Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আবার বন্যার শঙ্কা: কমছে পানি, বাড়ছে ভাঙন

৭ জুলাইয়ের পর ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় বাড়বে বানের পানি * বন্যাদুর্গতরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে দুর্ভোগে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২০, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আবার বন্যার শঙ্কা: কমছে পানি, বাড়ছে ভাঙন

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। ইতিপূর্বে ৭ জুলাই পর্যন্ত চলতি বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার কথা বলেছিল সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।

শুক্রবার নতুন করে এ সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ৭ জুলাইয়ের পর পুনরায় বাড়তে পারে বন্যার পানি। আগামী পাঁচ দিন কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। পাশাপাশি রাজবাড়ী এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। কিন্তু অবনতি হতে পারে মানিকগঞ্জ, ঢাকা, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে। এ অবস্থার মধ্যে নতুন করে শুরু হতে পারে বন্যা।

টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি কমতে থাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যাদুর্গতরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে পড়েছে চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে নারী, শিশু-কিশোরী ও বৃদ্ধদের অবস্থা খুবই নাজুক। খামারিদের মাছের ঘের ঢলের তোড়ে ভেসে যাওয়াসহ উঠতি আউশ, ইরি, বোরো, আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হওয়াতে কৃষকসহ ভুক্তভোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আগামী আমন ফসল উৎপাদনও অনেকটাই অনিশ্চিত ভাবছেন কৃষিজীবীরা।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, একটা বন্যা শেষ না হতেই আরেকটি বন্যা শুরু হতে পারে। আগামী দশ দিনে ১০০০ থেকে পনেরোশ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। নদী এমনিতেই পানিতে ভর্তি। বৃষ্টির পানি এলে তা কোথায় যাবে। আমরা সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছি। এটা এক মাসও প্রলম্বিত হতে পারে।

বাংলাদেশে বন্যার কারণ প্রধানত দুটি। একটি হচ্ছে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি আরেকটি বাংলাদেশের ভেতরের বৃষ্টির পানি। বন্যার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখছে উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। চীন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং ভুটান হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ব্রহ্মপুত্র। পরে তা যমুনা নাম ধারণ করে পদ্মায় পড়েছে। পদ্মা মিলেছে মেঘনায়। উজানের সব পানি শেষে মেঘনা হয় বঙ্গোপসাগরে চলে যায়।

এফএফডব্লিউসি নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, যমুনা নদীসমূহের পানি ধীরগতিতে কমছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনার পানি নেমে এলেও বাড়ছে গঙ্গা ও পদ্মার পানি। এ কারণে দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলা রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুরে বাড়ছে পানির চাপ। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ভারতের সিকিমের দার্জিলিংয়ে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা ও ধরলায় পানিপ্রবাহ বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা পার করতে পারে। এই মুহূর্তে ধরলা বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

এফএফডব্লিউসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধরলা, ঘাঘট, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, আত্রাই, ধলেশ্বরী, পদ্মা, সুরমা এবং প্রথম সুরমা অন্তত ১৬ স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের বাইরে দার্জিলিং সিকিম ও মেঘালয় তুমুল বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। কিসের ভেতর উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে। আশার দিক হচ্ছে মেঘনা অববাহিকায় বানের পানি নামছে। ফলে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হতে পারে। কিন্তু আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে মানিকগঞ্জ, ঢাকা, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে।

যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শিবচর (মাদারীপুর) : পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভয়াবহ নদী ভাঙনে সব হারিয়ে দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে শেষ সম্বল আর পরিবার নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে অন্যের জায়গায়। ভাঙন নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় সংসদ সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর নির্দেশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ীতে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : পদ্মা তীরে বাঁধ ভেঙে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের দু’টি গ্রামের শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। সেই সঙ্গে মাওয়া থেকে কান্দিপাড়া ও যশলদিয়া গ্রামে চলাচলের বিকল্প সড়কটি ভাঙনের মুখে রয়েছে। ফলে এলাকাবাসী বিপাকে পড়েছেন। দক্ষিণ মেদিনীমণ্ডল গ্রামের পদ্মার তীরে বাঁধ না থাকায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ মেদিনীমণ্ডল ও মাহমুদপট্টি গ্রাম দু’টিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে এলাকা দুটিতে বন্যার পানি ধীরে ধীরে প্রবেশ করে শতাধিক বাড়ি ও মাওয়া যশলদিয়া ভাগ্যকূল সড়কের বিকল্প অংশ দক্ষিণ মেদিনীমণ্ডল ও মাহমুদপট্টি ক্লিনিক সড়কেও পানি উঠে গেছে। গত কয়েক দিনে ক্রমাগত পানির তোড়ে রাস্তা ভেঙে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি ধীরে ধীরে কমলেও ধরলা নদীর পানি আবারও বাড়তে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম নদ-নদীর পানি প্রবাহের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ৮ দিন ধরে বানের পানিতে ডুবে আছে। জেলা প্রশাসন সূত্রমতে, জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। প্রায় ১৭ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বন্যার্ত মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি আগের অবস্থায় রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাটে বিপদসীমার ৬৬ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঘাঘট নদীর পানি বিকাল ৩টা পর্যন্ত নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৬ সে.মি. কমলেও বিপদসীমার ৩১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি বিকাল ৩টায় ১২ সে.মি. বেড়ে বিপদসীমার নিচে রয়েছে। তবে করতোয়ার পানি ২ সে.মি. কমেছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ২০০ মে. টন চাল ও ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ জানিয়েছেন, বন্যাদুর্গত ৪টি উপজেলায় ৬১টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়। হুমকিতে আশপাশের দু’শতাধিক বসতবাড়ি।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমাসহ সব নদী-নালা, হাওর, খাল-বিলের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পেলেও দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। গত চারদিন ধরে তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও ভাটিতে পানির টান না থাকায় নিুাঞ্চলের পানি এখনও থমকে আছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের সংযোগ সড়কগুলোর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : যমুনার পানি কমলেও দেওয়ানগঞ্জে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন থেকে যমুনা তীরবর্তী এলাকায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক কবির উদ্দিন ২শ’ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। ত্রাণসামগ্রী নেয়ার জন্য নারী-পুরুষরা বন্যার পানিতে দাঁড়িয়েই ত্রাণ নেয়ার জন্য অপেক্ষা করে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম