Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বাজেট ২০২০-২০২১

বাস্তবতা বাদ দিয়ে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাস্তবতা বাদ দিয়ে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সরকার। রাজস্ব আহরণ, ব্যয় নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সব ক্ষেত্রেই সরকার বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারীর কারণে অর্থনীতিতে সৃষ্ট সংকটকে বিবেচনায় না নিয়ে টাকার হিসাব মিলিয়ে আগের ধারাবাহিকতায় একটি বাজেট তৈরি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার প্রভাব শিগগির যাচ্ছে না। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনা করেই বাজেটের বিভিন্ন খাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা জরুরি ছিল। কিন্তু বাজেটে যেভাবে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে সেগুলো অর্জন করা একেবারেই অবাস্তব। কেননা, করোনার প্রভাবে অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে রাজস্ব আয় অনেক কমে গেছে। এর মধ্যে আরও বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয়। এ বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

সরকার বড় অঙ্কের দেশি-বিদেশি ঋণ নিতে চাচ্ছে। কিন্তু দেশের ভেতর থেকে এত বেশি ঋণের জোগান দেয়ার সক্ষমতা ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং খাতের নেই। বিদেশ থেকে উন্নয়ন সহযোগীদের কিছু ঋণ পাওয়া যাবে। কিন্তু অন্যান্য খাতের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পাওয়া কঠিন হবে। কারণ, সব দেশের অর্থনীতিতেই করোনার নেতিবাচক প্রভাবের কারণে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে এই প্রক্রিয়ায় ঋণের জোগান পাওয়াও কঠিন হবে। তখন সরকারকে চলতি ব্যয় মেটাতে একমাত্র অর্থের উৎস থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে। যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে আরও কঠিন চাপে ফেলতে পারে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় হতে পারে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। এ ঘাটতিকে বিবেচনায় না নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা একেবারেই অসম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে, তা অনেক বেশি মাত্রায় উচ্চাভিলাষী। করোনার প্রভাবে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই দুর্বল। এই দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থায় এত বেশি রাজস্ব আদায় কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। আগামী অর্থবছর ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করার মতো করেই সবকিছু হিসাব ধরা হচ্ছে।

কিন্তু এত প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা খুবই কম। সূত্র জানায়, সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করেছে। ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। করোনার কারণে বিভিন্ন দেশেও এখন মহামন্দা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বহুজাতিক সংস্থা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক সব দেশকেই জরুরি ঋণ দিচ্ছে। এর বাইরে অন্য সংস্থাগুলো ঋণ দেয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে তাদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হবে। একই কারণে দেশীয় উৎস থেকেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নতুন বছরে সরকারকে টাকার জোগান দেয়া কঠিন হবে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকে সব পক্ষ থেকে চাপ আসছে। ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমছে। এ অবস্থায় ব্যাংক কীভাবে বাড়তি ঋণের জোগান দেবে। সেটা ভাবা উচিত। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপিয়ে টাকার জোগান দেয়া হলে, তা মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

বাজেট

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম