বাজেট ২০২০-২০২১
করোনার প্রভাবে কমছে আয়কর নেটের আওতা
নতুন আয়করদাতা শনাক্ত হবে ৫ লাখ চলতি বছর ছিল ৯ লাখ ২৩ হাজার
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আসন্ন বাজেটে ‘আয়কর’ নেটের আওতা কমছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে নতুন ৫ লাখ আয়করদাতাকে করজালে যুক্ত করা হবে।
সম্প্রতি এক বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন এ আয়করদাতার সংখ্যা চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪ লাখ ২৩ হাজার জন কম। চলতি সংশোধিত বাজেটে নতুন আয়করদাতার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ৯ লাখ ২৩ হাজার।
করোনাভাইরাসের কারণে আসন্ন বাজেটে এ সংখ্যা কমানো হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের মধ্যে আয়করদাতাদের সন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা থাকবে।
এতে এনবিআরের কর্মকর্তারা নতুন করদাতাদের খুঁজে পেতে উৎসাহবোধ করবেন। পাশাপাশি নতুন বাজেটে করের হার খুব বেশি বাড়ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাকা প্রায় অচল। এসব দিক বিবেচনা করেই নতুন আয়করদাতার সংখ্যা বাড়ানো হয়নি।
এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, দেশে ছোট করদাতা দুই প্রকারের। প্রথমটি সৎ, ক্ষুদ্র ও নিম্ন পর্যায়ের। ওরা এমনি কর দেয়।
ওদের বেতন থেকে কেটে নেয়া হয়। আরেকটি হল প্রাইভেট সেক্টর। ইনফরমাল সেক্টরের করদাতা। এদের নিয়েও এনবিআরের মাথাব্যথার দরকার নেই। বরং এদের রেয়াত দেয়া উচিত। তবে অনেক ক্ষেত্রে কর রেয়াতের বিষয়গুলোও পর্যালোচনার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, বড় করদাতাও দুই প্রকার। এক. এনবিআরের তালিকায় এদের নাম আছে। কিন্তু এরা নানাভাবে কর ফাঁকি দেয়। আরেক আছে, কর দেয় না। এদের সংখ্যা অবশ্য কম। কারণ, বড়দের সবারই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এনবিআরের উচিত, করদাতা বাড়ানোর পাশাপাশি বড়রা ঠিকভাবে দেয় কি না, তা দেখা। বড়দের একটা ফাঁকি ছোট ১০০ করদাতার করের সমান। তাই নতুন করদাতা বাড়ানোর পাশাপাশি বড়দের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, কর প্রদানে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
গত কয়েক বছর রিটার্ন দাখিলের হার বাড়ছে। ২০১৪ সালে করদাতা ছিল ১২ লাখ। মাত্র ৫ বছরে এই সংখ্যা প্রায় চার গুণ বেড়ে ৪৪ লাখে উত্তীর্ণ হয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে এই করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তার।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে সেটি সম্ভব নাও হতে পারে-আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, ইতোমধ্যে করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা লোকসানের মুখে পড়ে তাদের আয় কমেছে। নতুন করে আয়কর দেয়ার যোগ্যতা থাকলেও সেটি করোনার কারণে ভেস্তে গেছে।
জানা গেছে, দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। অথচ ইটিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৪৪ লাখ। এ সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকে কর দেয়ার যোগ্যতা রাখলেও তারা কর দিচ্ছেন না। ফলে তাদের নতুন করে আয়করদাতার জালে যুক্ত করা হবে।
সূত্রমতে, আগামী বছরে যে পাঁচ লাখ নতুন করদাতা খুঁজে বের করা হবে এর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে আয়করদাতা শনাক্তকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এক ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হবে।
এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়েও করদাতা চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে জোর দেয়া হবে। বর্তমানে প্রতিটি উপজেলায় রাজস্ব দফতর স্থাপনের উদ্যোগ চলছে। যেখানে করদাতার সংখ্যা বেশি, সেসব উপজেলায় একাধিক রাজস্ব দফতর স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করদাতা চিহ্নিত করা হবে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোর মাধ্যমে ইটিআইএন গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, এনবিআর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির আগে নতুন করদাতা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ জোরালোভাবে কাজ করছিল।
এর মধ্যে করের আওতা বাড়াতে মাঠপর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। করযোগ্য সব মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসতে এনবিআর কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ করছেন। এনবিআরের কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইতোমধ্যে বিভিন্ন কাজে ইটিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা বেতন হলেই সব সরকারি কর্মচারীকে রিটার্ন জমা দেয়া, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পর্যায়ে চাকরি করলেই আয়কর নথি জমা এবং সব বিদেশি কর্মচারীর তথ্য প্রদান করা। এ ছাড়া সব ধরনের পেশাজীবীর জন্য আলাদা করাঞ্চল সৃষ্টি করে সবাইকে করের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ অব্যাহত আছে।
