদা ও বিতরণ পরিকল্পনার তুলনায় পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। আর এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতির কোনো আশঙ্কাও নেই।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, করোনা ও রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদফতরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হয়েছে।

এই সময় অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই ঈদের পর এখনও বাজার তদারকি কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। তবে করোনাক্রান্ত হয়েও অধিদফতরের মহাপরিচালক নিয়মিত ফোনালাপে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

তার নির্দেশনায় রোববার থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হবে। সব চালের বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অসাধু পন্থায় যদি চালের দাম বাড়ানো হয় তবে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। 

এদিকে রাজধানীর সর্ববৃহৎ চালের পাইকারি আড়ত বাদামতলী ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকায়, যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২২০০ টাকায়।

বিআর-২৮ চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২১০০ টাকায়, যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৮৫০ টাকায়। এছাড়া স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকায়, যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৮০০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মিলাররা ঈদের আগের দিন থেকে চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে।

তারা ধানের দাম বাড়তি ও মিলে শ্রমিকরা ছুটিতে থাকা ও চাল উৎপাদন ব্যাহত হওয়া- এই তিন অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়েছে। সেই দাম বাড়ার প্রভাব সরাসরি পাইকারি বাজারে পড়েছে। আর পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, ঈদের আগে মিলগেট থেকে যে মিনিকেট চাল প্রতি বস্তা ২০৫০-২১০০ টাকায় এনেছি সে চাল এখন মিলারদের কাছ থেকে ২২৫০-২৩০০ টাকায় আনতে হচ্ছে। প্রতিবস্তা বিআর-২৮ চাল আনতে হচ্ছে ২০০০ টাকায়। যার ঈদের আগে দাম ছিল ১৯০০ টাকা।

এছাড়া প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল আনতে হচ্ছে ১৯৫০ টাকায়, যা সাত দিন আগে ছিল ১৮০০-১৮৫০ টাকা।

কুষ্টিয়ার চালকল মালিক মো. আক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঈদের আগে প্রতি মণ ধান ৯০০-৯৫০ টাকা দিয়ে কিনেছি। সেই একই ধান এখন ১০০০-১০৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

যে কারণে চালের দাম বাড়বে। তবে এখনও চালের দাম বাড়ানো হয়নি। রোববার থেকে বাড়তে পারে।

কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) এর নির্বাহী পরিচালক নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নাই। মিলাররা সবসময় দাম বাড়ানোর সুযোগ খোঁজে। দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও করোনা পরিস্থিতিতে সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়েছিল। বোরো ধানের চাল বাজারে আসার পর দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে। তবে এখন মনিটরিংয়ের অভাবে মিলে ঈদের কারণে শ্রমিকরা ছুটিতে থাকায় চাল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঘাটতির কথা বলে দাম আবার বাড়াচ্ছে, যা একেবারেই ঠিক না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং সূত্র বলছে, দেশের হাওর অঞ্চলসহ যেসব জায়গায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে, সেখানে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

ইতোমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ধান মাঠ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আর এই ধানের চাল বাজারেও আসতে শুরু করেছে।
 

চাল কারওয়ান বাজার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম